রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

বিশ্বভারতীর সমাবর্তনে ব্রাত্য পড়ুয়ারাই, ক্ষোভ

February 19, 2021 | 2 min read

মাত্র ৪৮ ঘণ্টার নোটিসে আজ শুক্রবার অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বিশ্বভারতীর (Visva Bharati University) সমাবর্তন উৎসব। কিন্তু যাঁদের জন্য এই অনুষ্ঠান, সেই ছাত্র-ছাত্রীরাই এবছর থাকছেন না। করোনা আবহের কারণ দেখিয়ে এবারই প্রথম পড়ুয়াদের ছাড়াই এই অনুষ্ঠান হতে চলেছে। ঐতিহ্যবাহী এই অনুষ্ঠানে থাকতে না পারার জন্য কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন ছাত্রছাত্রীরা। এনিয়ে সরব হয়েছেন শান্তিনিকেতনের আশ্রমিকরাও। এর আগে কখনও সমাবর্তনে ব্রাত্য থাকেননি ছাত্রছাত্রীরা। তবে কি বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে কেন্দ্রের বিজেপি (bjp) সরকারকে খুশি করতেই বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপ? তা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। এই ঘটনায় শান্তিনিকেতনজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

এদিনের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল মাধ্যমে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী তথা প্রতিষ্ঠানের আচার্য নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi), কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পখরিয়াল। বিশ্বভারতীর এক আধিকারিক জানান, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও নবান্ন সূত্রে তাঁর আসার ব্যাপারে কোনও সবুজ সঙ্কেত মেলেনি। তবে কোভিড প্রটোকল মেনে বিশ্বভারতীর প্রথা অনুযায়ী পালিত হবে সমাবর্তন উৎসবে। এদিন উৎসব শেষে ধাপে ধাপে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের প্রায় আড়াই হাজার স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল, পিএইচডি উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে শংসাপত্র তুলে দেওয়া হবে।

তবে, বিশ্বভারতীর সমাবর্তন উৎসব ছাত্রছাত্রীদের কাছে এক পরম প্রাপ্তির অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীরা আচার্যের কাছ থেকে ছাতিম পাতা ও শংসাপত্র এবং দীক্ষান্ত ভাষণ শেষ করে বিশ্বভারতী থেকে শিক্ষালাভের পর একটি অধ্যায়ের সমাপ্ত করেন। যদিও পদাধিকারবলে দেশের প্রধানমন্ত্রী বিশ্বভারতী আচার্য। ছাত্র-ছাত্রীরা আচার্যের কাছ থেকেই ছাতিম পাতা গ্রহণ করেন। বহু দিন ধরে সেই রীতিই হয়ে আসছে। কিন্তু নিরাপত্তা ও ব্যস্ততার কারণে তাতে ছেদ পড়ে প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর সময়ে। যদিও প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই ছাত্রছাত্রীরা তার প্রতিবাদ করলে আচার্য তাঁর ছাতিম পাতা তুলে না দেওয়ার অপারগতার কথা জানালে ছাত্র-ছাত্রীরা তা মেনে নেন। তারপর থেকে আচার্যের কাছ থেকে ছাতিম পাতা নেওয়ার সৌভাগ্য হয়নি পড়ুয়াদের। তবুও সমাবর্তন উৎসবে যোগদান করতে প্রতিবছরই প্রাক্তনীরা ভিড় জমান শান্তিনিকেতনে। কার্যত মিলন মেলা ও চাঁদের হাট হয়ে ওঠে। কিন্তু যেখানে ছাত্র-ছাত্রীরাই অনুপস্থিত, সেখানে এই সমাবর্তনের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ছাত্রছাত্রী ও শান্তিনিকেতনের আশ্রমিকরা। তাঁদের দাবি, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যই অনুষ্ঠিত হয় সমাবর্তন উৎসব। কিন্তু, তাঁদের অবর্তমানে শুধুমাত্র বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে কেন্দ্রকে খুশি করার জন্য এই উৎসব অনুষ্ঠিত করতে চলেছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।

যদিও বিশ্বভারতীর এক আধিকারিকের দাবি, স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল ও পিএইচডি উত্তীর্ণদের চাকরি ক্ষেত্রে শংসাপত্রের ভূমিকার কথা মাথায় রেখে ছাত্র-ছাত্রীদের অনুপস্থিতিতেই সমাবর্তন উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। তবে তিনি জানান, এবছর ছাত্র-ছাত্রীদের অনুপস্থিতির পাশাপাশি দেশিকোত্তম ও গগন-অবন পুরস্কারও দেওয়া হচ্ছে না।

সমাবর্তন উৎসবে থাকতে না পেরে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্র বলেন, যাঁদের জন্য এই প্রতিষ্ঠান, সেই ছাত্র-ছাত্রীদের ব্রাত্য রেখেই এই মুহূর্তে বিশ্বভারতীতে সমাবর্তন হচ্ছে। ছাতিম পাতা নেওয়ার প্রথা উঠে গেলেও সমাবর্তন উৎসবে যোগ দিতে পারা বড় প্রাপ্তি। কিন্তু বর্তমান কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তে আমরা হতাশ। আমাদের অধিকার কেড়ে নেয়া হল।

আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, সমাবর্তন একেবারেই ছাত্র-ছাত্রীদের নিজস্ব অনুষ্ঠান। তাঁদের ছাড়া এই অনুষ্ঠান হওয়া উচিত নয়। যদিও বর্তমান উপাচার্য নিজের ইচ্ছা মতো গা জোয়ারি করছেন। তাই এখন সবকিছুই নতুনভাবে হচ্ছে। যদিও এ ব্যাপারে বিশ্বভারতী জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকারের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#convocation virtual, #Narendra Modi, #Visva-Bharati University

আরো দেখুন