গুলাম নবী আজাদের বিকল্প কে? চাপে কংগ্রেস
দলের অভ্যন্তরে ‘বিদ্রোহী নেতা’-র তকমা পাওয়া বর্ষীয়ান সাংসদ গুলাম নবি আজাদের (Ghulam Nabi Azad) বিকল্প খুঁজতে গিয়ে নাজেহাল কংগ্রেস হাইকম্যান্ড৷ দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতার পদে আসীন আজাদের ‘ফেয়ারওয়েল’ সম্পন্ন হয়ে গেল৷ এর পরে দীর্ঘদিন এই পদ খালি রাখা সম্ভব নয়৷
উপনেতার পদে আসীন অপর বর্ষীয়ান সাংসদ ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আনন্দ শর্মাকে বিরোধী দলনেতার দায়িত্ব সামলানোর কথা বলা যেতে পারে, কিন্তু সমস্যা হল আজাদের মতো তিনিও দলের অভ্যন্তরে গান্ধী পরিবারের নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করা ‘বিক্ষুদ্ধ’ গোষ্ঠীর সদস্য৷ পুরো পরিস্থিতি বিচার করে মল্লিকার্জুন খাড়গের হাতে বিরোধী দলনেতার পদ সঁপা হবে কি না, তা নিয়েই কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত কংগ্রেস হাইকম্যান্ড, জানা গিয়েছে কংগ্রেস (Congress) সূত্রে৷
প্রশ্নটা হল, আজাদের বিকল্প খুঁজতে গিয়ে কেন কংগ্রেস শিবিরের এই দ্বিধা? প্রথমেই থাকছে আজাদের গ্রহণযোগ্যতা৷ রাজ্যসভায় বিরোধী দলের নেতা হিসেবে নিজেকে যে উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন তিনি, তাতে শুধু বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি নয়, তাঁকে সম্মান দেখায় সরকারপক্ষও৷ সরকারের তাবড় মন্ত্রী তাকে ‘আজাদ সাব’ বলে সম্বোধন করেন, প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে তিনি ‘গুলাম নবি জি’৷ কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বিদ্রোহের অন্যতম এই নায়ক হিন্দি, উর্দু এবং ইংরেজিতে সাবলীল৷
সংসদীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা আজাদের চার দশকের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, পাণ্ডিত্য এবং বাগ্মিতা তাঁর চ্যালেঞ্জার মল্লিকার্জুন খাড়গের কাছে বিরাট সমস্যার৷ খাড়গের সংসদীয় রাজনীতির অভিজ্ঞতা বিরাট, কিন্ত্ত তাঁর প্রধান সমস্যা হল হিন্দি, তাতে তিনি স্বাচ্ছন্দ্য নন৷
রাজ্যসভায় প্রথমবার মনোনীত হওয়ার পরে খাড়গে দিন কয়েক আগে তাঁর প্রথম ভাষণে অনেক চেষ্টা করছিলেন হিন্দিতে বক্তৃতা দেওয়ার, কিন্তু শেষে সমস্যা বেড়ে চলায় ইংরেজিতেই বেশির ভাগ কথা বলেন৷ গান্ধী পরিবারের নেতৃত্বের প্রতি আস্থাবান প্রবীণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব খাড়গেকে বিরোধী দলনেতার পদে বসানো হলে ভাষাগত অন্তরায় বিরাট সমস্যা তৈরি করতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন৷ একই রকমের সমস্যা হতে পারে পি চিদম্বরমের ক্ষেত্রেও।
এর পাশাপাশি আরও একটি চিন্তা রয়েছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের কাছে৷ আজাদকে পুনরায় রাজ্যসভায় ফিরিয়ে না আনা হলে বিক্ষুদ্ধ গোষ্ঠী নতুন ইস্যু পেয়ে যেতে পারে, যেখানে দলের আস্থাভাজন দীর্ঘদিনের লড়াকু নেতার যাবতীয় অবদানকে অস্বীকার করার অভিযোগ উঠতে পারে৷ কয়েক মাসের মধ্যেই পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের পর্ব মিটলে দলের সাংগঠনিক নির্বাচন আয়োজিত হওয়ার কথা৷ এই পরিস্থিতিতে দলের অভ্যন্তরে সক্রিয় ‘বিক্ষুদ্ধ ফ্রন্ট’-কে নতুন করে ইন্ধন যোগানোর মত কোনও ঝুঁকি কংগ্রেস নেবে কি না, এটা বড় প্রশ্ন৷
জম্মু-কাশ্মীর ভেঙে দুভাগ হয়ে যাওয়ার পরে ভোট না হওয়া কাশ্মীর থেকে রাজ্যসভায় আসার কোনও সুযোগ আজাদের নেই৷ তবে অন্য রাজ্য থেকে রাজ্যসভায় জিতিয়ে আনার সুযোগ রয়েছে। এই সূত্রেই কেরালার কথা ভাবা হতে পারে৷ এই পরিস্থিতিতে সনিয়া-রাহুল-প্রিয়াঙ্কা- এই ত্রয়ী কী সিন্ধান্ত গ্রহণ করেন সে দিকেই এখন তাকিয়ে শতাব্দী প্রাচীন দল৷