সিএএ নিয়ে বাজেটে আলাদা কোনও বরাদ্দই নেই!
সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট (CAA) এবং ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার (NPR)। পাঁচ রাজ্যে ভোটের ঠিক মুখেই আরও একবার মাথাচাড়া দিয়েছে এ নিয়ে চর্চা। ব্যাপকভাবে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে বিজেপি (BJP)। কিন্তু কবে শুরু হবে এই প্রক্রিয়া? ভারত সরকারেরই একের পর এক পদক্ষেপে এই ধোঁয়াশা বাড়ছে। বর্তমান অর্থবর্ষে আদৌ এই দুই প্রক্রিয়া চালু করার ইচ্ছে মোদি সরকারের আছে কি না, সে প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা। বিরোধীদের বক্তব্য, সদ্য ঘোষিত কেন্দ্রীয় বাজেটে (Budget 2021) সামগ্রিকভাবে সেন্সাস (জনগণনার) প্রক্রিয়ার জন্য যে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে, তা গত আর্থিক বছরের (২০২০-২১) তুলনায় প্রায় ৮০০ কোটি টাকা কম। শুধু তাই নয়, সেই তালিকায় পৃথকভাবে এনপিআর কিংবা সিএএ কার্যকর করার জন্য কোনও অর্থই বরাদ্দ করা হয়নি। বিগত আর্থিক বছরে সেন্সাস খাতে বরাদ্দ করা হয়েছিল ৪ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। এছাড়া অতিরিক্ত বরাদ্দ ধরে সব মিলিয়ে অঙ্কটা ছিল সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। আর এবার গত ১ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত বাজেটে সেন্সাসের জন্য রাখা হয়েছে ৩ হাজার ৪৮৮ কোটি টাকা। অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ ধরে ৩ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা। এ ব্যাপারে সরকারি সূত্রে অবশ্য জানানো হয়েছে, বাজেটে না থাকলেও আর্থিক বছরের পরবর্তী সময়ে অতিরিক্ত বাজেট বরাদ্দের অন্তর্গত (রিভাইজড এস্টিমেট) অর্থ দেওয়া হতেই পারে। সুতরাং, বাজেটে বরাদ্দ হয়নি মানেই কোনও একটি প্রক্রিয়া সরকার কার্যকর করবে না, এমনটা নয়।
সাধারণত সেন্সাসের জন্য জনগণনা, সার্ভে, পরিসংখ্যান ইত্যাদি খাতে ও রেজিস্ট্রার জেনারেল অব ইন্ডিয়া অফিসের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়। যে বছর জনগণনা থাকে, সেই সময়সীমায় স্বাভাবিকভাবে বাজেট বেড়ে যায়। প্রতি ১০ বছর অন্তর জনগণনার কাজ হয়। ২০২০ সালের এপ্রিল মাস থেকে শুরু হয়ে ২০২১ সালের মার্চ মাসের মধ্যেই জনগণনা হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে ওই প্রক্রিয়া হতেই পারেনি। চলতি বছর আবার সবটাই নতুন করে শুরু করতে হবে। সুতরাং জনগণনা প্রায় এক বছর পিছিয়ে যাচ্ছে। তাই এবার ফের অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। ধরে নেওয়া হচ্ছে, করোনার প্রকোপ কমতে থাকলে আবার সেন্সাসের কাজ শুরু হবে। কিন্তু হঠাৎ কেন ৮০০ কোটি টাকা কমিয়ে দেওয়া হল? এই প্রশ্ন কিন্তু উঠছে। এনপিআর চালু করতে নরেন্দ্র মোদি সরকার বদ্ধপরিকর। তাহলে বাজেটে পৃথক এনপিআর বরাদ্দ কেন নেই? এই প্রশ্নও তুলছে বিরোধীরা।
প্রসঙ্গত, এনপিআর নিয়ে প্রবল আপত্তি রয়েছে বিভিন্ন বিজেপি বিরোধী দল ও রাজ্যের। বস্তুত এনপিআরকেই সিএএ এবং পরবর্তীকালে এনআরসির সূত্রপাত হিসেবে তকমা দিয়েছে বিরোধী দলগুলি। মানুষকে আশ্বস্ত করতে মোদি সরকার বারংবার বলেছে, এনপিআরে কোনও কাগজ জমা দিতে হবে না। দেখাতেও হবে না। কিন্তু বিরোধীরা সেটা মানতে নারাজ। অসমে গিয়ে ভোটের প্রাক্কালে রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi) বলে এসেছেন, আমরা ক্ষমতায় এলে সিএএ কিছুতেই হবে না। বাতিল করে দেওয়া হবে। করোনার কারণে প্রায় এক বছর এনপিআর, সিএএ নিয়ে রাজনৈতিক চর্চা ছিল স্তিমিত। এবার ফের শুরু হয়েছে সেই ইস্যু। ঠিক বিধানসভা নির্বাচনের মুখে। সম্প্রতি সংসদে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, জুলাই মাসের মধ্যেই সিএএ বিধি তৈরি হয়ে যাবে। তারপর কার্যকর শুধু সময়ের অপেক্ষা। এরপরও আবার অমিত শাহ (Amit Shah) বাংলায় গিয়ে বলেছেন, এখনই সিএএ নয়। করোনার টিকাকরণ শেষ হয়ে যাওয়ার পর সিএএ কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হবে। অর্থাৎ স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, এখনই সিএএ কার্যকরের সম্ভাবনা নেই। তাহলে সেই ‘মাহেন্দ্রক্ষণ’ কবে আসবে? তার উত্তর মিলছে না। বরং বিভ্রান্তি বাড়ছে। এই মুহূর্তে বিরোধীদের প্রশ্ন একটাই, সত্যিই কি সিএএ এবং এনপিআর কার্যকরের ভাবনা রয়েছে মোদি সরকারের? নাকি ভোটের মুখে ঝুলি থেকে বিড়াল বের করছে কেন্দ্র?