ক্ষতিগ্রস্ত বাংলার চাষিদের এক পয়সাও দেয়নি কেন্দ্র, সংসদে স্বীকারোক্তি মন্ত্রীর
পরপর দু’টি অর্থবর্ষ। কৃষক এবং বাংলাকে বঞ্চনার আরও এক চিত্র প্রকাশ হল সংসদে। এই দুই বছরে বাংলার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা কেন্দ্রের তরফ থেকে এক পয়সাও সাহায্য পাননি। এ কথা লিখিত বিবৃতিতে স্বীকার করে নিল নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) সরকার। তৃণমূলের রাজ্যসভার এমপি মানসরঞ্জন ভুঁইঞা লিখিতভাবে কেন্দ্রের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ফসল নষ্ট হওয়ার ফলে কতজন কৃষক বিমার সুবিধা পেয়েছেন? জবাবে অর্থমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী অনুরাগ সিং ঠাকুর রাজ্যওয়াড়ি যে তালিকা দিয়েছেন, তাতে বঞ্চনার ছাপ স্পষ্ট। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে বাংলার ৭ লক্ষের সামান্য কিছু বেশি চাষি সুবিধা পেলেও পরের দু’বছর অর্থাৎ ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ সালে পশ্চিমবঙ্গের একজন কৃষকও বিমার সুবিধা পাননি।
একদিকে নয়া কৃষি আইনের (Farm Laws) বিরোধী আন্দোলনকে দুরমুশ করার চেষ্টা, অন্যদিকে বাংলার চাষিদের প্রতি বঞ্চনা… সব মিলিয়ে কৃষক ইস্যুতে উত্তাল হয়ে রইল সংসদ। হল্লা, বিক্ষোভ, ওয়েলে নেমে স্লোগান, ওয়াক আউটের মতো প্রতিবাদের অস্ত্রে মঙ্গলবার মোদি সরকারকে কোণঠাসা করল বিরোধীরা। লোকসভা এবং রাজ্যসভা, কৃষক ইস্যুতে সংসদের দুই কক্ষই এদিন দফায় দফায় মুলতুবি হয়ে গেল। এদিন সরকারকে বিরোধীরা বুঝিয়ে দিয়েছে, জোর করে কৃষি বিল পাশ করিয়ে নিলেও এত সহজে পার পাওয়া যাবে না। সড়কে যেভাবে দেশের অন্নদাতারা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, একইভাবে সংসদেও প্রতিবাদ চলবে। তিন কালা কানুন বাতিল করতে হবে। যদিও সরকার একগুঁয়ে অবস্থান থেকে সরছে না। কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমার এদিনও বলেছেন, ‘দেড় বছর আইন কার্যকর না করার প্রস্তাব তো দেওয়া হয়েছে। এবার কৃষকরা কী ঠিক করেন দেখি!’
পাশাপাশি, বাংলার কৃষক ইস্যুতেও মোদি সরকারকে একহাত নিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) দল। ফসলের ক্ষতিপূরণে ‘প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা’ এবং ‘রিস্ট্রাকচার বেসড ক্রপ ইনস্যুরেন্স স্কিমে’ ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে বাংলার আবেদন জমা পড়েছিল ৫১ লক্ষের বেশি। কিন্তু সুবিধা দেওয়া হয়েছে মাত্র ৭ লক্ষ ১০ হাজার কৃষককে। মন্ত্রীর জবাব হাতে পেয়ে প্রশ্নকর্তা মানসবাবুর তোপ, কৃষকদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন নরেন্দ্র মোদি।
রাজ্যসভার যাবতীয় কাজ বাতিল করে কৃষক ইস্যুতে আলোচনার দাবিতে এদিন নোটিস দেন টিএমসির সুখেন্দুশেখর রায়, কংগ্রেসের গুলাম নবি আজাদ, ডিএমকের তিরুচি শিবা সহ বেশ কয়েকজন এমপি। কিন্তু নোটিস অনুমোদন করেননি সভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নাইডু। তারই প্রতিবাদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সামনেই সরব হন বিরোধী এমপিরা। ওয়েলে নেমে চলে প্রতিবাদ। তারপর ওয়াক আউট। দফায় দফায় হয় মুলতুবি। চতুর্থ দফায় সারাদিনের জন্য রাজ্যসভা মুলতুবি হয়ে যায়।
একই পরিস্থিতি লোকসভাতেও। সেখানেও সরব হন বিরোধীরা। কংগ্রেসের লোকসভার নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী সভার যাবতীয় কাজকর্ম বাতিল করে কৃষক ইস্যুতে আলোচনার নোটিস দেন। বলেন, ব্রিটিশরাজ চলছে। কৃষক ইস্যু নিয়ে আলোচনা করতে হবে। না হলে আমাদের প্রতিবাদও থামবে না। বিরোধী-প্রতিবাদে সভা মুলতুবি করে দেন স্পিকার ওম বিড়লা।