হারানো স্বাস্থ্য ফিরে পেতে…
শরীর অসুস্থ হওয়ার প্রধান কারণ চারটি:
- ভুল খাদ্য গ্রহণ।
- শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফ্যাট জমার প্রবণতা।
- ফ্যাট ঝরাতে শরীরচর্চায় অনীহা, এবং
- শরীর নিয়ে সচেতনতার অভাব।
অতএব আমরা যদি প্রথম তিনটি কারণ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারি, তাহলেই অন্তত পক্ষে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে সুস্থ থাকা সম্ভব। এবার প্রথম তিনটি কারণে বিশদে নজর দেওয়া যাক।
১. খাদ্যাভ্যাসে নিয়ন্ত্রণ
পাতে বাড়ুক শাকসব্জিঃ
শরীর সুস্থ রাখতে শাকসব্জির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। শাকসব্জি থেকেই মেলে শরীরের পক্ষে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ভিটামিন (যেমন ভিটামিন সি, এ, ই, কে, বি কমপ্লেক্স) ও খনিজ (যেমন আয়রন, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, জিঙ্ক)। ভিটামিন খনিজের ঘাটতিতে শরীরে বিবিধ রোগ দেখা দেয়।
বেশি পরিমাণে সব্জি খেলে তা আমাদের ‘পেট ভরতি’ থাকার অনুভূতি দেয়। ফলে পাতে শাকসব্জি বেশি পরিমাণে রাখলে ভাত ও রুটি’র মতো মাত্রাতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট প্রধান খাদ্যের সাহায্যে পেট ভরাতে হয় না।
মরশুমি ফল:
ভিটামিন, খনিজ ছাড়াও ফলে থাকে অত্যন্ত জরুরি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইটোকেমিক্যালস। এইসব উপাদান বিভিন্ন অসুখ এমনকী ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধিরও প্রতিরোধ করে। আর এই সকল উপাদান থাকে মরশুমি ফলে।
মনে রাখবেন, মরশুমি ফলই হল তাজা ফল। তাই শীতকালে যেমন খেতে হবে কমলালেবু বা আপেল, তেমনই গ্রীষ্মকালে খেতে হবে আম, লিচু, পেয়ারা। সুতরাং, আপেল দামি ফল বলে তা গ্রীষ্মকালে খেলে পুষ্টি উপাদান বেশি মিলবে না মোটেই!
২. দেহে চর্বি জমা
ভারতীয়দের শরীরে ফ্যাট জমার প্রবণতা থাকে দেহের অভ্যন্তরীণ নানা অঙ্গে। উদাহরণ হিসেবে লিভার, প্যাংক্রিয়াস, হার্ট-এর কথা বলা যায়। এই ধরনের ফ্যাটকে এক্টোপিক ফ্যাট বলে। মনে রাখতে হবে, ভুঁড়ি কিন্তু এক্টোপিক ফ্যাট-এর উদাহরণ। এই ফ্যাট থেকে এক ধরনের রাসায়নিক বেরয় যা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক।
এমনকী ডায়াবেটিস হওয়ার পিছনেও ভিসেরাল ফ্যাট বা এক্টোপিক ফ্যাটের যথেষ্ট ভূমিকা আছে বলে মনে করা হয়। দেহের অন্দরের অঙ্গের স্বাভাবিক কার্যকলাপকে বিঘ্নিত করে এক্টোপিক ফ্যাট। ফলে শরীরে দেখা দেয় নানাবিধ অসুখ। উদাহরণ হিসেবে ফ্যাটি লিভারের কথা বলা যায়। অতএব ভারতীয়দের শরীর সুস্থ রাখতে হলে ডায়েটে রাখতে হবে যথেষ্ট পরিমাণে প্রোটিন ও ফাইবার জাতীয় খাদ্য।
৩. শরীরচর্চা:
ব্রাশ করা, চা খাওয়া, খবরের কাগজ পড়ার মতোই শরীরচর্চাকেও প্রতিদিনের অবশ্যকর্মের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সবাইকে জিমে গিয়ে ঘাম ঝরাতে হবে এমন নয়। কমবয়সিরা সারাদিনের মধ্যে একটা সময় ঘরে বসেই ডন বৈঠক অভ্যেস করতে পারেন। করতে পারেন স্কিপিং। ভোরবেলা জগিং করাও যেতে পারে। সারাদিনে অন্তত ৩০ মিনিট হনহন করে হাঁটলেও দুর্দান্ত কাজ হবে। সব বয়সের মানুষই শরীরচর্চা করতে পারেন।
.
