সূচ না ফুটিয়ে নিমেষেই হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা, চালু শীঘ্রই
সূচ না ফুটিয়ে কয়েক সেকেন্ডেই হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা(Haemoglobin Test)! হ্যাঁ, রাজ্যের সরকারি(Govt Of West Bengal) ব্লাড ব্যাঙ্ক(Blood Bank) আয়োজিত রক্তদান শিবিরে(Blood Donation) শীঘ্রই চালু হতে চলেছে এই নয়া পদ্ধতি। রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রের খবর, বাংলার ২৪টি বড় সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক বা রক্তের পৃথকীকরণের কেন্দ্রে (বিসিএসইউ) চালু হবে এই নয়া পদ্ধতি। শিবিরে আসা প্রত্যেক রক্তদাতার আঙুলের কাছে ধরা হবে কোঅ্যাক্সোমিটার নামের যন্ত্র। নিমেষে তা জানিয়ে দেবে দাতার রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ১২.৫ গ্রাম/ডিএল বা তার বেশি হলে রক্তদান করার অনুমতি মিলবে। তার কম হলে দাতাকে রক্ত দান করতে দেওয়া হবে না। হিমোগ্লোবিন কম থাকার কারণ থ্যালাসেমিয়া না অন্য কিছু, জানতে সরকারি কেন্দ্রে পাঠানো হবে। প্রসঙ্গত, হিমোগ্লোবিন মাপার প্রচলিত পদ্ধতি হল, ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে রক্ত সংগ্রহ করে কপার সালফেট পদ্ধতিতে মাত্রা জানা।
যে ২৪টি বড় ব্যাঙ্কে এই নয়া ব্যবস্থা চালু হবে, সেগুলি হল—কলকাতার পাঁচ মেডিক্যাল কলেজ ব্লাড ব্যাঙ্ক, মানিকতলার সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্ক, সাগর দত্ত, কল্যাণী জে এন এম, বর্ধমান, মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও উত্তরবঙ্গ ব্লাড ব্যাঙ্ক, মানিকতলার ইএসআই হাসপাতাল, হুগলি, নদীয়া, তমলুক, বারাসত, রায়গঞ্জ, কোচবিহার, সিউড়ি, আসানসোল ও বালুরঘাট ব্লাড ব্যাঙ্ক।
বুধবার এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যদপ্তরের স্টেট ব্লাড সেল-এর নোডাল অফিসার ডাঃ বিপ্লবেন্দু তালুকদার বলেন, আশা করছি, এপ্রিল থেকেই নতুন পদ্ধতিতে হিমোগ্লাবিন পরীক্ষা চালু হয়ে যাবে রাজ্যের ২৪টি বড় ব্লাড ব্যাঙ্কে। সূচ না ফুটিয়ে পরীক্ষা হওয়ায় দাতাদের মধ্যে ভয়ভীতি থাকবে না। রক্ত এবং দাতা দুই তরফেই নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা যাবে। রাজ্য রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের সদস্য অচিন্ত্য লাহা বলেন, সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক আয়োজিত রাজ্যের কোনও রক্তদান শিবিরেই বর্তমানে হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা হয় না বললেই চলে। সেকারণে হিমোগ্লোবিন কম থাকা বহু রক্তদাতারই রক্তদানের পর নানা সমস্যা হয়। অত্যন্ত জরুরি উদ্যোগ।
স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রের খবর, বর্তমানে রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কের তত্ত্বাবধানে প্রায় আট লক্ষ ইউনিট রক্ত সংগহীত হয়। সিংহভাগ সংগ্রহই হয় স্বেচ্ছায় রক্তদানে। বিভিন্ন উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে বছরে কমবেশি ১৩ হাজার রক্তদান শিবির থেকে এই রক্ত চলে যায় বিভিন্ন বড়-ছোট-মাঝারি ব্লাড ব্যাঙ্কে। পাঁচটি অপরিহার্য পরীক্ষার মাধ্যমে সেই রক্ত চাহিদা অনুযায়ী চলে যায় রোগীর কাছে বা হাসপাতালে।
কিন্তু সমস্যা রয়ে গিয়েছে গোড়াতেই। রক্তদান শিবিরের পরিবেশ ও রক্তদাতার শারীরিক অবস্থা—এই দুই বিষয়ই বরাবরই অবহেলিত রয়ে গিয়েছে। বিশেষত, রক্তদাতাকে একটি ফর্ম দিয়ে আগাম অসুখবিসুখ সম্পর্কে জানার চেষ্টা হলেও, সে ব্যাপারে খুব একটা কড়াকড়ি থাকে না। তার ফল ভোগেন রক্তদাতা, নিম্নমানের রক্ত নেওয়ার ফল ভোগে ব্লাড ব্যাঙ্কও। হিমোগ্লোবিন কম থাকা দাতার রক্ত গ্রহীতাকে দেওয়া হলে তাঁর প্রয়োজন মেটে না। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রাও তেমন বাড়ে না। বারবার রক্ত দিতে হয়। সংক্রমণের আশঙ্কাও বহুগুণ বেড়ে যায়।