২০২১ সালে প্রযুক্তি দুনিয়া কাঁপাবে কারা?
নতুন বছরের শুরুতে নতুন করে সব কিছু পর্যালোচনা করে দেখার সুযোগ হয়। কোভিডের কারণে বেশ কিছু প্রযুক্তি গত বছর ভূমিকা রেখেছিল। বরাবরের মতো নতুন বছরের শুরুতে সিট বেল্টটি শক্ত করে আটকে নিন।
চলুন প্রযুক্তির জগতে একটু ঘুরে আসি-
এডজ কম্পিউটিং: ডিভাইসের উপরেই ব্যবহারকারীদের আরও কাছে কম্পিউটিং। তথ্যের প্রোসেস আরও দ্রুত করার অত্যাধুনিক একটি উপায়। গত কয়েক বছর ধরেই ইন্টারনেট অব থিংগের কারণে ডিভাইসের উপরেই আরও বেশি তথ্যকে প্রোসেস করার প্রয়োজন হয়ে পড়ছিল। এই এডজ কম্পিউটিং সেই কাজগুলো আরও সহজতর করে ফেলেছে।
সনাতন পদ্ধতিতে যেখানে ডিভাইস থেকে সার্ভারে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে; সেখানে এই এডজ কম্পিউটিং ব্যাপারটি আরও দ্রুত সম্পন্ন করে। যেখানে প্রতিনিয়ত সার্ভারের সাথে যোগাযোগের প্রয়োজন নেই। একটি কম্পিউটিং বা কোনো কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর তথ্যকে পরিশেষে পাঠানো হয়। এ এডজ কম্পিউটিংয়ের ব্যবহার আমরা ২০২১ সালে আরও বেশি দেখতে পাবো।
ফাইভ-জি মোবাইল নেটওয়ার্ক: এটি ৫ম প্রজন্মের নতুন ধরনের একটি মোবাইল নেটওয়ার্ক। ২০২০ সাল থেকে অনেক দেশে এটি পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হলেও আমরা এ বছরে এর বিস্তার দেখতে পাবো। এ সংযোগে ল্যাটেন্সি খুব কম এবং ডাটা ট্রান্সফার দ্রুত হয়। ফলে ৮কে রেজ্যুলেশনের ভিডিওগুলো বাফার ছাড়াই মোবাইলে উপভোগ করতে পারবেন।
৫জি নেটওয়ার্কের ডাউনলোড স্পিড ৪জি নেটওয়ার্কের থেকে ১০০ গুণ বেশি। ডাউনলোড স্পিড ১০০০ এমবিপিএস থেকে ১০ গিগাবাইট হতে পারে। যদি অনলাইন গেমার হন; তবে ৫জিতে দ্রুত গেম খেলতে পারবেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলতে কোনো যন্ত্রের নিজস্ব বুদ্ধি বা চিন্তাশক্তির ক্ষমতা। মানুষ ও পশু-পাখির মধ্যে যে চিন্তা করার ক্ষমতা দেখতে পাই, একটি যন্ত্রের সেই চিন্তা করার সক্ষমতা। ফলে যন্ত্রটি নিজেই নিজের মত চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। যদিও অনেকই এ প্রযুক্তিকে মানবজাতির জন্য হুমকি হিসাবে মনে করে। তবে মনে রাখতে হবে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শুধু তথ্যভিত্তিক রুটিন কাজগুলোর ক্ষেত্রে মানুষের কাজগুলোকে সহজ করে তুলতে পারে। মানুষের মত ডায়নামিকভাবে সব কিছু এ বুদ্ধিমত্তা দিয়ে করা সম্ভব নয়। সামনের বছরগুলোয় এর ব্যাপক প্রয়োগ দেখতে পাবো। বিশেষ করে স্বাস্থসেবা, ব্যাংকিং, খুচরা বিক্রি, মেনুফ্যাকচারিংয়ে আরও প্রয়োগ দেখতে পাবো।
