লালকেল্লায় কৃষক মিছিল – নেপথ্যে ষড়যন্ত্র?
তিন কৃষি আইন স্থগিত রাখার পক্ষে ফের মোদী সরকার সওয়াল করলেও মঙ্গলবার, প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন দেশের রাজধানীতে কৃষকদের বিক্ষোভ (Farmers Protest) বুঝিয়ে দিলেন, সংঘাত এত সহজে আর মেটার নয়। দিল্লির একাধিক জায়গায় ব্যারিকেড ভেঙে ট্রাক্টর মিছিল এগিয়ে গিয়েছিল আগেই। দুপুরের পরেই লালকেল্লায় কাছে পৌঁছে যান বিক্ষোভকারীরা। ঐতিহ্যশালী লালকেল্লার একাধিক স্তম্ভের মাথায় কৃষক সংগঠনের পতাকাও ঝুলিয়ে দেন। এমনকী কেল্লার সামনের খুঁটি বেয়ে উঠে পতাকা টাঙিয়ে দেন এক আন্দোলনকারী। আর বিক্ষোভের নামে এই কাণ্ড অনেকেই সহজভাবে মেনে নেননি। সমালোচনা শুরু হয় নানাস্তরে। কিন্তু সত্যিই কি কৃষকদের এই ‘প্রতিবাদ’-এর অনুমতি দেওয়া হয়েছিল? নাকি ষড়যন্ত্রের ফল লালকেল্লা অভিযান? প্রশ্ন তুলেছেন হান্নান মোল্লার মতো কৃষক নেতা।
কিষান নেতা রাকেশ টিকাইত বলেন, ‘আমরা শান্তিতে মিছিল করেছি। কিন্তু যারা অশান্তি করছে, তাদের আমরা চিনে ফেলেছি। দিল্লিতে পৌঁছলেও সেখানে বসে আন্দোলনের কোনও পরিকল্পনা আমাদের ছিল না। এমনকী লালকেল্লা যাওয়ার কোনও সিদ্ধান্তও কৃষক সংগঠনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি। কিন্তু তাও কেন এমন করা হল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ একই সুর অপর কিষান নেতা হান্নান মোল্লার গলাতেও। জনৈক সংবাদ মাধ্যমের কাছে তাঁর অভিযোগ, ‘এত বড় শান্তিপূর্ণ আন্দোলন গত একশো বছরে কেউ দেখেনি। সকলে মেনে নিয়েছেন এ কথা। শান্তি আমাদের শক্তি। আমরা জানতাম, এমন অশান্তি ঘটানো হতে পারে। কৃষকরা কখনই নিজেদের আন্দোলনকে এভাবে কালিমালিপ্ত করতে পারে না। কিছু ষড়যন্ত্রকারী এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। লালকেল্লায় পতাকা তুলছে, আর পুলিশ দাঁড়িয়ে দেখছে। সরকারকে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ করে দিতে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তাঁদের আমরা খুঁজে বের করব। ব্যবস্থা নেওয়াই হবে।’
অপরদিকে, বাংলার সিপিএম (CPM) নেতা তথা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য সরাসরি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর কথায়, ‘লালকেল্লায় যে তান্ডবলীলা চলেছে, তা আসলে ষড়যন্ত্র। আর এই ষড়যন্ত্র করেই কৃষক আন্দোলনকে কালিমালিপ্ত করার প্রচেষ্টা করা হয়েছে।’ আর এই ষড়যন্ত্রের জন্য সরাসরি কেন্দ্রের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন বিকাশ। দাবি করেছেন নিরপেক্ষ তদন্তেরও। যদিও, পঞ্জাব কিসান ইউনিয়নের নেতা রুলদু সিংহ মনসা ষড়যন্ত্রের বদলে এই ঘটনাকে ‘অল্পবয়সিদের’ কাণ্ড বলেই দাবি করেছেন। তাঁর কথায়, ‘অল্পবয়সি অনেক কৃষক এই আন্দোলনে সামিল হয়েছেন। পঞ্জাব, হরিয়ানা থেকে তাঁরা অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছেন। এরপরই লালকেল্লা এবং আইটিও পৌঁছে যান তাঁরা। সকলকেই নির্ধারিত পথে মিছিল করতে অনুরোধ করব। আমরা শান্তি বজায় রাখছি।’ ইতিমধ্যে দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগ তুলেছেন অনেক কৃষক।
অপরদিকে, কৃষকদের লালকেল্লা অভিযান ও ট্রাক্টর উলটে এক কৃষকের মৃত্যুর পরই শান্তি বজায় রাখার আর্জি জানান কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী। ট্যুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘হিংসা কখনই সমস্যার সমাধান করতে পারে না, যারই ক্ষতি হোক, সেই ক্ষতি গোটা দেশের।’ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজধানী ও দিল্লি সীমান্তের বেশ কিছু জায়গায় রাত ১২টা পর্যন্ত ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে, দিল্লির কৃষক আন্দোলনে পুলিশের লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্য়াস ছোড়ার প্রতিবাদে আগামিকাল রাজ্য় জুড়ে ধিক্কার কর্মসূচি তৃণমূলের। জানিয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক বেচারাম মান্না।