রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

হরিধ্বনির বদলে জয় শ্রীরাম স্লোগান কেন? মতুয়াদের রোষে অমিত শাহ

February 12, 2021 | 2 min read

কথা ছিল ঠাকুরনগরে এসে প্রথমে হরি-গুরুচাঁদ মন্দিরে পুজো দিয়ে সভায় আসবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কিন্তু প্রায় দেড় ঘণ্টা দেরিতে পৌঁছে মন্দিরে না গিয়ে সোজা সভামঞ্চে পৌঁছে গেলেন তিনি। বিকেল ৫.১৮ মিনিটে সভা শেষ করে মতুয়াদের (Matua) আরাধ্য দেবতার মন্দিরে গেলেও, মিনিট দুয়েকের বেশি থাকেননি অমিত (Amit Shah)। উল্টে মতুয়াধামের সভামঞ্চ থেকে হরিধ্বনি না দিয়ে জয় শ্রীরাম স্লোগান তুলে বিতর্ক বাড়ালেন অমিত। বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের দাবি ছিল, নাগরিকত্ব নিয়ে অমিত শাহের বার্তা শুনতে এ দিন লাখ দুয়েক লোক আসবেন মাঠে। কিন্তু পুলিশ ও স্থানীয় বিজেপি (BJP)নেতাদের হিসেবে সভায় হাজার ২৫-এর বেশি লোক হয়নি। প্রত্যাশিত উচ্ছ্বাসও চোখে পড়েনি উপস্থিত মতুয়াদের মধ্যে।

মন্দিরে পুজোর পর মতুয়া পাগল, গোঁসাই, দলপতিদের সঙ্গেও দেখা করার কথা ছিল অমিতের। সে জন্য ঠাকুর মন্দিরের পুরোহিত হরিবর সরকার, গোঁসাই পরিষদের সম্পাদক বিপদভঞ্জন বিশ্বাসরা হাজির ছিলেন দুপুর থেকে। কিন্তু তাঁদের আশা পূরণ হয়নি। সভা শেষে দিলীপ ঘোষ, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারী এবং শান্তনুর সঙ্গে মন্দিরে ঢোকেন অমিত। মিনিট দুয়েকের মধ্যেই পুজো দিয়ে বেরিয়ে যান তিনি।

মাঠে লোক কম হওয়া নিয়ে শান্তনু বলেন, ‘গুনে গুনে কত লোক হয়েছে সেটা তো আর বলতে পারব না। তবে মাঠ উপচে পড়েছে।’ কিন্তু বাস্তব বলছে, গত ৩০ জানুয়ারি অমিত শাহের সভা নিয়ে মতুয়াদের মধ্যে উচ্ছ্বাসের ছিটেফোঁটাও ছিল না এ দিন। উল্টে অমিত শাহ বক্তব্য শুরু করতেই অনেকে মাঠ ছেড়ে বাড়ির দিকে পা বাড়িয়েছেন। কোচবিহার থেকে আসা কালীপদ বিশ্বাস বলেন, ‘ভেবেছিলাম নাগরিকত্ব নিয়ে দিনক্ষণের কথা জানতে পারব। কিন্তু এ দিন উনি যা বললেন তাতে কোনও দিশা পেলাম না।’ বর্ধমানের বোধদীপ্ত বিশ্বাস এবং মহেশ সরকার বলেন, ‘কবে থেকে আমরা নাগরিকত্ব পাব, তার কথা বললে ভালো হত। এখন ফের অপেক্ষাতেই থাকতে হবে আমাদের।’ ডানকুনির গোঁসাই জীবন রায় বলেন, ‘সভায় এসে আশা পূরণ হল না। আগে নাগরিকত্ব দেবে, তারপর মতুয়ারা মাথায় তুলবে বিজেপিকে।’ গোবরডাঙার সুবল সরকার বলেন, ‘এখন কোভিড চলছে। তাই দিনক্ষণের কথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলতে পারতেন না।’

এ দিন ঠাকুরবাড়ি গিয়ে দেখা গেল, মূল মন্দির, কামনা সাগর, মঞ্চে যাওয়ার পথে বাঁশের ব্যারিকেড এবং পুলিশের গার্ডরেল দিয়ে সাধারণের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। প্রয়াত বড়মার ঘরের পাশেও ছিল ব্যারিকেড। মন্দির লাগোয়া রাস্তা থেকে মমতাবালা ঠাকুরের বাসভবনে ঢোকার পথেও বিজেপির স্বেচ্ছাসেবকরা দড়ি দিয়ে গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করেন। সকাল থেকে সারাদিন বাড়িতেই ছিলেন মমতাবালা। সেলাই মেশিনে মেয়েদের পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত মমতাবালা মাইকে মতুয়া নেতৃত্বের বক্তব্যের দিকে নজর রেখেছিলেন। সভার শেষে তৃণমূল প্রভাবিত অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের সংঘাধিপতি তথা প্রাক্তন সাংসদ মমতাবালা বলেন, ‘অমিত শাহ সভার আগে মন্দিরে পুজো দিতে আসতে পারলেন না। এলেন না বড়মার ঘরেও। মতুয়াদের সঙ্গেও কথা বলেননি। সভামঞ্চ থেকে জয় শ্রীরামের স্লোগান তুললেন, অথচ ঠাকুরবাড়িতে এসে মতুয়াদের হরিবোল ধ্বনি দিলেন না। এই অপমানের জবাব মতুয়ারা বিধানসভা নির্বাচনেই দেবেন।’

তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘মতুয়া সম্প্রদায়ের সঙ্গে প্রবঞ্চনা করা ঠিক হয়নি। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে ভুল বুঝিয়ে মতুয়াদের ভোট পেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু একুশের নির্বাচনে সেটা হবে না।’

অমিত শাহের পাল্টা সভার জন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছেন জেলা তৃণমূল (Trinamool) নেতৃত্ব। শুক্রবার গাইঘাটার পঞ্চায়েত সমিতির কনফারেন্স রুমে স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকের পরেই ঠাকুরনগরে সভা করে অমিত শাহের বক্তব্যের জবাব দেবে তৃণমূল।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Amit shah, #Matua Community

আরো দেখুন