মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় খুশি পর্যটন শিল্প
এবারের বাজেট(Bengal Budget 2021) ঘোষণায় পর্যটন শিল্পের(Tourism Industry) উপর নজর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। তিনি জানিয়েছেন, পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সংস্থা, যেমন রিসর্ট, হোটেল, হোম স্টে, ভ্রমণে সাহায্যকারী বা ট্যুর অপারেটর সংস্থা প্রভৃতির জন্য আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হবে। এই প্রকল্পে ৫০ হাজার টাকা থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত যাঁরা ঋণ নেবেন, তাঁদের সুদের ৫০ শতাংশ প্রথম বছরে রাজ্য সরকার বহন করবে। ব্যাঙ্কের মাধ্যমে যাতে এই ঋণ পাওয়া যায়, তার জন্য সাহায্যের হাত বাড়াবে রাজ্য। সুদের ভার বহন করার জন্য রাজ্য সরকার ১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, নতুন করে তাঁরা পর্যটন শিল্পের জন্য ইনসেন্টিভ স্কিম চালু করছেন। শীঘ্রই তা ঘোষণা করা হবে। মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণায় খুশি শিল্পমহল। তবে তাদের আক্ষেপ, শিল্পের পরিস্থিতি যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতে কতজন এই ঋণ নিতে পারবেন ও সরকারি সুবিধা পাবেন, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন চিহ্নের মুখে।
কেন তাঁদের সেই আক্ষেপ?
ট্রাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের সাধারণ সম্পাদক নীলাঞ্জন বসু বলেন,আমাদের কাছে আশার খবর একটাই। তা হল রাজ্যে ক্রমশ কমছে করোনা সংক্রমণ। করোনার কারণে মৃত্যুও এখন তলানিতে এসে ঠেকেছে। কিন্তু তবুও আমাদের মনে হচ্ছে পুজোর আগে সম্পূর্ণভাবে চাঙ্গা হবে না পর্যটন শিল্প। সাধারণ মানুষ যখন বুঝতে পারবেন পরিস্থিতি একেবারে স্বাভাবিক, তখনই তাঁরা দূরে কোথাও বেড়াতে যাবার পরিকল্পনা করবেন। রাজ্য সরকার পর্যটন সংক্রান্ত যে স্কিম এনেছে, তা অত্যন্ত আকর্ষণীয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বহু মানুষ স্কিমের সুবিধা নেওয়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তেন। কিন্তু আমাদের মনে হচ্ছে নতুন করে ঋণ নেওয়ার মতো পরিস্থিতি অনেকেরই নেই। বহু ব্যক্তি আছেন যারা বিভিন্ন হোটেল লিজ নিয়েছেন এবং লিজের টাকা পেমেন্ট করেছেন বছরের গোড়ায়। অথচ সারা বছর কোনও পর্যটক আসেননি। ফলে বিরাট অঙ্কের লোকসান মেনে নিতে হয়েছে তাঁদের। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ, সুন্দরবনে খোঁজ নিয়ে দেখেছি, বহু ট্রলারে এবছর আলকাতরা লাগানো হয়নি, শুধু পর্যটক না-থাকার কারণে। অর্থাৎ টাকা নেই। এটি একটি উদাহরণ মাত্র। বহু ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি এমনই। এই অবস্থায় নতুন করে ঋণের ভার বিশেষ কেউ নেবেন না বলেই আমার মনে হয়।
অ্যাসোসিয়েশন অব টুর সার্ভিস প্রোভাইডার্স অব বেঙ্গলের সহ-সভাপতি সমর ঘোষও প্রায় একই মতামত দিয়েছেন। তিনি বলেন, রাজ্য সরকার পর্যটনের জন্য যে প্রকল্প ঘোষণা করেছে, তা অত্যন্ত সাধুবাদযোগ্য। রাজ্য সরকার পর্যটন শিল্প নিয়ে ভাবনা চিন্তা করছে, এটাই অনেক বড় বিষয়। কিন্তু, বাস্তব ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা এখনও রয়ে গিয়েছে। পর্যটনশিল্প এখনও গতি পায়নি। বহু সংস্থার ঝাঁপ এখনও বন্ধ। ২৫ ডিসেম্বর বা ১ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে যে ব্যবসা পর্যটন শিল্পে হয়েছিল, তার রেশ এখন তেমন নেই। ফলে ঋণ পেলেও, তাকে এই শিল্প কতটা কাজে লাগাতে পারবে সে বিষয়ে সন্দেহ আছে। আমাদের আশা, রাজ্য সরকার পর্যটন শিল্পকে চাঙ্গা করতে রোড শো বা তেমন কোনও উদ্যোগ নেবে। সরকার যদি পর্যটন শিল্প সংগঠন বা সংস্থাগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসে ও আলোচনা করে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করে, তাহলে অনেকটাই উপকার হতে পারে। তবে এই শিল্প আরও একটু চাঙ্গা হলে রাজ্য সরকারের বাজেটে ঘোষিত স্কিম সুফল দেবে বলেই আমাদের আশা। কনগ্লোমারেশন অব বেঙ্গল হোটেল ওনার্স-এর প্রেসিডেন্ট তারাপদ ভৌমিক বলেন, করোনাকালে কেন্দ্রীয় সরকার ক্ষুব্ধ ছোট মাঝারি শিল্পের জন্য একটি স্কিম ঘোষণা করেছিল। যে-সংস্থা ইতিমধ্যেই ঋণ নিয়েছে, সেই ঋণের ২০ শতাংশ ফের তারা ঋণ নিতে পারবে এবং তার সুদ দিতে হবে না। কেন্দ্রের এই ঋণ প্রকল্পে সাড়া পাওয়া যায়নি। তাই পর্যটনের ক্ষেত্রেও নতুন ঋণ প্রকল্প কেউ নেবে না বলেই মনে হয়।