দমছেন না কৃষক নেতারা, এবার লক্ষ্য বাজেটের দিন সংসদ অভিযান
প্রজাতন্ত্র দিবসে রাজধানী দিল্লিতে তাণ্ডবের পর অনেকটাই ব্যাকফুটে কৃষক সংগঠনগুলি৷ তবে এখনও আন্দোলনে লাগাম নারাজ তারা৷ কেন্দ্রের নতুন তিন কৃষি আইন (Farm Laws) বাতিলের দাবিতেই অনড় কৃষক সংগঠনগুলি৷ পূর্ব নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী বাজেট ঘোষণার দিন কৃষকরা সংসদ অভিযানে যাবেন বলেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে৷
মঙ্গলবার দিল্লিতে আগে থেকেই ট্র্যাক্টর মিছিল (Tractor Rally) করার কথা ছিল কৃষকদের৷ কিন্তু পুলিশের সঙ্গে আলোচনার পর পূর্ব নির্ধারিত রুট থেকে সরে এসে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে ঢুকে পড়ে শয়ে শয়ে ট্র্যাক্টর৷ লাল কেল্লার (Red Fort) দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন আন্দোলনকারী কৃষকরা৷ পুলিশ বাধা দিলে শুরু হয় সংঘর্ষ৷ ট্র্যাক্টর উল্টে মৃত্যু হয় এক কৃষকের৷ আহত হয়েছেন দেড়শোর বেশি পুলিশকর্মী৷ সবমিলিয়ে কুড়িটিরও বেশি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সিংঘু, টিকরি সীমান্তে আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে৷ এখনও দিল্লির বেশ কিছু অংশে বন্ধ রয়েছে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা৷ বন্ধ রয়েছে দু’টি মেট্রো স্টেশনও৷
প্রায় দু’ মাস ধরে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানানোর পরে মঙ্গলবার রাজধানীর বুকে যেভাবে বেনজির তাণ্ডব চালিয়েছেন কৃষকরা, তাতে রীতিমতো চাপে পড়ে যান কৃষক সংগঠনের নেতারা৷ পাল্টা বিবৃিত দিয়ে সংযুক্ত কিসান মোর্চা দাবি করে, অশান্তির পিছনে রয়েছে সমাজবিরোধীরা৷ কৃষকদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে কলুষিত করতেই এই ষড়যন্ত্র করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন কৃষক নেতারা৷ ঘটনার নিন্দাও করেছেন তাঁরা৷ প্রথম থেকেই কৃষকরা দাবি করেছিলেন, আইন প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত তাঁরা দিল্লি সীমান্ত থেকে ফিরবেন না৷
কিন্তু মঙ্গলবারের ঘটনার পর প্রাথমিক ভাবে চাপে পড়লেও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তই নিয়েছেন৷ তাঁরা মনে করছেন, হিংসা ছড়িয়ে কৃষক আন্দোলনের (Farmers Protest) ঝাঁঝ কমানোই ছিল মূল উদ্দেশ্য৷ তাই এখন পিছিয়ে গেলে সরকারেরই জয় হবে৷ কিন্তু মঙ্গলবারের ঘটনার পর প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, আন্দোলনের রাশ কি কৃষক নেতাদের হাতে রয়েছে? যদি তাই থাকে তাহলে সমাজবিরোধীরা কৃষকদের মধ্যে মিশে গেলে তা কেন টের পেলেন না কৃষক নেতারা? কেন তাঁদের নির্দেশ না মেনে চক্রান্তকারীদের উস্কানিতে প্রভাবিত হলেন আন্দোলনকারী কৃষকরা? যে ভাবে গত কয়েকমাস কৃষকদের সংগঠিত করেছিলেন কৃষক নেতারা, তা ধরে রাখাই এখন তাঁদের কাছে মূল চ্যালেঞ্জ৷
তবে মঙ্গলবারের ঘটনায় কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে কেন্দ্রও৷ মঙ্গলবারের ঘটনার পর্যালোচনয়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকও হয়েছে৷ একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে৷ হিংসার নেপথ্যে আসলে কারা, তা খুঁজে বের করতে হস্তক্ষেপ করেছে এনআইএ৷ গোটা দিল্লি নিরাপত্তার বলয়ে মুড়ে দেওয়া হয়েছে৷ মঙ্গলবার ট্র্যাক্টর প্যারেডের অনুমতি দিয়ে ভুগেছে দিল্লি পুলিশ৷ ফলে বাজেটের দিন কৃষকদের নতুন করে সংসদ অভিযানের অনুমতি আদৌ পুলিশ দেবে কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন৷ সেক্ষেত্রে কৃষকরাও ফের পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে জড়ান কি না, নজর থাকবে সেদিকেও৷