কেন্দ্রের উদাসীনতায় থমকে গুরুদাসনগর-নুঙ্গি প্রকল্প, ক্ষোভ
আবারও একটা বাজেট আসতে চলেছে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) রেলমন্ত্রী থাকাকালীন যে সব রেল প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন, সেগুলির ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চয়তার মুখে। যেমন ডায়মন্ডহারবারের গুরুদাসনগর থেকে নুঙ্গি স্টেশন ভায়া মুচিসা রেললাইনের ঘোষণা করেছিলেন তিনি। কিন্তু আজও সেই প্রকল্প দিনের আলো দেখেনি। কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই প্রকল্পে নামমাত্র বরাদ্দ জুগিয়ে একে কার্যত জিইয়ে রাখা হয়েছে। প্রতি পদে অবহেলার অভিযোগ। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও ক্ষোভ কম নেই। এই পথে ট্রেন চললে অনেকটাই সুবিধা হতো যাত্রীদের, বলছেন তাঁরা।
২০০৯-’১০ সালে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় একাধিক নতুন রেললাইন এবং তার সম্প্রসারণের কথা ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রেলমন্ত্রক তখন সক্রিয় হলেও বছর ঘুরতে না ঘুরতেই গতি হারায় সেই উদ্যোগ। এই প্রকল্পের জন্য সমীক্ষার কাজ শেষ। কয়েকটি জায়গায় পিলারও তৈরি হয়েছে। কিন্তু তারপর আর কাজ এগয়নি। কথা ছিল, ডায়মন্ডহারবার লাইনের গুরুদাসনগর থেকে ট্রেন ছেড়ে সরিষা হাট, কাঁটারে, মোহনপুর, চাউলখোলা, মুচিসা (এখানে স্টেশন তৈরির পরিকল্পনা ছিল), বাওয়ালি জল প্রকল্প হয়ে নুঙ্গি স্টেশনে আসবে। সেখান থেকে সোজা শিয়ালদহ। এই প্রকল্প এলাকার বড় অংশ সাতগাছিয়া বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। এই রেল লাইনের গুরুত্ব অনেক। কারণ, একদিকে ডায়মন্ডহারবার এবং অন্যদিকে বজবজ লাইন থাকলেও, মাঝের অংশের বাসিন্দাদের যাতায়াতের সমস্যা রয়েছে। এই শাখায় ট্রেন চলাচল শুরু হয়ে গেলে কয়েক লক্ষ মানুষ উপকৃত হতেন।
স্থানীয় মানুষের বক্তব্য, ডায়মন্ডহারবার, বজবজ ইত্যাদি লাইনে ট্রেন চলে। ফলে সেখানকার বাসিন্দারা রেল পরিষেবার সুযোগ পান। কিন্তু বাখরাহাট, মুচিসা, মোহনপুরের মতো এলাকায় ট্রেনলাইন না থাকায় সেখানকার মানুষকে বেশি টাকা খরচ করে সড়কপথে কলকাতায় যেতে হয়। নাহলে হয় ডায়মন্ডহারবার, কিংবা বজবজে গিয়ে ট্রেন ধরতে হয়। স্থানীয় বাসিন্দা তথা জেলা কংগ্রেসের সহ সভাপতি রামরাবণ পালের কথায়, এখানে রেললাইন হয়ে গেলে দু’ঘণ্টার মধ্যে মানুষ কলকাতায় পৌঁছে যেতে পারতেন। এলাকার উন্নয়নও কম হতো না। ভোল বদলে যেত গোটা অঞ্চলের। কিন্তু সেসব কিছুই হল না।
কেন্দ্রে মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রতিবছরই বরাদ্দ কমেছে এই প্রকল্পে। বিগত কয়েক বছর নামমাত্র টাকা দেওয়া হয়েছে। যা দিয়ে কোনও কাজ করা সম্ভব নয়। পর্যাপ্ত টাকা বরাদ্দ না হলে, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এলাকাবাসীর বক্তব্য, তুলসি গাছকে জল দিয়ে যেমন বাঁচিয়ে রাখা হয়, তেমনই এই প্রকল্পকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। মোদ্দা কথা, প্রকল্পটি বাতিল করা না হলেও একে যে এগিয়ে নিয়ে যাবে না রেলমন্ত্রক, তা তাদের মানসিকতাতেই স্পষ্ট। কেন্দ্রের এই অবস্থানে আখেরে ভুগতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।