আশ্রমিকদের নিয়ে উপাচার্যের বিতর্কিত মন্তব্য, সমালোচনা শান্তিনিকেতনজুড়ে
‘আশ্রমিকরা স্বার্থান্বেষী’, বিশ্বভারতীর অনুষ্ঠানে উপাচার্যের এই মন্তব্য ঘিরে ফের বিতর্ক শুরু হয়েছে। এনিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে শান্তিনিকেতনজুড়ে। পাশাপাশি সাংবাদিকদের আক্রমণ করে বিশ্বভারতীর (Visva Bharati University) উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বলেন, উপার্জন করতে পারবেন, তাই আমার কথাকে তাঁরা বিকৃত করে সংবাদ পরিবেশন করেন। এই ঘটনায় সমালোচনায় সরব হয়েছেন বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী ও শান্তিনিকেতনের আশ্রমিকরা।
বুধবার সন্ধ্যায় শান্তিনিকেতনের রতনপল্লির রামকিঙ্কর মঞ্চে বিশ্বভারতীর মহিলা সমিতির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। ওই অনুষ্ঠানেই মহিলা সমিতির লোগোর সূচনা করেন উপাচার্য। এরপর তাঁর বক্তব্যে মহিলা সমিতির সদস্যদের উপাচার্য বলেন, বিরোধিতা পাচ্ছেন? আগামীদিনেও অনেকে বিরোধিতা করে যাবে। তা সত্ত্বেও মহিলা সমিতি গঠন করতে পেরেছি। সমাজ কিন্তু সহজে গ্রহণ করবে না।
এরপর তিনি বলেন, বেশিরভাগ আশ্রমিক ও রাবীন্দ্রিককে আমার মনে হয় তাঁরা স্বার্থান্বেষী। স্বার্থের জন্য তাঁরা যে কোনও কিছু করতে রাজি। রবীন্দ্রনাথ তাঁদের কাছে একটা সোপান। এটা আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। সেজন্য অনেকে আমাকে অপছন্দ করেন। বিশ্বভারতী এমনই এক বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে মহিলা সমিতি ছিল না। যা ন্যাকের মানোন্নয়নের জন্য খুব প্রয়োজনীয় ছিল। খুব অল্পদিনেই এই মহিলা সমিতির সূচনা হয়েছে।
যদিও ১০৪ বছরের পুরনো আলাপিনী মহিলা সমিতি থাকা সত্ত্বেও নতুন করে মহিলা সমিতি গঠনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আলাপিনী মহিলা সমিতির সদস্য মনীষা বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়তী ঘোষ। এনিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন তাঁরাও।
কিন্তু, আশ্রমিকদের ‘স্বার্থান্বেষী’ বলায় প্রবল ক্ষুব্ধ বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী ও শান্তিনিকেতনের আশ্রমিকরা। উপাচার্যের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রতিবাদ করেছেন তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য, বিতর্কিত মন্তব্য করে সংবাদ শিরোনামে থাকার অভ্যাস হয়ে গিয়েছে বিশ্বভারতীর উপাচার্যের। তাই তিনি একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য করছেন।
এ ব্যাপারে ঠাকুর পরিবারের অন্যতম সদস্য, শান্তিনিকেতনের (Shantiniketan) প্রবীণ আশ্রমিক তথা পাঠভবনের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, এটা আমার হাস্যকর মনে হয়েছে। এটাকে আমি পাত্তা দিচ্ছি না। উপাচার্যের কোনও কথাকে আমি গুরুত্ব দিই না। নতুন মহিলা সমিতি করার বিষয়ে তিনি বলেন, উপাচার্য আলাপিনী মহিলা সমিতি ভেঙে দিয়েছেন। এরকমভাবে সবই পুরনো জিনিস ভেঙে দিয়ে নতুন করে গড়ার চেষ্টা করছেন। উনি যা কিছু করছেন, কোনওটাই কাম্য নয়।
প্রবীণ আশ্রমিক সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, যেখানে আশ্রমিকদের আশ্রমের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দিয়ে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ বলে গিয়েছেন, ‘আশ্রম তোমাদের’। কিন্তু সেখানে এই মন্তব্য করে তিনি আরও একবার নিজের পদমর্যাদার অবমাননা করলেন। যদিও এটা নতুন কিছু নয়। তবে মঞ্চে দাঁড়িয়ে যেভাবে এই কথা বলেছেন, তাতে ওঁর নিজেরই ভাবমূর্তি নষ্ট হল। উনি নিজেকে অরাবীন্দ্রিক বলার পাশাপাশি রাবীন্দ্রিকদের প্রতি ‘অ্যালার্জি’ থাকার ভিত্তিতেই এই ধরনের কথাগুলো বলে থাকেন।
বিশ্বভারতীর প্রাক্তন ছাত্র অনিন্দ্য আচার্য বলেন, ইতিহাস না জেনে উপাচার্যের মতো ব্যক্তিত্বের এধরনের মন্তব্য করা শোভা পায় না। উনি হয়তো জানেন না বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার পিছনে আশ্রমিকদের অন্যতম ভূমিকা ও অবদান রয়েছে। এ ব্যাপারে বিশ্বভারতী জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকারের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।