দক্ষিণবঙ্গ বিভাগে ফিরে যান

কেন্দ্রের উদাসীনতা! থমকে ডানকুনি-ফুরফুরা শরিফ রেল প্রকল্প

February 18, 2021 | 2 min read

দশ বছর আগের কথা। ফুরফুরা শরিফ(Furfura Sharif) অবধি ট্রেন ছুটবে— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) রেলমন্ত্রী থাকাকালীন এই ঘোষণার পর আশায় বুক বেঁধেছিলেন এই এলাকার মানুষ। ডানকুনি(Dankuni) থেকে জঙ্গলপাড়া, শিয়াখালা হয়ে ফুরফুরা শরিফ, সাড়ে আঠারো কিমি রেলপথের শিলান্যাস হয়েছিল ২০১০ সালে। শুরু হয়েছিল স্টেশন তৈরির কাজও। রেলের টিকিট কাউন্টার খোলা হয়েছে প্রস্তাবিত রেলপথকে সামনে রেখে। লকডাউনের(Lockdown) আগে পর্যন্ত সেখান থেকে বিক্রি হয়েছে দূরপাল্লার ট্রেনের টিকিট। 
প্রকল্প ঘোষণার পর ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জমি অধিগ্রহণের বিজ্ঞপ্তি জারি করে রেল মন্ত্রক(Ministry Of Railway)। মশাটে তৈরি হয় ক্যাম্প। জমি অধিগ্রহণের কাজকর্ম চলে এই ক্যাম্প থেকেই। গ্রামে ট্রেন আসবে, এই আনন্দে গ্রামবাসীরা স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসেন জমি দিতে। তিন ফসলি জমি দিতেও কার্পণ্য করেননি তাঁরা। যে জমি সোনার ফসল ফলিয়ে এতদিন সংসার টেনেছে কৃষক পরিবারের, অক্লেশে তাও রেলের হাতে তুলে দিয়েছেন তাঁরা। বিনিময়ে জমির দাম যেমন পেয়েছেন, তেমনই জমিদাতাদের পরিবারের একজন চাকরি পেয়েছেন রেলে। জানা গিয়েছে, এমন ৭০০ জন এখন মাস-মাইনে পান রেল থেকে।  
২০১৪ সালে কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর এই প্রকল্পের কাজ কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। প্রকল্পকে টিকিয়ে রাখতে বাজেটে যাও বা ছিটেফোঁটা বরাদ্দ করা হতো, এবার তাও দেয়নি কেন্দ্র। তাদের উদাসীনতায় ডানকুনি-ফুরফুরা শরিফ রেল প্রকল্পের জমি আজ পরিত্যক্ত ভূমিতে পরিণত হয়েছে। আশা ভঙ্গ হয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষের। 
রেলপথ নির্মাণের কাজে গতি আনতে‌ জমিদাতা ও স্থানীয় বাসিন্দারা ২০১০ সালে হাওড়া-শিয়াখালা-ফুরফুরা যাত্রী সহায়ক সমিতি নামে একটি কমিটি গঠন করে। এই কমিটি দ্রুত জমি অধিগ্রহণ করে প্রকল্প নির্মাণের দাবি জানায়। মোদি সরকারের রেল মন্ত্রক কাজে ঢিলেমি দেওয়ায় ২০১৭ সালে তৎকালীন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভুর দ্বারস্থ হয়ে কাজ চালুর আবেদন জানায় এই কমিটি। কিন্তু কোনও আবেদন-নিবেদনেই চিঁড়ে ভেজেনি।
ফুরফুরা এলাকার বাসিন্দা মুন্সি আব্বাস। রেলপথ নির্মাণে নিজের তিন ফসলি জমি দিয়েছিলেন তিনি। জমির আয়তন ছিল তিন বিঘা। তাঁর কথায়, গ্রামে ট্রেন এলে এলাকার লক্ষ লক্ষ মানুষ উপকৃত হতেন। এই আশাতেই জমি দিয়েছিলাম। বিনিময়ে জমির দাম, সঙ্গে চাকরি পেয়েছি। আমার ব্যক্তিগত প্রয়োজন হয়তো মিটেছে। কিন্তু যে স্বপ্ন দেখে জমি দিয়েছিলাম, তা পূরণ হল কই? ওই জমি আজ বন্ধ্যা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রীর পদ ছেড়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেই গোটা প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়ে। তাঁর ছেড়ে যাওয়া চেয়ারে তৃণমূলের দুই তাবড় নেতা বসলেও কাজের কাজ তাঁরা করতে পারেননি। এলাকার কৃষকদের খেদ, চোখের সামনে জমি পড়ে রয়েছে, অথচ আমরা চাষ করতে পারছি না। আবার রেল প্রকল্পও হল না। 
ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকী বলেন, ডানকুনি-ফুরফুরা শরিফ রেল প্রকল্প বন্ধ হওয়ার মূলে রয়েছে কেন্দ্রের সরকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যয় কথা দিয়েছিলেন, যাঁরা জমি দেবেন, তাঁরা চাকরি পাবেন, জমির জন্য টাকা পাবেন। এলাকার মানুষ চাকরি পেয়েছে, জমির টাকাও পেয়েছে। অথচ যে কারণে জমি দেওয়া হল, সেটাই হল না। শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এই রেল প্রকল্পের দাবিতে সরব হয়েছিলেন সংসদে।
ত্বহা সিদ্দিকীর কথায়, কেন্দ্রের শাসকদল হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে বিভাজন তৈরি করতেই ব্যস্ত। দিল্লিতে সরকার না বদলালে এই রেল প্রকল্পের কাজ শুরু হবে বলে মনে হয় না। কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা নেই বিজেপি সরকারের। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর তৃণমূলের আমলে রাজ্যে যে উন্নয়ন হয়েছে, তা বাংলার মানুষ কখনও দেখেনি।
জাঙ্গিপাড়ার বিধায়ক স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর স্বপ্নের প্রকল্প ছিল এটি। ট্রেন চালু করে সারা দেশের সঙ্গে ফুরফুরার সংযোগ স্থাপন করতে চেয়েছিলেন তিনি। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এই প্রকল্পে বরাদ্দের ভাগ শূন্যে নামিয়ে আনল। অন্ধকারে পাঠাল এই প্রকল্পকে‌।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Piyush Goyal, #Railways, #Furfura Sharif, #Mamata Banerjee, #Dankuni

আরো দেখুন