বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

একাধিকবার কারাবন্দী হয়েছিলেন সুভাষ মুখোপাধ্যায়

February 12, 2021 | 2 min read

সারা পৃথিবীর ইতিহাসে চল্লিশের দশক ভাঙাগড়ার সময় হিসেবে চিহ্নিত। তখন শুরু হয়ে গেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, প্রবল প্রতাপে দাঁত-নখ উঁচিয়ে এগিয়ে আসছে ফ্যাসিবাদ, যুদ্ধের শেষে তার পতনও ঘটছে। কয়েকশো বছর ধরে ইউরোপীয় শক্তিগুলির অধীনে থাকা বিভিন্ন দেশ স্বাধীনতার আলো দেখছে, যাত্রা শুরু করছে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ, আবার এই দশকেই শুরু হয়ে যাচ্ছে ভয়াবহ ঠান্ডা লড়াই। 

ভারতীয় উপমহাদেশেও এই দশক যুগ পরিবর্তনের সাক্ষী। এখানেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঢেউ এসে লেগেছিল। ১৯৪৩ সালের মন্বন্তর, ১৯৪৬-এ শুরু হওয়া একের পর এক দাঙ্গা, অন্যদিকে স্বাধীনতা আন্দোলনের চরম পর্যায় ও ১৯৪৭ সালে দেশভাগের মাধ্যমে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম – এই দশক যেন ইতিহাসের এক জলবিভাজিকা। 

উত্তাল সময়ের ছাপ পড়েছিল তখনকার সাহিত্যেও। সুভাষ মুখোপাধ্যায়, সমর সেন, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সুকান্ত ভট্টাচার্যের মতো কবিরা যুগের অস্থিরতাকে রূপ দিচ্ছিলেন তাঁদের কবিতায়। দশকের শুরুতেই ১৯৪০ সালে প্রকাশিত হয়েছিল সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘পদাতিক’। এই বইতেই যেন সমস্ত দশকের বাংলা কবিতার একটা রূপরেখা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল।  

কবি এবং রাজনীতিক সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের জন্ম হয়েছিল ১৯১৯ সালে, নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে। কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে দর্শনে অনার্স নিয়ে বিএ পাশ করেছিলেন। এর পরেও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা চালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু, সক্রিয় রাজনীতির মধ্যে জড়িয়ে পড়ায় তা আর হয়ে ওঠেনি। 

৩০-এর দশকের শুরুতে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কিশোর ছাত্রদলে যোগ দিয়েছিলেন সুভাষ। কবি সমর সেন তাঁকে পড়তে দিয়েছিলেন ‘আ হ্যান্ডবুক অফ মার্কসিজম’ নামের একটি বই, যা পড়ে তিনি মার্কসীয় সমাজচেতনায় উদ্বুদ্ধ হন। ১৯৩৯ সালে লেবার পার্টিতে যোগ দেন। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন ১৯৪২ সালে। ‘ফ্যাসিবিরোধী লেখক শিল্পী ও সংঘ’-র সাংগঠনিক কমিটিতে যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব সামলেছেন বিষ্ণু দে’র সঙ্গে। পার্টির ‘জনযুদ্ধ’ পত্রিকায় সর্বক্ষণের কর্মী হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন, সাংবাদিকতা করেছেন ‘স্বাধীনতা’ পত্রিকায়। 

১৯৪৮ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এই সময়ে পার্টির বহু কর্মীই বন্দি হয়েছিলেন কারাগারে। কবি সুভাষও তখন দু’বার কারাবরণ করেন। দমদম সেন্ট্রাল জেলে অন্যান্য রাজনৈতিক বন্দিদের সঙ্গে অনশন ধর্মঘট করেছিলেন তিনি। মুক্তি পান ১৯৫০ সালে। একটি নতুন প্রকাশনা সংস্থার সাব-এডিটরের পদে যোগ দিয়েছিলেন। তারপর সেই চাকরি ছেড়ে ‘পরিচয়’ পত্রিকা সম্পাদনার ভার নিলেন। 

১৯৫১ সালে গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। শ্রমিক আন্দোলনের কাজে স্ত্রীকে নিয়ে বজবজে কয়েক বছর ছিলেন সুভাষ মুখোপাধ্যায়। কলকাতা বন্দর অঞ্চলের শ্রমিক রাজনীতিতেও তিনি সক্রিয় ছিলেন। সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে যৌথভাবে সম্পাদনা করেছেন ‘সন্দেশ’ পত্রিকা। ১৯৬৪ সালে কমিউনিস্ট পার্টি দ্বিখণ্ডিত হল। পুরোনো পার্টিতেই থেকে যান সুভাষ। ১৯৬৭ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার ভেঙে দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। 

তখন রাজ্যজুড়ে শুরু হয় আন্দোলন। মানুষের মুখে মুখে ঘুরত সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের লাইন, “রাস্তাই একমাত্র রাস্তা”। তখন ১৪৪ ধারা অমান্য করে ১৩ দিনের জন্য কারাবন্দি হয়েছিলেন কবি সুভাষ। অবশ্য পরবর্তীকালে পার্টির সঙ্গে মতবিরোধ হতে থাকে তাঁর। ১৯৮১ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ ত্যাগ করেন তিনি। 

কাজের প্রচণ্ড চাপের মধ্যেই সুভাষ মুখোপাধ্যায় লিখে গিয়েছেন একের পর এক যুগান্তকারী কাব্যগ্রন্থ। গদ্যেও তিনি ছিলেন সাবলীল। ফিচার, রিপোর্টাজ, ভ্রমণকাহিনি, প্রবন্ধ, অনুবাদ সাহিত্য, শিশু সাহিত্য – নানা ক্ষেত্রে তিনি পারদর্শিতা দেখিয়েছিলেন। ২০০৩ সালে এই বরেণ্য কবি প্রয়াত হন। 

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#poet, #subhas mukherjee, #jail

আরো দেখুন