বামেদের ধর্মঘট প্রত্যাখ্যান করে সচল থাকলো বাংলা
রাজনীতিতে পেশিশক্তি প্রদর্শনের সবচেয়ে ধারালো অস্ত্র ধর্মঘট(Strike)। শাসক বা বিরোধী—যারাই ধর্মঘট ডাকুক না কেন, অশান্তির ভয় পান সাধারণ মানুষ(Common People)। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনেকেই বাড়ির বাইরে পা রাখেন না। ফলে নষ্ট হয় কর্মদিবস। লক্ষ লক্ষ মানুষ রোজগার হারাতে বাধ্য হন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) জমানায় বাংলার এই বন্ধ রাজনীতির পরম্পরায় যে ছেদ পড়ছে, ফের তার প্রমাণ দিল শুক্রবারের ধর্মঘট। নবান্ন অভিযান(Nabanna Abhijan) কর্মসূচিতে পুলিসের লাঠিচার্জের ঘটনার প্রতিবাদে বামেরা ১২ ঘণ্টার এই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল। তাকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছিল কংগ্রেসও। জনসাধারণকে নাকাল করতে এবং জোর করে ধর্মঘট সফল করতে দু’পক্ষই এদিন চেষ্টার খামতি রাখেনি। তাতে কিছুটা হয়রানিও হয়েছে সাধারণ মানুষের। কিন্তু দিনের শেষে জয় হয়েছে কর্মসংস্কৃতিরই। বাংলা বুঝিয়ে দিয়েছে, ধর্মঘটের রাজনীতির জুজুর তোয়াক্কা আর তারা করে না।
কলকাতায় ধর্মঘট সফল করতে সকালেই দক্ষিণ কলকাতায় আসরে নামেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। যাদবপুরে রেল অবরোধে সরাসরি নেতৃত্ব দেন তিনি। অবরুদ্ধ হয় সুকান্ত সেতু। গোটা কলকাতায় বিভিন্ন জায়গায় সাময়িকভাবে অবরোধ শুরু হয়। বেলায় বাম ও কংগ্রেস যৌথভাবে মিছিল করে এন্টালি থেকে কলেজ স্ট্রিটের দিকে যাওয়ার পথে আর এক দফা গা-জোয়ারি। এমজি রোডে ছবিঘর সিনেমার সামনে ঝান্ডা নিয়ে গুন্ডামির চেষ্টা করে কয়েকজন সমর্থক। দু’টি গাড়ির উপর হামলা হয় ও কাচ ভেঙে দেওয়া হয়। ঝটপট বন্ধ হয়ে যায় এলাকার দোকানপাট। মিছিলে তখন ছিলেন বিমান বসু, মহম্মদ সেলিম, সুজন চক্রবর্তী, আব্দুল মান্নান, প্রদীপ ভট্টাচার্যরা। পরে অবশ্য তাঁরা জানিয়েছেন বড় মিছিলের মধ্যে দু’একজন এমন কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছে, যাতে তাঁদের সায় নেই।
দু’একটি বিক্ষিপ্ত অশান্তি ছাড়া ধর্মঘটে গোটা রাজ্যেরই ছবিটা ছিল অন্য দিনের মতো। প্রচুর গাড়ি ও বাস রাস্তায় নামে। মানুষের যাতায়াতও ছিল অন্য দিনের মতোই। রাজ্যের প্রায় সর্বত্রই দোকানপাট ছিল স্বাভাবিক। দীর্ঘদিন পর স্কুলের দিকে রওনা হতে দেখা যায় পড়ুয়াদের। কলকাতা বিমানবন্দরে বিমান ওঠানামা স্বাভাবিক ছিল। কলকাতা পুলিস জানিয়েছে, জোর করে ধর্মঘট করার অভিযোগে ৯০ জন ধর্মঘটীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এদিন ধর্মঘটের জেরে শিয়ালদহ শাখায় ৩১টি লোকাল ট্রেন বাতিল করা হয় ও ৮৫টি ট্রেন অবরোধের মুখে পড়ে। হাওড়া শাখায় আটটি ট্রেন সময়ে চলতে পারেনি। তবে পাণ্ডুয়া ছাড়া হাওড়া শাখায় ধর্মঘটের প্রভাব পড়েনি। আসানসোল বাসস্ট্যান্ডের সামনে কয়েক ঘণ্টা জিটি রোড অবরোধ করেন মহিলা সমর্থকরা। সেখানে এক বাইক আরোহীকে ব্যাপক মারধর করা হয়। বহু অটো, বাসচালকদেরও হুমকি দেয় ধর্মঘটের সমর্থকরা। পূর্ব বর্ধমানে মোট ৩০ জায়গায় অবরোধ করে বামেরা। বীরভূমের মল্লারপুরে ধর্মঘটীদের সঙ্গে পুলিসের ধস্তাধস্তি পর্যন্ত হয়। মুর্শিদাবাদে ধর্মঘটের প্রভাব সবচেয়ে বেশি দেখা গিয়েছে ডোমকল মহকুমায়। তবে কোচবিহার শহর সহ গোটা জেলায় বেসরকারি বাস কম নেমেছে। পাড়ার দোকানপাট খোলা থাকলেও মার্কেট কমপ্লেক্সের ঝাঁপ বন্ধ ছিল। আলিপুরদুয়ার ডিপো থেকে বেরনো অধিকাংশ এনবিএসটিসি বাসের চালকদের দেখা যায় মাথায় হেলমেট পরতে। জলপাইগুড়ি শহরের জেলা আদালতের মূল গেট ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখায় বাম ছাত্র-যুব সংগঠন। শিলিগুড়িতে সকাল থেকেই যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল। তবে শহরের মূল রাস্তার ধারের দোকানপাটের ঝাঁপ নামানো ছিল। গৌড়বঙ্গের তিন জেলায় এদিন ধর্মঘটে বিশেষ প্রভাব পড়েনি। সিপিএমের পক্ষে মহম্মদ সেলিম অবশ্য দাবি করেছেন, শান্তিপ্রিয় মানুষ ধর্মঘট সফল করেছেন। কলকাতায় দু’চারটে গাড়িঘোড়া চললেও, তা রাজ্যের আসল চেহারা নয়। বিমান বসু বলেন, খুব একটা প্রচার হয়নি বলেই বাংলার মানুষ ধর্মঘটে সাড়া দেননি।
এদিকে বৃহস্পতিবারের ঘটনা পরিপ্রেক্ষিতে এদিন নয়াদিল্লির বঙ্গভবনে বিক্ষোভ দেখায় এসএফআই। স্লোগান দিতে দিতে সিপিএমের ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা বঙ্গভবনের ভিতরে ঢুকে পড়েন। সরকারি অতিথিশালার লাউঞ্জে সভাও শুরু হয়ে যায়। বঙ্গভবন কর্তৃপক্ষ পুলিসে খবর দিলে পুলিস এসে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে নিয়ে যায়। জেএনইউ’য়ের ছাত্র সংসদের সভানেত্রী ঐশী ঘোষ বিক্ষোভে উপস্থিত ছিলেন।