ভিডিও বানাতে ব্রিজ থেকে গঙ্গায় ঝাঁপ, নিখোঁজ যুবক
বিদ্যাসাগর সেতু। সেতুর রেলিং ধরে ঝুলছেন তিনজন তরুণ। রেলিংয়ের ঠিক এপারে দাঁড়িয়ে আরও পাঁচজন। তাঁদের মধ্যে দু’জনের হাতে চালু রয়েছে মোবাইলের ক্যামেরা। লেন্সের ফ্রেমে তিন ‘সাহসী’ বন্ধু। তাঁদের সাহসিকতার ভিডিও চিত্র বন্দি হচ্ছে মোবাইলে। এক বন্ধু তো আবার রীতিমতো ভাষ্যকারের ভূমিকায়। তিনি বলে চলেছেন, ‘খতরো কি খিলাড়ি কো স্বাগত হ্যায়’। তিন বন্ধুকে দ্বিতীয় হুগলি সেতু থেকে গঙ্গায় ঝাঁপ দেওয়ার জন্য সাহস জোগাচ্ছেন বাকি বন্ধুরা। এমন ঝুঁকির ডাইভিংয়ের প্রশিক্ষণ তাঁদের ছিল কি না, কেউ জানে না। আচমকা গঙ্গায় ঝাঁপ দেন একজন। সেকেন্ডের ব্যবধানে আরও একজন। তৃতীয়জন ঝাঁপ দিতে গিয়েও শেষ মুহূর্তে থেমে যান। গঙ্গায় ঝাঁপ দেওয়ার পর একজন ভেসে ওঠেন। কিন্তু অন্যজন? তাঁর আর খোঁজ মেলেনি। পুলিসের নজর এড়িয়ে রবিবার দুপুরে শর্ট ভিডিও প্ল্যাটফর্মের জন্য শ্যুটিং করছিলেন ওই আট যুবা। যিনি তলিয়ে গিয়েছেন, তাঁর নাম মহম্মদ জাকির সর্দার। তাঁর খোঁজে সোমবার সারাদিন তল্লাশি চালান ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপের (ডিএমজি) সদস্যরা। ওই যুবকদের জেরা শুরু করেছে হেস্টিংস থানার পুলিস।
স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, দ্বিতীয় হুগলি সেতুতে ভিডিও করতে আসা তরুণরা সকলেই তিলজলার জি জে খান রোডের বাসিন্দা। থাকেন ঝুপড়িতে। তাঁরা সকলেই ছোটখাট কাজকর্ম করেন। শ্যুটিংয়ে করতে যাওয়া রাকিবের কথায়, রাজা ওরফে তাস্তিগির আলম ঝাঁপ দিলেও সাঁতার কেটে জল থেকে উঠে এসেছে। রাজার ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন রোমহর্ষক ঘটনার ভিডিও আপলোড করা হয়। বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি চীনা অ্যাপে একসময়ে রাজা নিয়মিত ভিডিও আপলোড করতেন। সেখান থেকেই তাঁর হাতেখড়ি। দু’বছর আগে হাওড়া ব্রিজ থেকেও তিনি ঝাঁপ দিয়েছিলেন। সেই ভিডিও খুব জনপ্রিয় হয়। সেবার তিনি ঝাঁপ দেওয়ার পর ভেসে উঠেছিলেন কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে। এরপর তিনি পরিকল্পনা করেন এমন একটি ভিডিও বানাবেন, যেটি প্রচুর লাইক ও শেয়ার হবে।
রাকিবের কথায়, ‘রাজাই এই ঝুঁকিপূর্ণ ভিডিও তৈরির জন্য বাকি বন্ধুদের ‘মোটিভেট’ করেছিল। প্রথমে কেউ রাজি হতে চায়নি। শেষে অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে রাজি করানো হয় আটজনকে।’ রবিবার সকাল ১১টা নাগাদ তাঁরা বাবুঘাটে যাচ্ছি বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর একটি মিনিডোরে করে সরাসরি আসেন দ্বিতীয় হুগলি সেতুতে। ব্রিজের যে অংশ কলকাতা পুলিসের এলাকায় পড়ছে, সেখানে গাড়ি রেখে তাঁরা এগিয়ে যান রেলিংয়ের দিকে। রাজা, জাকির ও আরেক বন্ধু রেলিংয়ের ওপারে যান নীচে ঝাঁপ দেওয়ার জন্য। ঘটনার পর তড়িঘড়ি বাবুঘাট এলাকায় এসে তাঁরা খোঁজাখুঁজি করেন। কিন্তু জাকিরের খোঁজ পাননি তাঁরা। ঘটনার কথা জানাজানি হতেই খবর যায় পুলিসের কাছে। রাকিব, রাজা সহ সবাইকে হেস্টিংস থানায় ডাকা হয়। তাঁরা জানান, ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ভিডিও শ্যুটিং চলছিল। তা করতে গিয়েই জাকির তলিয়ে গিয়েছেন গঙ্গায়। জাকিরের মা থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার ভিত্তিতে তদন্ত করছে পুলিস।