রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

নন্দীগ্রামে মমতার ঘোষিত রেলপ্রকল্পে কোনও বরাদ্দ করেনি কেন্দ্র

February 16, 2021 | 2 min read

জমি আন্দোলনের মাটি নন্দীগ্রামকে রেল মানচিত্রে তুলে আনার জন্য প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) যাবতীয় উদ্যোগ নিলেও কেন্দ্রের বিজেপি (BJP) সরকার তাতে চূড়ান্ত অসহযোগিতা করেছে। ওই প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণ থেকে জমিদাতাদের পরিবার পিছু সাড়ে চারশো জনকে রেলে চাকরি, স্টেশনে বুকিং অফিস ও রেলকর্মীদের থাকার জন্য স্টাফ কোয়ার্টারের প্রায় ৯০শতাংশ কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পরেও থমকে গিয়েছে গোটা প্রকল্প। কেন্দ্রীয় সরকার নন্দীগ্রামে রেল প্রকল্পের জন্য কানাকড়ি বরাদ্দ করেনি। বিধানসভা ভোটের মুখে নন্দীগ্রামে রেল ইস্যুতে স্থানীয় বাসিন্দা ও জমিদাতাদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। সোমবার নন্দীগ্রাম স্টেশনে গিয়ে দেখা গেল, ছ’টি কোয়ার্টার ভবন প্রায় ৫০টি পরিবারের দখলে চলে গিয়েছে। আর স্টেশনে টাইলস বসানো বুকিং অফিস পরিণত হয়েছে খাটালে। আশপাশ এলাকার লোকজন সেখানে গোরু রাখছেন।

২০০৯ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইউপিএ সরকারের রেলমন্ত্রী থাকাকালীন নন্দীগ্রামকে রেল মানচিত্রে জায়গা দেওয়ার জন্য বাজেট ঘোষণা করেন। নন্দীগ্রাম (Nandigram) থেকে বাজকুল পর্যন্ত নতুন রেললাইন পাততে প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণও হয়। হাওড়া থেকে নন্দীগ্রাম ভায়া বাজকুল স্টেশনে ট্রেন চলাচল করার কথা ছিল। বটতলা মৌজায় স্টেশন তৈরির জন্য ওই এলাকার শেখ আমজেদের পরিবারের কাছ থেকে আট বিঘা জমি কেনা হয়েছে। পেশায় গোরু ব্যবসায়ী আমজেদের দুই বউমা আরজিনা বিবি ও আমেনা বিবি এবং অবিবাহিত মেয়ে মুরসিদা রেলে চাকরি পেয়েছেন। সোমবার আমজেদ সাহেব বলেন, ২০১২সালের পর থেকে একটি ইটও পড়েনি। কেন্দ্রের সরকার উদ্যোগী না হওয়ায় এই রেলপথ ভেস্তে যাওয়ার পথে।

নন্দীগ্রাম রেললাইনের জন্য বটতলার শেখ মুকলেসুর রহমান সাত শতক জমি দিয়েছেন। ৫০হাজার টাকার কিছু বেশি পেয়েছেন। এখনও কিছু টাকা বকেয়া আছে। তাঁর ছেলে শেখ মতিউর রহমান এবং ভাইপো শেখ আলমগীর খড়্গপুর ডিআরএম অফিসে ইন্টারভিউ দিয়ে এলেও আজও চাকরি মেলেনি। আর এক জমিদাতা শেখ মোজাম্মেলের স্ত্রী শম্পা বিবির রেলে চাকরির জন্য ফিটনেস টেস্ট হয়ে গেলেও নিয়োগপত্র পাননি।

মুকলেসুর সাহেব বলেন, ২০১২ সালের মধ্যেই সাড়ে চারশোজন জমিদাতা রেলে চাকরি পেয়েছেন। তারপর একজনও চাকরি পাননি। আরও ৬৭০ জনের চাকরি পাওয়ার কথা। বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর নন্দীগ্রামের রেলপথকে ঠান্ডাঘরে পাঠিয়ে দিয়েছে। বিধানসভা ভোটে ওরা নন্দীগ্রামে ভোট চাইছে কোন মুখে? নন্দীগ্রামের মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে বিজেপি।

নন্দীগ্রাম থেকে বাজকুল পর্যন্ত রেললাইনের জন্য প্রস্তাবিত এলাকায় জমি অধিগ্রহণ করার পাশাপাশি মাটি ফেলার কাজও শেষ হয়ে গিয়েছিল। কেন্দ্রের ইউপিএ সরকার থেকে তৃণমূল বেরিয়ে আসার পরই ওই প্রকল্প গতি হারায়। ২০১৪সালে কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর নন্দীগ্রামে রেল প্রকল্প কার্যত ‘ক্লোজড চ্যাপ্টার’ হয়ে গিয়েছে। তারপর বছর বছর রেল বাজেট হলেও নন্দীগ্রামের ওই প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়নি।

এদিন নন্দীগ্রামে নির্মীয়মাণ স্টেশনে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে স্থানীয় বাসিন্দারা নির্মাণসামগ্রী ফেলে রেখেছেন। ছ’টি স্টাফ কোয়ার্টার দখল হয়ে গিয়েছে। সেখানের আশ্রয় নেওয়া শেখ তাজমুল, ইন্তাজ শেখ প্রমুখ বলেন, গত নভেম্বর মাসে উম-পুনের সময় থেকে আমরা এখানে এসে বসবাস করছি। বিল্ডিং ফাঁকা থাকায় আমরা এখানে আছি। আমরাও চাই, নন্দীগ্রামে রেল প্রকল্প বাস্তবায়িত হোক।

নন্দীগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি তথা তৃণমূল (Trinamool) নেতা আবু তাহের বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সেইমতো কাজ অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এই প্রকল্পে কোনও উৎসাহ দেখায়নি। তবে, বিজেপির জেলা সহ সভাপতি প্রলয় পাল বলেন, বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় এলে দ্রুত রেলপ্রকল্প বাস্তবায়িত হবে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Nandigram, #Rail Project

আরো দেখুন