ক্ষোভে ফুঁসছেন কৃষকরা, উত্তর ভারতজুড়ে ডাক ‘দিল্লি চলো
‘আমরা রাষ্ট্রদ্রোহী নই… আমরা খলিস্তানি জঙ্গি নই’। ফুঁসছেন তাঁরা। দিল্লি সীমানার প্রতিবাদ আজ হুঙ্কারে বদলে গিয়েছে। সরকারের কঠোর পদক্ষেপে যখন মনে হচ্ছিল কৃষকরা ব্যাকফুটে, ঠিক তখনই নাটকীয় পটবদল। আর তা হল বৃহস্পতিবার রাতেই। আন্দোলনরত কৃষকদের সমর্থনে মেরঠ, বাগপত, মুজফফরনগর থেকে দিল্লিতে আসছেন হাজার হাজার চাষি। কেন্দ্রকে চাপে ফেলে কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছে জাঠ সম্প্রদায়ও। শুধু সীমানা এলাকা নয়, হরিয়ানা, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে ক্ষোভের আগুন। মুজফফরনগরে শুক্রবারই আয়োজন হয়েছে কিষান মহাপঞ্চায়েতের। সেখানে যোগ দিয়েছেন কয়েক হাজার কৃষক। এবং সেই কিষান মহাপঞ্চায়েত থেকেই ফের ডাক উঠেছে, ‘দিল্লি চলো’। জম্মু-কাশ্মীর থেকে আসছে মিছিল। জাঠা আসছে হরিয়ানা থেকে। আর তাই, আচমকাই সম্পূর্ণ ব্যাকফুটে মোদি সরকার।
এরপরও উত্তেজনা স্তিমিত হয়নি। দিল্লি-হরিয়ানার সিংঘু সীমানায় রড, তলোয়ার নিয়ে আন্দোলনরত কৃষকদের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে একদল যুবকের বিরুদ্ধে। তাদের দাবি, ‘আমরা স্থানীয় বাসিন্দা’। বিক্ষোভরত চাষিদের লক্ষ্য করে ছোঁড়া হয়েছে পাথর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সিংঘুতে লাঠিচার্জ করেছে পুলিস। কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো হয়েছে। এমনকী দিল্লি পুলিসের এক আধিকারিককে তলোয়ার দিয়ে কোপানোর অভিযোগ উঠেছে হাঙ্গামাকারীদের বিরুদ্ধে। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন পুলিসকর্মী এবং কৃষক। আটক করা হয়েছে কয়েকজন হামলাকারীকে। সিংঘুর পাশাপাশি শুক্রবার দিল্লি-রোহতক করিডরের তিক্রি সীমানাতেও জমায়েত থেকে কৃষক আন্দোলন-(Farmers Protest)বিরোধী স্লোগান দেওয়া হয়েছে। তৈরি হয়েছে সংঘর্ষের পরিস্থিতি।
বৃহস্পতিবার রাত থেকেই দিল্লি-উত্তরপ্রদেশের গাজিপুর (Ghazipur) সীমানায় চাপ চাপ উত্তেজনা। এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত নতুন করে সংঘাত না হলেও টেনশন রয়েছে পুরোমাত্রায়। গাজিপুর সীমানা ঘুরে তা স্পষ্ট মালুম হয়েছে। বিক্ষোভস্থল খালি করে দেওয়ার নির্দেশ সত্ত্বেও গাজিপুরে নিজেদের অবস্থান থেকে একবিন্দুও সরানো যায়নি কৃষকদের। বরং সীমানায় কিষান একতা মোর্চার মঞ্চের সামনে কৃষকদের ভিড় বেড়েছে ঘণ্টায় ঘণ্টায়। কৃষক নেতৃত্ব মঞ্চে দাঁড়িয়েই আয়োজন করেছেন কৃষক সমাবেশের। সেই মঞ্চ থেকে তাঁরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, ‘যতই ভয় দেখাক পুলিস, তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন এভাবেই চলবে। খালি হাতে এবং অপমানিত হয়ে কৃষকরা ঘরে ফিরবেন না। মোদিজি এবং যোগীজি কান খুলে শুনে নিন।’ কৃষক বিক্ষোভের মুখে এদিন কিছুটা হলেও পিছু হটেছে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন। পুলিস-প্রশাসনের পক্ষ থেকে এদিন জানানো হয়েছে, ‘বৃহস্পতিবার রাতে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়ার জন্য সীমানায় পুলিসবাহিনী পাঠানো হয়নি। তারা গিয়েছিল অবস্থানরতদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে।’
এদিকে, ২৬ জানুয়ারির ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার গাজিপুরে যায় দিল্লি পুলিসের ক্রাইম ব্রাঞ্চ। ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের (টিকায়েত) শীর্ষ নেতা রাকেশ টিকায়েত এদিন স্পষ্ট বলেছেন, ‘আমার যেদিন সময় হবে, সেদিন আমি দিল্লি পুলিসের নোটিসের জবাব দেব। পুলিস আগে আসল দোষীদের ধরার চেষ্টা করুক।’ ২৬ জানুয়ারির ঘটনার যত ছবি এবং ভিডিও তোলা হয়েছে, সেগুলি তাদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য মানুষের কাছে আর্জি জানিয়েছে দিল্লি পুলিস। জানা যাচ্ছে, শুক্রবার রাত পর্যন্ত সিংঘু এবং তিক্রি সীমানার দু’টো দিকই সম্পূর্ণ বন্ধ করে রেখেছে পুলিস। কৃষক সংগঠনগুলির অভিযোগ, ‘আন্দোলন দমন করতে না পেরে গেরুয়া শিবিরের কর্মী পাঠাচ্ছে সরকার। হামলাকারীরা মুখ ঢেকে আসছে এবং আক্রমণ করছে। সারা ভারত কিষান সভার মহারাষ্ট্র কমিটির সম্পাদককে প্রাণে মারার হুমকি দেওয়া হয়েছে।’ এই পরিস্থিতিতে একদিনের অনশন ধর্মঘট করতে চলেছেন বিক্ষোভরত কৃষকরা। জেএনইউ ছাত্র সংসদও অনশন এবং কৃষি আইনের কপি পোড়ানোর কর্মসূচিতে শামিল হচ্ছে আজ। সীমানায় আজ বার্তা একটাই, পিছু হটব না। আর প্রত্যেক কৃষক পরিবারের কাছে আর্জি… বাড়ির একজন সদস্যকে অন্তত দিল্লি সীমানায় পাঠান। আন্দোলন আরও তীব্র হবে। কারণ টিকায়েত নিজেই যে বলেছেন, ‘ম্যায় কিসান হুঁ, ফকির নেহি, কে ঝোলা লে কর চল দুঙ্গা!’