মোদির প্রতিশ্রুতিই সার, খোলেনি বন্ধ চা বাগান, প্রশ্নের মুখে বিজেপি
২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের প্রচারে বীরপাড়ার সারনা আদিবাসী ময়দানে এসেছিলেন নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। সেই জনসভায় প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, মাদারিহাট বিধানসভা এলাকায় বন্ধ থাকা একটি গ্রুপের সাতটি চা বাগান কেন্দ্রীয় সরকার অধিগ্রহণ করে খুলে দেবে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়ে যাওয়ায় বন্ধ বাগানের শ্রমিকরা বিধানসভা ভোটে বিজেপিকে দু’হাত উজাড় করে ভোট দিয়েছিল। ২০১৬’র বিধানসভা ভোটে রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের (Trinamool Congress) জয়জয়কার হলেও মাদারিহাটে প্রায় ২২ হাজার ভোটে জিতে যান বিজেপির মনোজ টিগ্গা। গত পাঁচবছরে স্থানীয় রেতি, সুকৃতি নদী দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু বন্ধ থাকা ওই চা বাগানগুলির একটিও খুলতে পারেনি কেন্দ্রীয় সরকার। বিধানসভা ভোটের মুখে এটাই তৃণমূলের কাছে ইস্যু হয়েছে। উল্টে রাজ্যের তৃণমূল সরকার উদ্যোগী হয়ে বন্ধ সাতটির মধ্যে হান্টাপাড়া, ধুমচিপাড়া, গ্যারগেন্দা, তুলসীপাড়া ও ডিমডিমা ৫টি চা বাগান খুলেছে। বাকি দু’টি লঙ্কাপাড়া ও বীরপাড়া ভোটের আগেই খুলে দিতে উদ্যোগী রাজ্য সরকার। শুধু তাই নয়, ওই গ্রুপের বাইরে থাকা আরও একটি বন্ধ মুজনাই বাগান খুলে দিয়েছে রাজ্য সরকার।
সামনে আরও একটি বিধানসভার ভোট। (West Bengal Assembly Election 2021) মাদারিহাট বিধানসভার ১৭টি চা বাগানের শ্রমিকরা এখন বিজেপির কাছে কৈফিয়ৎ চাইছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির পরেও কেন পাঁচবছরে একটি চা বাগানও খুলল না? মাদারিহাটের চা শ্রমিক লাইনগুলিতে কান পাতলেই এখন এ কথা শোনা যাচ্ছে। ভোটের প্রচারে গিয়ে স্থানীয় শ্রমিকদের সামনে এসব প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে বিজেপির নেতা-কর্মীদের। পাঁচবছরের চাওয়া-পাওয়ার হিসেব কষতে গিয়ে মাদারিহাটে চা শ্রমিকদের আক্ষেপ, কেন্দ্রের প্রতিশ্রুতিতে তাঁদের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। আসলে ভোটের আগে অনেক প্রতিশ্রতি দিলেও বিজেপি সরকার তাঁদের বঞ্চনাই করে চলেছে।
শ্রমিকদের বক্তব্য, রাজ্য সরকারই তাঁদের পাশে আছে। রাজ্য সরকার যে চা শ্রমিকদের পাশে রয়েছে, বারবার তার প্রমাণও মিলছে। বন্ধ বাগান খোলা ছাড়াও রাজ্য ‘চা সুন্দরী’ প্রকল্পে তাঁদের মাথা গোঁজার জন্য আবাস তৈরি করে দিচ্ছে। রাজ্য সরকার ‘দুয়ারে সরকার’ ক্যাম্প করে অবসরপ্রাপ্ত ও ৬০ বছরের বেশি শ্রমিকদের ‘জয় জোহার’ প্রকল্পের আওতায় এনে মাসে ১০০০ টাকার ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। রাজ্য সরকার নিঃশুল্ক রেশনের ব্যবস্থা তো করেইছে। তৃণমূল চা বাগান (tea gardens) মজদুর ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি মান্না জৈন বলেন, আমাদের কিছু বলতে হচ্ছে না। শ্রমিকরা কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের ভাঁওতাবাজি ধরে ফেলেছে। শ্রমিকরাই বলছেন, প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও কেন্দ্র একটি বন্ধ চা বাগানও খুলতে পারেনি।
স্থানীয় বিধায়ক মনোজ টিগ্গা অবশ্য জোর দিয়েই বলছেন, কেন্দ্রীয় সরকার টি বোর্ডকে দিয়ে অধিগ্রহণ করে বন্ধ বাগানগুলি খুলতে উদ্যোগী হয়েছিল। কিন্তু রাজ্য সরকারের বাধায় তা শেষপর্যন্ত সম্ভব হয়নি। শ্রমিকরাও সেটা জানেন। চা বলয়ের শ্রমিকরা আমাদের পাশেই আছেন। সবমিলিয়ে মাদারিহাটে এবার কেন্দ্রীয় সরকারের বন্ধ বাগান খুলতে না পাড়ার ব্যর্থতা বড় ইস্যু হচ্ছে বিধানসভা ভোটে। যারজন্য কিছুটা হলেও অ্যাডভান্টেজে শাসক শিবির তৃণমূল, এমনটাই ধারণা রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।