রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

দলবদলু দশরথকে নিয়ে আবারও বিজেপিতে কোন্দল

January 29, 2021 | 2 min read

দলের চাপে ‘দলবদলু’ দশরথ তিরকের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ক্ষোভ না দেখালেও এখনও কুমারগ্রামের বহু বিজেপি (BJP) কর্মী-নেতা তাঁকে মানতে নারাজ। বলছেনও, জেনেশুনে বিষপান করব না। অর্থাৎ ‘দলবদলু’ দশরথ তাঁদের কাছে এখনও বিষ হয়েই রয়েছেন। বিজেপির আরেকটা অংশ অবশ্য বলছে, বিষপান করছি জেনেই ওনাকে মেনে নিতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে বিধানসভা ভোটের আগে নবাগত দশরথকে নিয়ে বিজেপির অন্দরে দুশ্চিন্তা ও কোন্দল বেড়েই চলেছে।

গত ১৯ ডিসেম্বর শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) হাত ধরে মেদিনীপুরে অমিত শাহর সভায় বিজেপিতে যোগ দেন তৃণমূল কংগ্রেসের (Trinamool Congress) আলিপুরদুয়ার জেলা কোর কমিটির চেয়ারম্যান দশরথ তিরকি। সেই সময় দশরথবাবুর বিরুদ্ধে কুমারগ্রামে গেরুয়া শিবিরের কর্মী-সমর্থকরা বিক্ষোভ মিছিল করেছিলেন। দশরথবাবুকে ‘পচা আলু’ বলেও কটাক্ষ করেছিলেন ক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মীরা। দশরথের কুশপুতুলও পুড়িয়েছিলেন। যদিও দলের চাপে বর্তমানে কুমারগ্রামে দশরথবাবুকে নিয়ে বিজেপি কর্মীদের সেই ক্ষোভ এখন প্রকাশ্যে নেই। তবে দশরথকে নিয়ে কুমারগ্রামে গেরুয়া শিবিরের নিচুতলা স্পষ্টত দু’ভাগ হয়ে পড়েছে। বিক্ষুব্ধ কর্মীদের একটি অংশের দাবি, দশরথবাবুকে দলে নেওয়ার সিদ্ধান্তের জন্য তাঁদের এখন বাধ্য হয়ে বিষপান করতে হচ্ছে। আর ভোটের আগে বিক্ষুদ্ধদের অন্য অংশের সাফ দাবি, দল সিদ্ধান্ত নিলেও তাঁরা এই বিষপান করতে রাজি নন। দলের নিচুতলার দুই অংশের এই মনোভাব কুমারগ্রাম বিধানসভায় বিজেপির মাথাব্যথার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিধানসভা ভোটে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা বিজেপি শিবিরের। যদিও বিজেপি নেতৃত্ব প্রকাশ্যে ওই আশঙ্কার কথা মানতে নারাজ।

বিজেপিতে যোগ দিয়ে একমাস পর গত রবিবার কলকাতা থেকে ট্রেনে শিলিগুড়িতে নামেন দশরথবাবু। ট্রেন থেকে নেমেই ওইদিন শিলিগুড়িতে দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সভায় যোগ দেন তিনি। তারপর কার্যত ‘চুপিসারে’ই দলের জেলা সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মার সঙ্গে জেলায় ফিরেছেন ‘দলবদলু’ দশরথ তিরকি।

বিজেপির জেলা সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদবাবু অবশ্য বলেন, দশরথবাবুকে নিয়ে কুমারগ্রামে দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে কোনও ক্ষোভ বিক্ষোভ নেই। তবে তাঁকে নিয়ে নানা অপপ্রচার চলছে। কুমারগ্রামে তাঁকে বরণও করা হয়েছে। ধীরে ধীরে দলীয় কাজেও তাঁকে লাগানো হবে। ইতিমধ্যেই দশরথবাবুকে দলীয় রথযাত্রার কমিটিতে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে দশরথবাবু বলেন, চুপিসারে জেলায় ফিরিনি। শিলিগুড়িতে (Siliguri) দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সভায় যোগ দিয়ে জেলা সভাপতির সঙ্গে জেলায় ফিরেছি। আমাকে নিয়ে কুমারগ্রামে দলের কর্মীদের মধ্যে আর কোনও ক্ষোভ নেই। আমাকে দল যেভাবে কাজে লাগাবে, সেভাবেই কাজ করব।

দশরথবাবু বা জেলা সভাপতি এই দাবি করলেও কুমারগ্রামে পদ্মফুল শিবিরের নিচুতলায় দশরথবাবুকে নিয়ে চোরাস্রোত বইছে। কুমারগ্রাম বিধানসভাজুড়ে বিজেপির নিচুতলায় কান পাতলেই কর্মী-সমর্থকদের দুই ধরনের মনোভাবের আঁচ পাওয়া যাচ্ছে।

বিজেপি’র বারোবিশার এক নেতা বলেন, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দশরথবাবুকে দলে নিয়েছে। আমরা তো দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারব না। তাই রাজ্য থেকে তৃণমূলকে উৎখাত করতে একপ্রকার বাধ্য হয়েই ওঁকে মেনে নিতে হচ্ছে। যদিও বিক্ষুব্ধদের অন্য অংশের এক নেতা বলেন, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দশরথবাবুকে দলে নিলেও আমরা জেনেশুনে এই বিষপান করতে রাজি নই। দশরথবাবু মেদিনীপুরে দলে যোগ দেওয়ার সময় আমরাই তো তাঁর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেছি। তাঁর কুশপুতুলও পুড়িয়েছি। এখন তাহলে কোন মুখে তাঁর সামনে যাব? কাজেই আমরা এই বিষপান করতে রাজি নই।

সবমিলিয়ে কুমারগ্রামে দশরথবাবুকে নিয়ে দলের নিচুতলা দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাওয়ায় বিজেপি নেতৃত্বের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। বিধানসভা ভোটে যার প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Dasharath Tirke, #bjp

আরো দেখুন