আগামী ৫ বছরে দেড় কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি মমতার, কীভাবে সম্ভব জানুন বিস্তারিত
আগামী ৫ বছরে দেড় কোটি কর্মসংস্থান হবে পশ্চিমবঙ্গে। শুক্রবার রাজ্যের অন্তর্বর্তী বাজেট পেশের একেবারে শেষে এই ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। এবং এটাও তিনি পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছেন যে এই দেড় কোটি চাকরি আসলে সরকারি, আধা–সরকারি ও বেসরকারি স্তরে এবং সব নিযুক্তিমূলক (কনট্র্যাকচুয়াল) কর্মসংস্থানকে ধরে। স্বাভাবিকভাবেই বিধানসভা নির্বাচনের আগে সরকারের ভিত আরও শক্ত করতে এবং ভোট–রাজনীতির অংশ হিসেবেই বাজেটের (West Bengal State Budget) দিনে বিশাল চাকরির এই ঘোষণা যথেষ্ঠ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহল মহল।
আগামীদিনে রাজ্যে যে সকল উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড এবং শিল্পের অগ্রগতির ভিত্তিতে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে তার বিবরণীও এদিন দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সরকারের দাবি এবং মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী আগামীদিনে এবং বর্তমানে বাংলায় যে সব কর্মযজ্ঞ হতে চলেছে এবং হচ্ছে তা দেখে নিন একনজরে—
তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দর: পূর্ব মেদিনীপুরের তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দর গড়ে তোলা হচ্ছে। এই প্রকল্পের পরিকাঠামো উন্নয়নকার্যে ৭ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, এতে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
অশোকনগরে তেলের ভাণ্ডার: উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরে ওএনজিসি–র তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনের একটি বিরাট প্রকল্প চালু হচ্ছে। এর ফলে প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল বিভিন্ন অনুসারী শিল্প এখানে গড়ে উঠবে।
দেউচা–পাচামি কয়লাখনি: বীরভূমের দেউচা–পাচামিতে কয়লার বিরাট ভান্ডার পাওয়া গিয়েছে। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কোল ব্লক। এই প্রকল্পে খুব শীঘ্রই কাজ চালু হবে। প্রথম দু’বছর শুধু সরকারি জমিতে কাজ হবে। কোনও বাসিন্দাকে জমি থেকে উচ্ছেদ করা হবে না। এই প্রকল্পগুলিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দক্ষ ও অদক্ষ হাজার হাজার শ্রমিক কাজের সুযোগ পাবে। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, এর ফলে শুধু বীরভূম জেলাই নয়, তার আশপাশের জেলা বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, হুগলি, মুর্শিদাবাদ জেলাগুলির অর্থনৈতিক উন্নয়নে গতি আসবে। এর ফলে প্রচুর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
জঙ্গলসুন্দরী কর্মনগরী: একদিকে ডানকুনি থেকে বর্ধমান, দুর্গাপুর হয়ে আসানসোল পর্যন্ত এবং অন্যদিকে বড়জোরা, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও রঘুনাথপুর পর্যন্ত বিশেষ শিল্প করিডর তৈরি করা হচ্ছে। এই করিডর রাজ্যের প্রথম শিল্পনগরী পুরুলিয়া জেলার রঘুনাথপুরে ২৪৮৩ একর জমির ওপর তৈরি করা হবে। এই শিল্পনগরীর নাম দেওয়া হয়েছে— জঙ্গলসুন্দরী কর্মনগরী। এর জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
বেঙ্গল সিলিকন ভ্যালি: নিউ টাউনে ২০০ একরের ওপর জমিতে বেঙ্গল সিলিকন ভ্যালি প্রকল্প চালু হয়েছে। ২৪টি আইটি কোম্পানিকে ৮৯ একর জমি দেওয়া হয়েছে। যা ১১ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ আনবে। টিসিএসের মতো কোম্পানি ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। এছাড়া ইনফোসিস, উইপ্রোর মতো কিছু আইটি সংস্থাকে রাজারহাটের ফিনান্সিয়াল হাব ও অন্যান্য জায়গায় জমি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সিঙ্গুরে অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক ও হাসিমারায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক তৈরি হচ্ছে।
শূন্যপদে নিয়োগ: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন জানান, ‘সরকারে এসে গত ১০ বছরে আমরা ৪ লক্ষের বেশি শূন্যপদে নিয়োগ করেছি। বর্তমানে বিভিন্ন বিভাগে ৫০ হাজার এবং পুলিশে ৭২৯১টি পদ খালি আছে। আগামী তিন বছর বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে এই সব শূন্যপদে নিয়োগ করা হবে।’
মাটির সৃষ্টি: পশ্চিমাঞ্চলে অনুর্বর পতিত জমির ওপর উদ্যানপালন, মৎস্যচাষ, প্রাণী বিকাশের মাধ্যমে কর্মসংস্থান তৈরি করার আর একটি অনন্য প্রকল্প ‘মাটির সৃষ্টি’। গত বছর ১৩ হাজার একর জমির ওপর প্রায় ১৯৪২টি জায়গায় এই প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছিল। আগামী বছর আরও ১৪ হাজার একর জমির ওপর এই কাজ করা হবে। যার ফলে প্রচুর কর্মসংস্থান তৈরি হবে।
১০০ দিনের কাজ: মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানান, ‘বিগত ১০ বছরে ১০০ দিনের কাজে আমরা ৭.২৪ কোটি মানুষকে কাজ দিতে পেরেছি। এ বছর ১০০ দিনের কাজে ১.১ কোটি মানুষকে কাজ দিয়ে সারা দেশের মধ্যে আমরা প্রথম স্থান অর্জন করেছি।’
সামগ্রিক কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি দেওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী এদিন দাবি করে জানান, ‘আগামী ৫ বছরের মধ্যে সরকারি, আধা–সরকারি ও বেসরকারি স্তরে এবং সব নিযুক্তিমূলক কর্মসংস্থানকে ধরে দেড় কোটি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে।’