বাজেটেও রবীন্দ্রনাথের কবিতা উদ্ধৃতি! সত্যিই ‘দুঃসময়’ এসেছে, বলছেন বুদ্ধিজীবীরা
‘দিক দিগন্ত অবগুণ্ঠনে ঢাকা- তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর, এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।’
সোমবার সংসদে দাঁড়িয়ে বাজেট ব্যাখ্যার সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দুঃসময়’ কবিতার ওই লাইনগুলি উদ্ধৃত করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন (Nirmala Sitharaman)। তিনি বলেন, ‘ফেইথ ইজ দ্য বার্ড দ্যাট ফিলস দ্য লাইট অ্যান্ড সিংস হোয়েন দ্য ডন ইজ স্টিল ডার্ক।’ ইতিমধ্যেই অর্থমন্ত্রীর ওই ভিডিয়ো ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়। তবে BJP-র শীর্ষস্থানীয় নেতারা এদিন ওই কবিতা পাঠের সময় লোকসভার বেঞ্চে তালি দিয়ে সমর্থন করলেও, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের (West Bengal Assembly Election 2021) আগে ফের রাজনৈতিক মঞ্চে বাঙালি মনীষীদের নিয়ে আসার আচরণকে বাঙালি কীভাবে দেখছে, উত্তর দিল বাংলার বুদ্ধিজীবি মহল।
দল মত নির্বিশেষে আমরা যে রাজনীতি করছি সেই রাজনীতি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে না। খঞ্জ রাজনীতি। এই খঞ্জতার কারণেই কিন্তু এই ক্রাচের প্রয়োজন হচ্ছে। এখানে ক্রাচটা হল এই উদ্ধৃতি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ক্রাচটা অত্যন্ত ভঙ্গুর, পলকা। তার কারণ আমরা উদ্ধৃতিটাও ঠিকমতো দিতে পারি না। যে দেশের মানুষ সঠিকভাবে তাঁদের জাতীয় সঙ্গীত গাইতে পারেন না, তাঁদের উদ্ধৃতিও তো সংশয়াচ্ছন্ন। তাঁরা ঠিক উদ্ধৃতি দিলেও মনে হয় ভুল উদ্ধৃতি দিলেন। আমাদের ছোটবেলায় মাস্টারমশাই বলতেন, তোরা তো ভালো লিখতে পারিস না, তাই একটা লাইনও ভালো লিখে ফেললে সেটা কোটেশনে দিয়ে দিস। যেটা দেখে মনে হবে ছেলেটা পড়াশোনা করেছে।
এঁদের লেখাপড়াও তো খুবই সীমিত। তাই অন্ধকারের মধ্যে একটু আলো জ্বালানোর জন্য এঁরা ক্রমাগত মনীষীদের সাহায্য নিচ্ছে। এটা একটা অসুখের পর্যায়ে চলে গিয়েছে। যে কোনও জায়গায় যে কোনও একটা উদ্ধৃতি লাগিয়ে সেটাকে ইলাস্টিকের মতো টানাটানি করে কোনওভাবে তার মধ্যে একটা জ্ঞাতার্থ নিয়ে আসার চেষ্টা এটা। কিন্তু সেটা হয় না। রবীন্দ্রনাথকে ক্রমাগত উদ্ধৃত করা হয়। সেদিন তো দেখলাম, ‘আমার সন্তান থাকুক দুধে ভাতে’, এটাও জীবনানন্দ দাশের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতো দুঃস্বপ্নের মতো একটা রাজত্ব। চূড়ান্ত অশিক্ষা সব জায়গায়। এই দুঃস্বপ্ন, দুঃসময় কবে কাটবে জানি না। এটা করোনার থেকেও ভয়ংকর বলে আমি মনে করি।
বিদেশেও তো এত সাহিত্যিক রয়েছেন। সেখানকার রাজনৈতিক সভায় তো মিল্টন, কিটস, শেক্সপিয়ারদের টেনে আনা হয় না! আমি অনুরোধ করব রাজনৈতিক স্বার্থে মনীষীদের উদ্ধৃত করবেন না। বরং তাঁদের সম্পর্কে জানুন, কাজের সঙ্গে একাত্ম হন। এটা কেউ করেননি। বঙ্কিমচন্দ্রের ভাষা অনেকেই বুঝতে পারেন না। তাই ওঁকে নিয়ে টানাটানি হয় না। কিন্তু কথায় কথায় রবীন্দ্রনাথ (Rabindranath) আনা হয়। উনি কিন্তু ব্রাহ্ম হয়েও উপনিষদ পড়াতেন। আর হিন্দুত্বের প্রেক্ষাপটে কেন বিবেকানন্দ টানা হয় জানি না। ওঁর ধর্মমত তো ইনক্লুসিভ, এক্সক্লুসিভ নয়। উনি মানব ধর্মের কথা বলেছেন বারবার। সেটা বুঝুন।