কেন্দ্রের ভুলে ডুবেছে পিএফের টাকা! স্বীকারোক্তি মন্ত্রীর
সুদের টাকা দেওয়া নিয়ে নানা টালবাহানার মধ্যেই মধ্যবিত্তকে একরাশ উদ্বেগের মধ্যে ফেলে দিল নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) সরকার। সাধারণ মানুষের প্রভিডেন্ট ফান্ডের ১ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা ডুবে গিয়েছে। সেটাই অবশেষে স্বীকার করে নিল কেন্দ্র। সংসদে লিখিত বিবৃতিতে শ্রমমন্ত্রী সন্তোষকুমার গঙ্গওয়ার জানিয়েছেন, কয়েকটি সংস্থার বন্ড কিনতে টাকা লগ্নি করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। তার মধ্যে পাঁচটি সংস্থার তরফ থেকে মোট ১ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা ফেরত আসেনি। কেন্দ্রীয় বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল, তা কার্যত স্বীকার করেছে পিএফ কর্তৃপক্ষও।
সাধারণ গ্রাহকের থেকে কেন্দ্রীয় সরকার যে টাকা পিএফ (Public Provident Fund) বাবদ আদায় করে, তা তারা বিভিন্ন সংস্থায় বিনিয়োগ করে। সেই খাতে আয়ের একটা অংশ গ্রাহকরা ফেরত পান সুদ হিসেবে। দপ্তরের কর্তারা বলছেন, এই বিপুল অঙ্কের ক্ষতির বোঝা বইতে হতে পারে সাধারণ গ্রাহককেই। কারণ বিনিয়োগ করার পর সেই টাকা উদ্ধার না হলে ‘রিটার্ন’ কমতে বাধ্য। মধ্যবিত্ত চাকরিজীবীকেই সেই দায় নিতে হবে।
কীভাবে বিনিয়োগ হয় পিএফের টাকা? এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্গানাইজেশনের কর্তারা বলছেন, সাধারণ গ্রাহকের থেকে প্রতি মাসে যে টাকা আদায় করা হয়, তার অন্তত ৪৫ শতাংশ বিনিয়োগ করতে হয় সরকারি সিকিউরিটিজ বা বন্ডে। তা ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো যায়। বিভিন্ন ব্যাঙ্কের মেয়াদি আমানতে জমা করতে হয় অন্তত ৩৫ শতাংশ টাকা। তা ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব। ‘মানি মার্কেটে’ সর্বাধিক পাঁচ শতাংশ টাকা খাটানো যায়। শেয়ার বাজারে খাটানো যায় সর্বাধিক ১৫ শতাংশ। শেয়ারে টাকা খাটানোর বিষয়ে সরকারের যুক্তি, এখানে যেহেতু রিটার্ন বা টাকা পাওয়ার সুযোগ বেশি, তাই সাধারণ গ্রাহকরা আরও বেশি আর্থিকভাবে উপকৃত হবেন। জানা গিয়েছে, এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্গানাইজেশন যে টাকা বাজারে খাটিয়েছে, তার মধ্যে পাঁচটি সংস্থার টাকা আর উদ্ধার করা যাচ্ছে না। এরই মোট মূল্য ১ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এক শিল্পপতির সংস্থাও আছে।
২০১৮-১৯ আর্থিক বছরে সাধারণ গ্রাহক পিএফে সুদ পেয়েছিলেন ৮.৬৫ শতাংশ হারে। গত আর্থিক বছর, অর্থাৎ ২০১৯-২০ অর্থবর্ষের জন্য সরকার সুদের হার কমিয়ে দেয়। তা পৌঁছয় ৮.৫ শতাংশে। সেই টাকা চলতি আর্থিক বছরের গোড়াতেই সরকারের দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা তা দেয়নি। হরেক টালবাহানার পর কেন্দ্র জানিয়ে দেয়, তারা দু’কিস্তিতে অ্যাকাউন্টে জমা করবে সুদের টাকা। প্রথম কিস্তি মিলবে দীপাবলির সময়। দ্বিতীয়টি ডিসেম্বরে। কিন্তু সেই কথাও রাখেনি তারা। কোনও টাকাই পাননি গ্রাহক। গত মাসে, অর্থাৎ জানুয়ারিতে সেই টাকা পেতে শুরু করেন গ্রাহক।
চলতি আর্থিক বছরে পিএফে সুদের হার কত হবে, তা গ্রাহক এখনও জানেন না। তা শীঘ্রই ঘোষণা হওয়ার কথা। কিন্তু কেন্দ্র সুদ আরও কমিয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর অন্যতম কারণ, প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনা। করোনা সংক্রমণের পর কর্মীদের অগ্রিম টাকা তুলে নেওয়ার যে প্রকল্প ঘোষণা করা হয়, তাতে বিপুল সাড়া মিলেছে। ফলে বিরাট অঙ্কের টাকা পিফের ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। ধাক্কা খেয়েছে বিনিয়োগ। যদি লগ্নিই না হয়, তাহলে রিটার্ন কমবে—এটাই স্বাভাবিক। আর তার প্রভাব পড়বে কর্মীদের সুদে। এই পরিস্থিতিতে যদি ১.১ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ তামাদি হয়ে যায়, তার দায়ও নিতে হবে গ্রাহককেই। দপ্তরের কর্তারা বলছেন, হয়তো এবার সুদের হারে সাধারণ গ্রাহকের মুখে হাসি ফোটাতে পারবে না কেন্দ্র।