স্বাস্থ্যসাথী: দর-তালিকা পরিমার্জন করল রাজ্য
বেসরকারি হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমে স্বাস্থ্যসাথীর পরিষেবা নিশ্চিত করতে সরকারি চিকিৎসার দর বাড়াল রাজ্য সরকার। চিকিৎসার ৩৩টি প্রচলিত প্যাকেজে দর বাড়ানো হয়েছে গড়ে ১৫-২০%।
রাজ্যের প্রত্যেক মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধা উন্মুক্ত হওয়ার পরে বেসরকারি নার্সিংহোম এবং হাসপাতালগুলিতে সেই পরিষেবা নিশ্চিত করাই সরকারের প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল। শুরুতেই রোগী না ফেরাতে প্রত্যেক কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছিল সরকার। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমগুলির কর্তৃপক্ষ সরকারকে জানিয়ে দেয়, চিকিৎসার দর পরিমার্জন করা না হলে তাঁদের পক্ষে পরিষেবা নিশ্চিত করা মুশকিল।
তার পরেই দর-তালিকা পরিমার্জন করার কাজ শুরু করে রাজ্য। সেই সংক্রান্ত একটি কমিটিও গঠন করা হয়। বেসরকারি হাসপাতাল এবং নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট কমিটির সুপারিশ প্রকাশ করল সরকার। সংশোধিত সেই দর-তালিকা অনুযায়ী, সাধারণ চিকিৎসার সরকারি দর ২০% বাড়ানো হয়েছে। হৃদযন্ত্রের চিকিৎসা বাবদ দর বেড়েছে ২৫%। সাধারণ অস্ত্রোপচারের সরকারি দর ১৫-২০% বাড়ানো হয়েছে। খুব প্রচলিত ১০৫টি প্যাকেজের মধ্যে ৬০% এই পরিমার্জনের আওতায় এসেছে। আগামী দিনে হাসপাতাল-নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা চালানো হবে বলেও জানিয়েছে রাজ্য।
নবান্ন সূত্রের খবর, এই দর পরিমার্জনের পরে সার্বিক ভাবে ৭-১০% বা ২০০ কোটি টাকা খরচ বাড়বে সরকারের। রাজ্যের দাবি, এখনও পর্যন্ত ২ কোটির বেশি পরিবার স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় এসেছে। গত ডিসেম্বর থেকে ৭৬ লক্ষ নতুন পরিবার প্রকল্পের আওতায় এসেছে। এখন দৈনিক প্রায় ৩৭০০ মানুষ পরিষেবা নিচ্ছেন। প্রতিদিন সরকারের খরচ হচ্ছে ৭ কোটি টাকা। এখনও পর্যন্ত ৬৭ লক্ষ উপভোক্তাকে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড দেওয়া হয়েছে। আরও প্রায় ৮০ লক্ষ মানুষ এর আওতায় আসবেন। স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় এসেছে ১৫৩৭টি বেসরকারি হাসপাতাল। তার মধ্যে নতুন অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ৪২৫টি। সরকারি এবং বেসরকারি মিলিয়ে মোট শয্যা রয়েছে ১ লক্ষ ২২ হাজারের মতো।
মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার বলেন, ‘‘সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, হাসপাতাল-নার্সিংহোমের পরিচালকদের সঙ্গে পরামর্শ করে স্বাস্থ্যসাথীর বিভিন্ন প্যাকেজ-দর পরিমার্জন করা হবে। প্রত্যেকের প্রতি আবেদন ছিল, স্বাস্থ্যসাথীর পরিষেবা দিন। রোগী ফেরাবেন না। তাঁদের দাবি ছিল, চিকিৎসা-দর যেন বাণিজ্যসম্মত হয়, ক্ষতিকারক না হয়। উভয়পক্ষের আলোচনার পরে কিছু প্যাকেজে কিছু বাড়ানো গিয়েছে। ডিসচার্জ এবং অ্যাপ্রুভালের পদ্ধতি দ্রুততর করবে সরকার।’’
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আইসিইউ পরিষেবার গ্রেড-এ এবং গ্রেড-বি-এর ক্ষেত্রে আগে দর ছিল যথাক্রমে ৩০০০ এবং ১৫০০ টাকা। তা বেড়ে হয়েছে যথাক্রমে ৩৩০০ এবং ১৮০০ টাকা। হৃদ্রোগের ‘সিটিভিএস’-এ এখন সরকারি দর রয়েছে ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত। সেই দর ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এত দিন জেনারেল সার্জারির বিভিন্ন বিভাগে সরকারি দর ছিল ১৪ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা। বেড়ে হল ১৫ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৩৫ হাজার টাকা। মুখ্যসচিব বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যসাথীর জন্য বার্ষিক আড়াই থেকে তিন হাজার কোটি টাকা কোষাগার থেকে খরচ হবে।’’
বেসরকারি হাসপাতালগুলির সংগঠনের পূর্ব ভারতের সভাপতি রূপক বড়ুয়া এ দিন বলেন, ‘‘সরকারের এই সিদ্ধান্তে আমরা প্রাথমিক ভাবে খুশি। সমস্যা শুধু আইসিইউ-আইসিসিইউ-আইটিইউ চার্জ নিয়ে। সেটি ৩ হাজার থেকে ৩৩০০ টাকা করা হয়েছে। অথচ, এক একদিন সেখানে খরচ হয় ২০ হাজার টাকারও বেশি। এটা আমরা সরকারকে জানিয়েছি। এটা আবার বিবেচনা করে আমাদের জানানো হবে বলে জানানো হয়েছে।’’