ইন্টেলিজেন্ট অ্যাপস: মোবাইলের জগতে এক নতুন অধ্যায় শুরু হতে যাচ্ছে, যাকে আমরা বলছি বুদ্ধিমান অ্যাপস। যেসব মোবাইল অ্যাপস কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংযুক্ত থাকছে; সেগুলোকেই বলছি বুদ্ধিমান অ্যাপস। এসব অ্যাপস মোবইলের তথ্যগুলো ব্যবহার করে ভালো সার্ভিস দিচ্ছে। দেখতে খুব সাধারণ মনে হলেও এ অ্যাপগুলোর পেছনে আছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মত অত্যাধুনিক প্রযুক্তি।
খুব সাধারণ সুইফট কি-বোর্ড, যা দ্রুত মোবাইলে টাইপ করতে ব্যবহার করি; তা একটি ইন্টেলিজেন্ট অ্যাপস। কিংবা যখন কোনো সাইটের সাপোর্ট বটের সাথে সাপোর্ট সংক্রান্ত কোনো কথোপথন করছেন; তখন কিন্তু কোনো মানুষ এর উত্তর দিচ্ছে না। একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সমস্যাটির সম্ভাব্য উত্তর তার ডাটাবেস থেকে খোঁজ করে আপনাকে জানাচ্ছে। আপনি মোবাইলে যে সিরি বা গুগল অ্যাসিস্টেন্ট-এর সাথে কথা বলছেন, তা-ও কিন্তু বুদ্ধিমান অ্যাপস। এ বছরে এ ধরনের আরও স্মার্ট অ্যাপস দেখতে পাবো।
নিরাপদ ইন্টারনেট: বর্তমানে যে ইন্টারনেট ব্যবহার করছি, তা কিন্তু সম্পূর্ণ নিরাপদ নয়। একে নিরাপদ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের এনক্রিপশন প্রযুক্তি ব্যবহার করছি। যা শেষ পর্যন্ত একেবারেই নিশ্ছিদ্র নয়। হয়তো বা তা ক্রাক বা হ্যাক করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন কিন্তু একেবারেই অসম্ভব নয়। কিন্তু একেবারেই হ্যাক করা যাবে না এমন ইন্টারনেট তৈরি করছেন বিজ্ঞানীরা। কোয়ান্টাম প্রযুক্তি ব্যবহার করে এমন ইন্টারনেট তৈরির কাজ হচ্ছে।
সাধারণত যখন তথ্য আদান-প্রদান করি; তখন ইলেকট্রন ব্যবহার করি। কিন্তু কোয়ান্টাম প্রযুক্তিতে ইলেকট্রনের পরিবর্তে প্রোটন ব্যবহৃত হবে। এর মধ্যে তথ্যকে সংযুক্ত করে প্রেরণ করা হবে। যা হ্যাক করা যাবে না। গত কয়েক বছর ধরে পরীক্ষাগারে এ ধরনের ইন্টারনেট তৈরি হলেও এ বছর এ নতুন ধরনের নিরাপদ ইন্টারনেটের বাণিজ্যিক প্রয়োগ দেখতে পাবো।
ডিজিটাল হেলথকেয়ার: কোভিডের কারণে দেখতে পেয়েছি তথ্যপ্রযুক্তি বর্তমান স্বাস্থ্যসেবায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রযুক্তিগুলো হলো- টেলিমেডিসিন, ডিজিটাল মেডিসিন, ভার্চুয়াল ডাক্তার, ভার্চুয়াল রোগী ইত্যাদি। সংক্রমণ ও নিরাপত্তার ভয় আছে, পরিবহন করে যাওয়া কঠিন- সেই ক্ষেত্রে দেখেছি কীভাবে এ ডিজিটাল প্রযুক্তিগুলো স্বাস্থ্যসেবাকে আমাদের ঘরে পৌঁছে দেয়। এ বছর এর আরও প্রয়োগ দেখতে পাবো। শুধু জরুরি প্রয়োজনেই নয়, সাধারণ স্বাস্থ্যসেবার মধ্যেই এটি জায়গা করে।