বিশিষ্টদের সভায় ব্যক্তি স্বাধীনতার পক্ষে সওয়াল
মেট্রো চ্যানেলে বিশিষ্টদের সভায় সরব অভিনেত্রী দেবলীনা দত্ত(Debolina Dutta)। একটি টিভি চ্যানেলে সম্প্রতি তাঁর একটি মন্তব্যের জেরে বিতর্ক তৈরি হয়। সেই ঘটনার পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রমাগত তাঁকে কুরুচিকর আক্রমণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ দেবলীনার। একই অভিযোগ অভিনেত্রী সায়নীরও।
মেট্রো চ্যানেলের সভায় তাঁর প্রতি হওয়া আক্রমণের জবাব দিতে গিয়ে এদিন দেবলীনা বলেন, অপরাধের শাস্তি জেল, ফাঁসি হতে পারে। কোনও অপরাধের শাস্তি কি ধর্ষণ হতে পারে?’’।
টিভি চ্যানেলের একটি অনুষ্ঠানে সম্প্রতি গো-মাংস খাওয়া নিয়ে একটি মন্তব্য করেন অভিনেত্রী দেবলীনা দত্ত। অভিনেত্রীর মন্তব্য ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করেছে বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হন বেশ কয়েকজন। এমনকী দেবলীনা, সায়নীদের বিঁধে বেশ কিছু কুরুচিকর মন্তব্য করতে দেখা যায় বেশ কয়েকজনকে। বিষয়টি নিয়ে তুমুল প্রতিবাদ তৈরি হয় শিল্পী মহলে।
নিন্দায় সরব হন অভিনেতা কৌশিক সেন থেকে শুরু করে প্রত্যেকে। সোমবার কলকাতার মেট্রো চ্যানেলে(Metro Channel) শিল্পী মহলের উদ্যোগে প্রতিবাদ সভার(Protest) আয়োজন করা হয়। সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন কৌশিক সেন, তৃণমূলের সাংসদ-অভিনেত্রী নুসরত জাহান, সায়নী ঘোষ-সহ বাংলা চলচ্চিত্র জগতের বেশ কিছু শিল্পী।
মঞ্চে চাঁচাছোলা ভাষায় এদিন তাঁর বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় কুরুচিকর মন্তব্য করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সরব হন দেবলীনা। তিনি বলেন, ‘‘একটা চ্যালেঞ্জ আমায় করা হচ্ছে। একবার মুসলিমকে ইদের দিনে শুয়োর খাওয়ার কথা বলুন। তারপর আমরা চুপ করে যাব। কোনও অপরাধের শাস্তি ফাঁসি হতে পারে জেল হতে পারে। কোন অপরাধের শাস্তি কি ধর্ষণ হতে পারে?’’ বিশিষ্টদের এই সভা এদিন প্রশ্ন দেবলীনার।
তবে সোশ্যাল মিডিয়া ক্রমাগত তাঁকে এই আক্রমণে তিনি যে ভীত নন, আজ সেকথা দৃপ্ত-কণ্ঠে জানিয়েছেন দেবলীনা। তবে শুধু তাঁকেই নয়, তাঁর মাকেও আক্রমণ করা হচ্ছে বলে এদিন অবিযোগ করেছেন অভিনেত্রী। তিনি বলেন, ‘‘আমি ভয় পাই না। আমার মাকেও ভয় দেখানো হচ্ছে।’’ নাম না করে দিন বিজেপিকে তুলোধনা করেছেন অভিনেত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘ক্ষমতায় আসার আগেই মা-বোনকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ক্ষমতায় এলে তো ধর্ষণ হবে।’’
দেবলীনাই নন, কয়েকদিন আগে একটি অনুষ্ঠানে বাংলার সংস্কৃতি নিয়ে মন্তব্য করেন অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ(Saayoni Ghosh)। তারপর ২০১৫ সালে তাঁর টুইটার হ্যান্ডেল থেকে করা একটি টুইট নিয়ে শোরগোল পড়ে যায়। ওই টুইটের মাধ্যমে হিন্দু ধর্মকে অপমান করা হয়েছে বলে দাবি করেন মেঘালয়ের প্রাক্তন রাজ্যপাল তথা বিজেপি নেতা তথাগত রায়। সায়নীর বিরুদ্ধে রবীন্দ্র সরোবর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। যদিও এই প্রসঙ্গে আগেই বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা তথাগত রায়কে(Tathagata Roy) একহাত নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)।
তিনি বলেছিলেন, “ক্ষমতা থাকলে সায়নীর গায়ে হাত দিয়ে দেখাক বিজেপি। তিনি বলেন, সায়নীর মতো ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির একটা বাচ্চা মেয়েকে ধমক-চমক দিচ্ছে। আজকে সকালেও শুনেছি, যে ওঁকে নাকি বিজেপি থেকে ধমকানো হচ্ছে। এত বড় স্পর্ধা? বিজেপি তুমি দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, বিহারে ধমকাও। বাংলার কাউকে ধমকানোর সাহস পাও কোথা থেকে? বাংলায় ধমকালে মুখ লিউকোপ্লাস্টার দিয়ে বন্ধ করে দেবে মানুষ। এত সোজা নয়। ক্ষমতা থাকে তো সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষদের গায়ে হাত দিয়ে দেখাও। বয়স হলেও ভীমরতি যায় না। নাতনির বয়সি মেয়েকে প্রতিদিন হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। তাঁর স্বাধীনভাবে ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশের অধিকার নিশ্চয়ই আছে।”
সেই একই প্রসঙ্গে সোমবার হুগলির পুরশুড়ার সভাতেও সরব হন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিনেত্রী সায়নী এবং দেবলীনার প্রসঙ্গ তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘রাস্তায় বের হলে ওদের ধর্ষণের হুমকি দিচ্ছে। করে দেখা…। দেখবি তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি? এরা সংস্কৃতি জানে না। আবার বাংলা দখলের কথা বলছে।’’