দক্ষিণবঙ্গে বিপুল বিনিয়োগের সম্ভাবনা, দিশা দেখালেন অমিত মিত্র
দক্ষিণবঙ্গের ব্যবসায়ী ও চেম্বার অব কমার্সের সঙ্গে বৈঠকে এলাকার জন্য বিপুল শিল্প সম্ভাবনার কথা তুলে ধরলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র (Amit Mitra)। বুধবার দুর্গাপুরে সাউথ বেঙ্গল বিজনেস কনক্লেভ অ্যান্ড সিনার্জি সাউথ বেঙ্গলের অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল মাধ্যমে অর্থমন্ত্রী জানান, পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে শিল্পতালুকের নাম মুখ্যমন্ত্রী দিয়েছেন ‘জঙ্গল সুন্দরী, কর্মনগরী’। ২৪৮৩ একর বিশাল এলাকার পরিকাঠামো উন্নয়নেই রাজ্য সরকার খরচ করতে চলেছে ১১৪৮কোটি টাকা। রাস্তা, বিদ্যুৎ, জল ও শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় সব পরিষেবাই রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর এই মাস্টারপ্ল্যানে। অর্থমন্ত্রীর আশা, শুধু এখানেই প্রায় দেড় লক্ষ কর্মসংস্থান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি বাঁকুড়া জেলার বড়জোড়া শিল্পাতালুক সম্প্রসারণের কথা উল্লেখ করেন মন্ত্রী। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া সহ বিভিন্ন জেলায় একাধিক বড় সিমেন্ট কারখানা গড়ে ওঠার কথাও জানান মন্ত্রী। তবে শুধু সম্ভাবনা নয়, ব্যবসায়ীদের সমস্যা নিয়েও যে রাজ্য সরকারের নজর রয়েছে, এদিন তাও বুঝিয়ে দেন অর্থমন্ত্রী।
লৌহ ইস্পাত শিল্পের কাঁচামাল লৌহ আকরিক পেতে সমস্যায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। তা নিয়ে কেন্দ্রের ভূমিকার সমালোচনা করে রাজ্য সরকার সর্বোচ্চ স্তরে বিষয়টি তুলবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন। পাশাপাশি করোনাকালে দেশের তুলনায় রাজ্যের জিডিপি গ্রোথ অনেক ভালো থাকার কৃতিত্ব ব্যবসায়ীদের দেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতেও দক্ষিণবঙ্গে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এটা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। রাজ্য শিল্প উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান রাজীব সিনহা বলেন, আশা করা যায় ২২ মাসের মধ্যেই দেউচা-পাঁচামি কোল ব্লক থেকে কয়লা উত্তোলন সম্ভব হবে। বিধানসভা ভোটের আগে শেষ বাজেটে বিপুল শিল্প সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তা নিয়ে বিরোধীরা সরব হলেও রাজ্য সরকার যে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করেই একথা বলেছেন, এদিনের বৈঠকে তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। কেন্দ্রের বঞ্চনার কথা উল্লেখ করে কীভাবে পুরুলিয়াকে সাজিয়ে তোলার কাজ হচ্ছে, তা ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, রঘুনাথপুরে ২৬৬৬ একর জমি ফ্রেট করিডর করার জন্য কেন্দ্রকে দেওয়া হয়েছিল। সেই সময় উত্তরাখণ্ডও এই ধরনের জমি দেয়। কিন্তু আমাদের জমি নিয়ে কেন্দ্র কোনও উচ্চবাচ্য না করায় মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেন, রাজ্য সরকারই এনিয়ে অগ্রসর হবে। পুরুলিয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা মাথায় রেখে পরিবেশ বান্ধব একটি আধুনিক শিল্পতালুক, নগরী গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) যার নাম দিয়েছেন ‘জঙ্গল সুন্দরী কর্মনগরী’। মাস্টারপ্ল্যানে প্রতিটি জায়গা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। কোথাও শিল্প (Industry) গড়ে উঠবে, কোথাও কর্মাশিয়াল কমপ্লেক্স হবে, রেসিডেন্সিয়াল কমপ্লেক্স, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। এই এলাকার চিত্রই বদলে যাবে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সিমেন্ট প্ল্যান্ট, সিরামিক্স এগিয়ে এসেছে। সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান করে মন্ত্রী বলেন, পরিকাঠামো উন্নয়নে বাজেটে এক হাজার ১৫০ কোটি বরাদ্দ করা হয়েছে, এটা কম বিষয়! এরপরই দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য জেলার শিল্পাতালুকের তথ্য তুলে ধরেন মন্ত্রী। রাজ্যে প্রায় ৩০০ ক্ষুদ্র ও মাঝারি লৌহ ইস্পাত শিল্প রয়েছে। মূলত ওড়িশা থেকে কাঁচামাল লৌহ আকরিক এনেই তা চলে। এবার সেই কাঁচামালই পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর কাঁচামালের উপর রপ্তানি শুল্ক না বাড়িয়ে স্টিলের উপর আমদানি শুল্ক কমিয়ে আরও প্রতিযোগিতা বাড়িয়ে তুলেছে কেন্দ্র। বিষয়টি নিয়ে যে মুখ্যমন্ত্রী উদ্বিগ্ন তা উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী। এদিন দক্ষিণবঙ্গের ব্যবসায়ীদের প্রশংসা করে মন্ত্রী বলেন, এই অবস্থাতেও এখানে প্রায় ২০১০কোটি টাকার নতুন বিনিয়োগ হয়েছে। নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার।