সাংসদ প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থ, ফুঁসছে আলিপুরদুয়ার
প্রতিশ্রুতির পরেও কেন্দ্রীয় সরকারের বর্ডার এরিয়া ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (BADP) টাকায় জেলার সীমান্ত এলাকা জয়গাঁ ও রাঙামাটির মাঝে বাসরা নদীর উপর পাকা সেতু হয়নি। একইভাবে প্রতিশ্রুতির পরেও বিএডিপি ফান্ডে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৯০০ ফুট উচ্চতায় বক্সা’র ১৩টি পাহাড়ি গ্রামে পাকা রাস্তা তৈরি হয়নি। ঐতিহাসিক বক্সা ফোর্টকেও ঢেলে সাজানোর কথা ছিল বিএডিপি ফান্ডের অর্থে। কেন্দ্রীয় ওই ফান্ডের অর্থে কুমারগ্রামের রায়ডাক নদীতেও পাকা সেতুর প্রতিশ্রুতি ছিল। কিন্তু রায়ডাকেও সেতু হয়নি। এমপি জন বারলা এসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বিরোধী সহ বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতিশ্রুতি মতো কোথাও একটা কাজও হয়নি। যদিও এমপি’র দাবি, রাজ্যের অসহযোগিতায় কাজগুলি শুরুই করা যায়নি।
আশ্বাস মতো কাজ না হওয়ায় এবার বিধানসভা ভোট আসতেই ফুঁসছে আলিপুরদুয়ার জেলার কালচিনি ব্লকের রাঙামাটি, জয়গাঁ, বক্সা পাহাড়, রাজাভাতখাওয়া ও কুমারগ্রাম ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ। ক্ষুব্ধ ওই বাসিন্দাদের কথায়, এবার ভোট চাইতে এলে এমপি’র (John Barla) কাছে জবাব চাওয়া হবে কেন প্রতিশ্রুতি মতো কাজ হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই এবার বিধানসভা ভোটে ইস্যু হয়ে উঠেছে গেরুয়া শিবিরের এমপি’র ওই ঢালাও প্রতিশ্রুতির তালিকা।
এদিকে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ও অন্য বিরোধী দলগুলি বিজেপি এমপি’র প্রতিশ্রুতিকে হাতিয়ার করে এলাকায় ভোটের প্রচারে নেমে পড়েছে। যদিও সীমান্ত এলাকায় ওসব উন্নয়নমূলক কাজ না হওয়ার জন্য পদ্মফুল শিবিরের এমপি যথারীতি রাজ্য সরকারের কোর্টেই বল ঠেলে দিয়েছেন।
লোকসভা ভোটে জেতার পর করোনা পরিস্থিতি শুরু হওয়ার আগে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে এমপি জন বারলা জেলার সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছিলেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল কেন্দ্রের বিএডিপি ফান্ডের টাকায় সীমান্ত এলাকার রাস্তাঘাট, পানীয় জল প্রকল্প, নদীবাঁধ ও নদীর উপর পাকা সেতু নির্মাণ। বাসিন্দারা বলেন, সেই মতো এমপি কালচিনির রাঙামাটি ও জয়গাঁর মাঝে ভুটানের পাসাখা থেকে নেমে আসা বাসরা নদীর উপর পাকা সেতু, বক্সার ১৩টি গ্রামে পাকা রাস্তা, কুমারগ্রামের রায়ডাক নদীতে পাকা সেতু নির্মাণ ও ঐতিহাসিক বক্সা ফোর্টকে ঢেলে সাজানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু ওঁর প্রতিশ্রুতিই সার। ওই দীর্ঘ তালিকার একটি কাজও হয়নি।
রাজাভাতখাওয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা অ্যালবার্ট সাংমা বলেন, এমপি’র প্রতিশ্রুতির পর বক্সার পাহাড়ি গ্রামের মানুষ ধরেই নিয়েছিল এবার পাহাড়ের খানাখন্দে ভরা রাস্তাঘাটে পিচের প্রলেপ পড়বে। কিন্তু কাজ তো দূরের কথা প্রতিশ্রুতির পর এমপি আর পাহাড়মুখোই হননি। বরং আমরা দেখলাম রাজ্য সরকারই উদ্যোগী হয়ে ঐতিহাসিক বন্দিনিবাস বক্সা ফোর্টের সংরক্ষণের কাজ শুরু করেছে।
প্রতিশ্রুতি মতো একইভাবে রায়ডাক নদীতে সেতু না হওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছে আলিপুরদুয়ার-২ এবং কুমারগ্রামের মানুষও। চা বাগান তৃণমূল কংগ্রেস মজদুর ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অসীম মজুমদার বলেন, প্রতিশ্রুতি মতো কাজ না হলে মানুষ তো তার জবাব চাইবেই। আমরা মানুষের এই ক্ষোভকে কাজে লাগাচ্ছি।
এমপি বারলা অবশ্য বলেন, ভোটারদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া কাজগুলি আমি তো করতেই চেয়েছিলাম। কিন্তু রাজ্য সরকার কেন্দ্রে ওসব কাজের ডিপিআর পাঠাতে আগ্রহ দেখায়নি। সেটা আমাদের দল মানুষের কাছে তুলে ধরছে।