শিলিগুড়ি দিয়ে সফর শুরু মমতার, আজ উত্তরবঙ্গ উৎসবের সূচনা
চলতি মাসেই ঘোষণা হতে পারে নির্বাচনী নির্ঘণ্ট। সাম্প্রতিক কোর কমিটির বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, হাতে থাকা সময়টাকে সম্পূর্ণভাবে ভোট ময়দানে কাজে লাগাতে হবে। দলের প্রতি নির্দেশ। নেতৃত্ব দিচ্ছেন নেত্রী নিজেই। উত্তরবঙ্গ সফর দিয়ে। লোকসভা ভোটের হাওয়া কি আজ আর আছে? পাহাড়-তরাইয়ের আনাচে কানাচে এই প্রশ্নই কিন্তু গতি নিচ্ছে। আর মানুষের সমর্থন আত্মবিশ্বাস বাড়াচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সেই প্রত্যয়কে সঙ্গী করেই রাজনৈতিক জমি শক্ত করতে আজ, সোমবার থেকে উত্তরবঙ্গ সফর শুরু করছেন মুখ্যমন্ত্রী।
আজ কলকাতা থেকে দুপুরের বিমানে বাগডোগরা পৌঁছনোর কথা মমতার। দুপুরে শিলিগুড়ি বাঘাযতীন পার্কের রবীন্দ্র মঞ্চ থেকে উত্তরবঙ্গ উৎসবের (North Bengal Festival) সূচনা করবেন তিনি। সেখানে উত্তরবঙ্গের ন’জন বিশিষ্ট মানুষকে বঙ্গরত্ন সম্মান জানানো হবে। প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই তালিকায় দার্জিলিং জেলার দু’জন রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজন বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ শেখর চক্রবর্তী। তিনি শিলিগুড়িতে থাকেন। অপরজন দার্জিলিং পাহাড়ের রঙ্গু সৌরিয়া, তিনি সমাজকর্মী। কালিম্পংয়ের বিশিষ্ট নাট্যশিল্পী সি কে শ্রেষ্ঠা, জলপাইগুড়ির পরিবেশপ্রেমী রাজা রাউত, আলিপুরদুয়ারের লোকসঙ্গীত গবেষক প্রমোদ নাথ, কোচবিহারের সাংবাদিক মৈনউদ্দিন চিসতি, উত্তর দিনাজপুরের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক পার্থকুমার সেন, দক্ষিণ দিনাজপুরের সমাজকর্মী তাপসকুমার চক্রবর্তী ও মালদহের নাট্যশিল্পী পরিমল ত্রিবেদী তালিকায় রয়েছেন। প্রশাসনের আধিকারিকরা জানান, আজ, সোমবার শিলিগুড়ির বাঘাযতীন পার্কে উত্তরবঙ্গ উৎসবের মঞ্চ থেকে তাঁদের বঙ্গরত্ন সম্মান প্রদান করা হবে। তাঁদের হাতে মেমেন্টো, শংসাপত্র, এক লক্ষ টাকার চেক তুলে দেওয়া হবে।
মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী যাবেন ফালাকাটা। সেখানে আদিবাসীদের গণবিবাহের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন মমতা। পরদিন, ৩ ফেব্রুয়ারি আলিপুরদুয়ার প্যারেড গ্রাউন্ডে জনসভা। আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি জেলার তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা হাজির থাকবেন ওই সভায়। রাজনৈতিক জবাব দিতে প্রস্তুত মমতা। দলও তাঁকেই অনুসরণ করছে। বিধানসভাতেও পদ্ম ফুটবে বলে বিজেপি নেতারা যতই দাবি করুন না কেন, তৃণমূল কিন্তু নেত্রীর মতোই আত্মবিশ্বাসী। নেতারা বলছেন, লোকসভা ও বিধানসভার প্রেক্ষিত সম্পূর্ণ আলাদা। আর লোকসভার আগে বিজেপি যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটে নেমেছিল, তার একটিও পূরণ করতে পারেনি। বিজেপির রাজনৈতিক উদ্দেশ্য মানুষ বুঝে গিয়েছেন। ঘাসফুল শিবির আশাবাদী, পাহাড়-সমতল এবার তৃণমূলেরই থাকবে।
লোকসভা ভোটে কী হয়েছে, তা নিয়ে ভেবে লাভ নেই। বিধানসভাই (West Bengal Assembly Election 2021) এখন পাখির চোখ তৃণমূলের। আর কে দল ছাড়ল, তাতে বিন্দুমাত্র গুরুত্ব দিতে নারাজ মমতা। তাঁর ভোটযুদ্ধের অভিমুখ একটাই—দলকে আরও আন্দোলনমুখী করতে হবে। আর তা হবে আজ, সোমবার থেকেই। উত্তরবঙ্গে গত লোকসভা ভোটে তাক লাগানো ফল করেছিল বিজেপি। উত্তরবঙ্গের আটটি লোকসভা আসনের মধ্যে একটিতেও তৃণমূল (Trinamool) জিততে পারেনি। ৭টি জেতে বিজেপি, একটি কংগ্রেস। দেখা গিয়েছে, লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে উত্তরবঙ্গের ৫৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৫২টিতে এগিয়ে ছিল বিরোধীরা। আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সবকটিতেই তৃণমূল পিছিয়ে। আলিপুরদুয়ারে মোট চা বাগান ৬৭টি। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে খুলেছে ৮টি চা বাগান। এখন বন্ধ রয়েছে তিনটি। তাও খোলার চেষ্টা হচ্ছে। ২০১৪ সালের ভোটের আগে কেন্দ্র প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সাতটি বাগান অধিগ্রহণ করা হবে। কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। যার ফলে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ চরমে পৌঁছেছে। রাজ্য সরকার কিন্তু বসে থাকেনি।
ইতিমধ্যেই শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৭৬ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২০১ টাকা। চা সুন্দরীর কাজ শুরু হয়েছে। আদিবাসীদের নিজেদের ধর্ম সারনার স্বীকৃতি দাবি করেছে আদিবাসী মানুষ। কিন্তু কেন্দ্র মুখ ফিরিয়ে থাকায় তাঁরা ক্ষুব্ধ। বরং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার এই ধর্মকে মান্যতা দিয়েছে। মুখ্যসচিব চিঠি লিখেছেন কেন্দ্রকে। ৪৫ শতাংশ আদিবাসী ভোট, ১২-১৪ শতাংশ নেপালি ভোট রয়েছে সেখানে। ফলে সব মিলিয়ে উত্তরবঙ্গ এখন ভোট আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এবার সেখান থেকেই জবাব দেওয়ার পালা। কারণ সুপ্রিমো স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, গেরুয়া শিবিরকে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়া যাবে না।