বাম-কংগ্রেস জোট চাঙ্গা হতেই শঙ্কিত গেরুয়া শিবির
লোকসভা ভোটে বাংলায় অক্সিজেন জোগানো বাম ভোট কি রামে থেকে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই? গেরুয়া শিবির কিন্তু তেমনটাই আশঙ্কা করছে। যার রেশ এদিন পাওয়া গেল স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির(Narendra modi) মন্তব্যে। হলদিয়ার হেলিপ্যাড ময়দানে বাংলার ভোটারদের কাছে কার্যত তিনি আর্জি জানালেন, ‘বাম-কংগ্রেসকে সমর্থন জুগিয়ে নিজেদের ভোট নষ্ট করবেন না’। বিজেপির(BJP) এক এবং একমাত্র মুখ নরেন্দ্র মোদির এই মন্তব্যে একটা বিষয় পরিষ্কার, বাংলার ভোটযুদ্ধ কোনওমতেই ত্রিমুখী স্তরে যেতে দিতে নারাজ তিনি। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের মুখে কিছুটা হলেও বাম-কংগ্রেস জোট চাঙ্গা হয়ে ওঠায় শিরে সংক্রান্তি দেখছে গেরুয়া শিবির। বামের ভোট বিজেপির ঝুলিতে না এলে আসন দখলের মরিয়া লড়াই কতটা প্রভাবশালী হবে, সংশয় রয়েছে তা নিয়েই। তারই প্রতিধ্বনি শোনা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে। মরিয়া হয়ে তিনি নতুন দাবি তুলেছেন যে, তৃণমূল-বামেদের লড়াই শুধু লোক দেখানো। তৃণমূল(TMC), বামফ্রন্ট(Left) এবং কংগ্রেস(Congress) মিলে নাকি ম্যাচ ফিক্সিং করছে।
মূল অনুষ্ঠান ছিল ইন্ডিয়ান অয়েলের। কিন্তু রথ দেখা কলা বেচার মতো বাংলায় এসে সরকারি অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ভোট প্রচারের আঁচও বাড়িয়ে গেলেন নরেন্দ্র মোদি। শনিবারের জনসভায় শুরু থেকেই তিনি ছিলেন আক্রমণাত্মক। এবং নিশানা একজনই—মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। মোদির বক্তৃতায় সেই চেনা শব্দ এবং অভিযোগগুলিই এদিন ফিরে ফিরে এসেছে—সিন্ডিকেট, তোলাবাজ, দুর্নীতি। প্রধানমন্ত্রী এদিন অভিযোগ করেছেন, কেন্দ্রের পাঠানো টাকা নয়ছয় করেছে তৃণমূল সরকার।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে কার্যত দুর্গের চেহারা নিয়েছিল টাউনশিপ হেলিপ্যাড ময়দান। মাঠজুড়ে বাঁশের ডবল ব্যারিকেড। আর পুরো ময়দান ধার বরাবর ঢাকা গেরুয়া কাপড়ে। এলাহি আয়োজনের ভোট-প্রচার সভার পুরো সময়টাই তিনি খরচ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাছাই করা শব্দে আক্রমণে। আর তার পাশাপাশি একফাঁকে জায়গা বানিয়ে নিল সাফাইপর্ব। তাও আবার ভিক্টোরিয়া-কাণ্ড নিয়ে। এদিন জনসভা থেকে ভিক্টোরিয়া-কাণ্ডে ‘অভিযুক্ত’দের একপ্রকার সমর্থনই জানিয়ে গেলেন নরেন্দ্র মোদি। বললেন, ‘দিদিকে তো উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন করলেই রেগে যান। ভারত মাতা কি জয় তিনি শুনতে পারেন না।’ কিন্তু ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে মমতাকে বলতে বাধা দেওয়া এবং ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান যে আসলে বাংলাকেই অপমান, সেই বিষয়টি সযত্নে এড়িয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী। দাবি করলেন, বাংলার লক্ষ লক্ষ কৃষক শুধু তৃণমূল সরকারের জন্য পিএম কিষান নিধি প্রকল্পের টাকা থেকে বঞ্চিত হয়ে রয়েছেন। দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। ১০ বছরে মমতার জমানায় শুধুই নিমর্মতা মিলেছে। বাম জমানার পরিবর্তন নয়, পুনরুজ্জীবন হয়েছে বলেও সুর চড়ান প্রধানমন্ত্রী।
একের পর এক প্রতিশ্রুতির বন্যা ছিল তাঁর ভাষণে— ৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের সূচনা, পূর্ব মেদিনীপুরে মৎস্য বন্দর হাব, কেন্দ্রীয় প্রকল্পে চা বাগানের শ্রমিকদের সুবিধা, সড়ক যোগাযোগে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের মতো ঘোষণায় কার্যত মৌখিক নির্বাচনী ইস্তাহারই প্রকাশ করে গেলেন মোদি। যদিও লক্ষ্য ছিল বাংলার ভোটারকুল। এদিনও তিনি বক্তৃতার শুরুতেই নাম নেন ক্ষুদিরাম বসুর। মেদিনীপুরের মাটির গুণকীর্তন করেন। বলেন, পরাধীন ভারতেও যে বাংলা দিশা দেখাত, সেই রাজ্য আজ এমন পিছিয়ে পড়ল কেন? আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় পরিবর্তনের ডাক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বলেছেন, বাংলা ‘রাম কার্ড’ দেখাবে।
প্রতিশ্রুতি, আর একগুচ্ছ অভিযোগের ডালি সাজিয়ে রাজ্যে এসেছিলেন তিনি। তৃণমূল জানিয়েছে, সরকারিভাবে আজ সব অভিযোগের জবাব দেওয়া হবে। আর প্রতিশ্রুতি? উত্তর বিধানসভা ভোটের ফলে।