রেশনের কেরোসিন দিচ্ছে না কেন্দ্র: জ্যোতিপ্রিয়
পেট্রোল, ডিজেল ও রান্নার গ্যাসের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হওয়ায় এমনিতেই নাভিশ্বাস সাধারণ মানুষের। তবুও অন্তত রেশনে পাওয়া কেরোসিনের (Kerosene) ভরসায় ছিলেন অনেক মানুষ। এবার মরার উপর খাঁড়ার ঘা’য়ের মতো রাজ্যে রেশনে কেরোসিনের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই অভিযোগ তুলেছেন খোদ রাজ্যের খাদ্য ও সরবরাহমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। আর রেশনে কেরোসিন না মেলায় রাজ্যের বহু মানুষ মহাবিপদে পড়েছেন। দাম বাড়ায় রান্নার গ্যাসে হাত দেওয়া যাচ্ছে না।
কীভাবে রান্না করবেন তার চিন্তায় ঘুম ছুটে গিয়েছে তাঁদের। এঁদের অধিকাংশই গরীব, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ। মন্ত্রীর অভিযোগ, বিধানসভা নির্বাচনের আগে হঠাৎই এরাজ্যে রেশনে কেরোসিন তেল দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তে ইতিমধ্যে দক্ষিণ দিনাজপুরে জনরোষ বাড়ছে। যা ছড়াচ্ছে অন্য জেলাতেও। খাদ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, কেন্দ্র সরকারের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের তরফে প্রতি মাসে রেশনের জন্য তেল বরাদ্দ করা হতো। কিন্তু কোনও কারণ না জানিয়েই বরাদ্দ তেল পাঠানো দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে রাজ্যের প্রত্যেকটি জেলার খাদ্য দপ্তরের তরফে, কেন কেরোসিন তেল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়ে কেন্দ্রের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেইসঙ্গে শুক্রবার রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
ভোটের মুখে কেন্দ্র সরকার এমন বঞ্চনা করে সাধারণ মানুষের মধ্যে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ তৈরি করার কৌশল করেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (Jyotipriya Mallick)।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের একাধিক জেলার বাসিন্দারা রান্নার কাজে কেরোসিন তেল ব্যবহার করেন। একইভাবে আলো জ্বালাতে, চাষে সেচের কাজেও কেরোসিন তেল ব্যবহৃত হয়। আগে প্রতি মাসে ৯০ হাজার কিলোলিটার তেল দেওয়া হতো। পরে তা কমিয়ে ৫৮ হাজার কিলোলিটার দেওয়া হচ্ছিল। বর্তমানে সেটাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে আমি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছি। নির্বাচনের আগে কেন্দ্র সরকার কেরোসিন বন্ধ করে রাজ্যের উপর দোষ চাপাতে চাইছে। আমরা দ্রুত এই নিয়ে আন্দোলনে নামব।
এব্যাপারে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বিজেপির সভাপতি বিনয় বর্মন। তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ না নিয়ে কিছু বলতে পারব না। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার খাদ্য নিয়ামক জয়ন্ত রায় বলেন, আমরা জানি না কি কারণে কেরোসিন দেওয়া হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই নিয়ে কেন্দ্র সরকারের কাছে আমরা চিঠি দিয়েছি। আমাদের যাতে কারণ জানানো হয়, সেই অনুরোধ জানিয়েছি।
ওয়েষ্ট বেঙ্গল এমআর ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার সম্পাদক ভূপেশ ঘোষ বলেন, কেরোসিন কি কারণে বন্ধ করা হয়েছে, সেব্যাপারে আমাদের কিছু জানা নেই। আমাদের গ্রাহকদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে। দ্রুত সমস্যার সমাধান না হলে আমাদের রেশন ব্যবস্থায় বড় সমস্যা দেখা দেবে।
জানা গেছে, গ্রাহক পিছু প্রতিমাসে ৫০০ মিলিলিটার করে কেরোসিন তেল দেওয়া হয়। ৩৫ টাকা ