অজয় মুখোপাধ্যায়ের পর এই প্রথম কোনও মুখ্যমন্ত্রী পূর্ব মেদিনীপুর থেকে লড়বেন
দীর্ঘ ৫০ বছরের ব্যবধান। পদ্মবিভূষণ অজয় মুখোপাধ্যায়ের(Ajoy Mukherjee) পর দ্বিতীয় কোনও মুখ্যমন্ত্রী পূর্ব মেদিনীপুরের(Purba Medinipur) মাটি থেকে বিধানসভায় লড়াই করতে চলেছেন। গত ১৮ জানুয়ারি স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) নন্দীগ্রামে (Nandigram) জনসভা করে সেখান থেকেই প্রার্থী হওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। তার আগে তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের নেতা স্বাধীনতা সংগ্রামী অজয় মুখোপাধ্যায় তমলুক কেন্দ্র থেকে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি ১৯৫১ থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত টানা সাতবার নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তিনবার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। ১৯৭১ সালে শেষবারের মতো অজয়বাবু জয়ী হয়েছিলেন। ঠিক পাঁচ দশক পর ২০২১ সাল। আবার পূর্ব মেদিনীপুরের মাটি থেকে বিধানসভা ভোটে লড়াই করবেন একজন মুখ্যমন্ত্রী। তাই মমতার নন্দীগ্রামে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণায় জেলার রাজনৈতিক উত্তাপ ক্রমশ চড়ছে। আগামী বিধানসভা ভোটে জমি আন্দোলনে ইতিহাস সৃষ্টিকারী নন্দীগ্রামের দিকে সকলের নজর থাকবে। নন্দীগ্রামের বিধায়ক তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তাঁর দল বদলে বিজেপি যাতে ফায়দা তুলতে না পারে, সেকথা মাথায় রেখে সম্ভবত নেত্রী নন্দীগ্রাম থেকে লড়াই করবেন। তাঁর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছেন নন্দীগ্রামের সাধারণ মানুষজন।
হলদি নদীতে মাছের মিন ধরে সংসার চালান নন্দীগ্রাম-১ব্লকের সোনাচূড়ার সিংহবাহিনী পাড়ার গুরুপদ দাস। তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী নন্দীগ্রাম থেকে প্রার্থী হচ্ছেন, এটাই আমাদের অনেক বড় পাওনা। একই বক্তব্য ওসমানচকের ওঝাপাড়ার সুকুমার ওঝার। তিনি বলেন, এটা আমাদের কাছে গর্বের বিষয়। গোকুলনগর গ্রামের বিজলিপাড়ার বাসিন্দা সমীন্দ্র বিজলি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী এখান থেকে নির্বাচিত হলে অনেক উন্নয়ন হবে। নন্দীগ্রামের মানুষ হিসেবে আমরা গর্বিত।
সাধারণ মানুষজনের পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে জমি আন্দোলনে নিহত, জখম ও নিখোঁজদের পরিবারও। ২০০৭ সালে ১৪ মার্চ ভাঙাবেড়ায় আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে নিখোঁজ হন সুব্রত সামন্ত। জমি আন্দোলনের শুরু থেকেই তৃণমূলনেত্রীর প্রতি আস্থা রেখেছেন সুব্রতর স্ত্রী শ্রীমতীদেবী। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী নন্দীগ্রাম থেকে প্রার্থী হচ্ছেন। এতে আমরা ভীষণ খুশি। তাঁকে এখান থেকে নির্বাচিত করে তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী করতে চাই। ২০০৭ সালে ১৪ মার্চ পুলিসের গুলিতে নিহত ক্লাস নাইনের ছাত্র ইমাদুল খানের বাবা আব্দুল দাইয়ান খান বলেন, এই মুহূর্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকল্প কেউ নেই। কেউ তৃণমূল ছেড়ে অন্য দলে গেলেও আমরা আদর্শচ্যুত হতে পারব না। দিদির সঙ্গে ছিলাম, আছি এবং থাকব। নন্দীগ্রাম ও খেজুরিতে জমি আন্দোলনে শহিদ পরিবারের লোকজনকে নিয়ে যে কমিটি রয়েছে, আমি তার সভাপতি। সিংহভাগ শহিদ পরিবার দিদির সঙ্গেই আছে। মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী হওয়ার কথা ঘোষণা করতেই রাজ্যস্তরের নেতারা নন্দীগ্রামে আসা শুরু করেছেন। দিনকয়েক আগে রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি নন্দীগ্রামে এসে দু’টি ব্লকের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে গিয়েছেন। দেওয়াল লিখনের কাজ চলছে জোরকদমে। ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার আগেই নন্দীগ্রামে প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েছে শাসক দল। তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেন, দেশের সমস্ত মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ট হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি পূর্ব মেদিনীপুরের প্রতিনিধি হয়ে মুখ্যমন্ত্রিত্বের হ্যাট্রিক করবেন। আগামী দিনে এটাই আমাদের অহঙ্কার হয়ে দাঁড়াবে।