আগামী সপ্তাহে রাজ্যে ‘সিনার্জি কনক্লেভ’
চলতি বছরের বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন গত জানুয়ারি মাসে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে তা হয়নি। তবু বাংলায় বিনিয়োগ টানতে চেষ্টার ত্রুটি রাখছে না রাজ্য সরকার। আগামী সোমবার তারা শিল্পপতিদের নিয়ে কলকাতায় বাণিজ্য সম্মেলন (Bengal Business Conclave) করবে। বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট (Bengal Global Business Summit) বা বিজিবিএসের মতো বহর বা আভিজাত্য থাকবে না এই সম্মেলনে। কিন্তু ভোটের আগে কনক্লেভটিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছেন শিল্পপতিরা। কলকাতার পাশাপাশি জেলাতেও এই সভার আয়োজন করা হবে। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি বুধবার দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলাকে নিয়ে আয়োজিত হতে চলেছে ওই শিল্পসভা। দুর্গাপুরে সেই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। তারপর আরও তিনটি সম্মেলন হওয়ার কথা। রাজ্য সরকার সম্মেলনগুলিতে নতুন কোনও শিল্পবার্তা দেয় কি না, তার দিকেই তাকিয়ে আছেন তাঁরা।
৮ ফেব্রুয়ারি যে শিল্প সম্মেলন হবে, তার সরকারি নাম দেওয়া হয়েছে ‘বেঙ্গল বিজনেস কনক্লেভ অ্যান্ড সিনার্জি’। এখানে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে কলকাতা ও লাগোয়া জেলাগুলিকে। সেই তালিকায় আছে হুগলি, হাওড়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা। আলিপুরের ‘উত্তীর্ণ’য় বসবে এই শিল্পসভা। মূল উদ্যোক্তা শিল্প দপ্তর, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পদপ্তর এবং পশ্চিমবঙ্গ শিল্পোন্নয়ন নিগম। মূল বক্তা হিসেবে থাকছেন রাজ্যের শিল্প ও অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। সরকারি সূত্রের খবর, অমিতবাবু সশরীরে হাজির হবেন না। তবে ভার্চুয়ালভাবে তিনি ওই শিল্পসভায় অংশ নেবেন। এছাড়াও শিল্পোন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান রাজীব সিনহা, ক্ষুদ্র শিল্প দপ্তরের মুখ্যসচিব রাজেশ পাণ্ডে এবং নিগমের এমডি এবং শিল্পদপ্তরের সচিব বন্দনা যাদব হাজির থাকবেন সভায়। ওই অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে রাজ্যের প্রথম সারির শিল্পপতিদের। হাজির থাকবেন বণিকসভার প্রতিনিধিরাও। অন্যদিকে দক্ষিণবঙ্গের শিল্পসভায় গুরুত্ব পাবেন দুই বর্ধমান, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও ঝাড়গ্রামের শিল্প সংস্থার কর্তারা।
রাজ্য বা দেশ তো বটেই, আন্তর্জাতিক স্তরে শিল্প বার্তা দিতে ফি বছর রাজকীয় শিল্প সম্মেলনের আয়োজন করে রাজ্য সরকার। তার মধ্যমণি থাকেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে রাজ্যের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে, বলা ভালো ‘ব্র্যান্ড বেঙ্গল’কে তুলে ধরতে আয়োজন করা হয় সেই বিশ্বমানের শিল্পসভার। কিন্তু যে শিল্পগুলি ইতিমধ্যেই রাজ্যে আছে বা যে বিনিয়োগ রাজ্যে আসতে চলেছে, তাদের যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তার জন্য সরকার আয়োজন করে ‘সিনার্জি’ শিরোনামের একটি অনুষ্ঠানের। প্রথমে তা কলকাতায় শুরু হলেও, পরবর্তীকালে সেই প্রকল্প ছড়িয়ে দেওয়া হয় জেলায় জেলায়। শিল্পের গা থেকে লাল ফিতের ফাঁস আলগা করাই ছিল ‘সিনার্জি’র মূল উদ্দেশ্য। শিল্পমহলে ব্যপক সাড়া ফেলে দেয় ওই উদ্যোগ। শুধু সরকারি সমস্যাগুলির সমাধানই নয়, বিভিন্ন ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটানোর ব্যবস্থা করা হয় ওই সম্মেলনগুলিতে। শিল্পের জন্য ‘ক্লিনিক’ হিসেবে কাজ করে সেগুলি। ভোটের আগে ফের সেই উদ্যোগকে সামনে আনতে তৎপর সরকার, বলছে শিল্পমহল। রাজ্যের শিল্পকর্তারা এই সভাগুলিকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন। তাঁদের একাংশের কথায়, ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। আদর্শ আচরণবিধি চালু হওয়ার মুখে তড়িঘড়ি বাণিজ্য সম্মেলন ডেকে শিল্পমহলের আস্থা অর্জন করাই এখন সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। সম্মেলন করে সেই কাজটি রাজ্যজুড়ে করতে চাইছে তারা।