৪. সচেতনতা
টিকাকরণঃ
বাচ্চাদের জন্মের পরে ছয় বছর বয়স অবদি সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কতকগুলি টিকা দেওয়া হয় বিনামূল্যে। দেহে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে টিকার বিরাট ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে ট্রিপল অ্যান্টিজেন বা ডিপথেরিয়া, টিটেনাস, হুপিং কাশির প্রতিরোধের টিকার কারণে শিশুদের অকাল প্রাণহানি রোধ করা সম্ভব হয়েছে।
হেপাটাইটিস, নিউমোনিয়া, চিকেন পক্স-এর মতো ভ্যাকসিন কমিয়েছে অসুখের প্রকোপ। সচেতন হলে রুখে দেওয়া যায় মেয়েদের সার্ভাইক্যাল ক্যান্সারের মতো মারণ রোগকেও। অসুখ প্রতিরোধ করতে পারে এইচপিভি ভ্যাকসিন। ১০ থেকে ১৪ বছরের কিশোরীদের এই ভ্যাকসিন দেওয়া যায়।
প্রাপ্তবয়স্কদেরও উচিত পঞ্চাশ পেরনোর পর চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ফ্লু ভ্যাকসিন, নিউমোকক্কাল ভ্যাকসিন, টিডিএপি, হেপাটাইটিস বি, চিকেন পক্স, হারপিস জস্টারের ভ্যাকসিন নেওয়া।
সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি:
খাওয়ার আগে প্রতিবার ২০ সেকেন্ড ধরে সাবানজল দিয়ে হাত ধোওয়ার অভ্যেস করোনা সহ একাধিক ভাইরাসের সংক্রমণ রুখে দিতে পারে। টয়লেট যাওয়ার আগে পরে একইভাবে হাত ধোওয়ার অভ্যেস পারে বিভিন্ন জীবাণুর আক্রমণ প্রতিহত করতে। বাড়ি থেকে বাইরে বেরনোর সময় মুখে মাস্ক পরার অভ্যেস যেমন নানা সংক্রামক ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিহত করে, তেমনই রুখে দিতে পারে মহামারী।
নারী সুরক্ষায়:
ব্রেস্ট ক্যান্সার ও সার্ভাইক্যাল ক্যান্সারের প্রকোপ বেড়েই চলেছে ভারতে। অথচ নিয়মিত স্ক্রিনিং-এর মাধ্যমে এই দুই ধরনের ক্যান্সার আগাম চিহ্নিত করা যায়। দ্রুত চিকিৎসা শুরুর মাধ্যমে রোধ করা যায় প্রাণহানি। চিকিৎসকের পরামর্শমতো ব্রেস্ট ক্যান্সারের স্ক্রিনিং মহিলারা নিজেরাই করতে পারেন।
অন্যদিকে এইচপিভি ভ্যাকসিন না নেওয়া থাকলে, বিয়ের পর প্রতি তিন বছর অন্তর স্বল্প খরচের প্যাপ স্মিয়ার টেস্ট-এর মাধ্যমে মহিলারা আগাম সার্ভাইক্যাল ক্যান্সার সম্পর্কে জানতে পারেন ও রোগমুক্ত হতে পারেন।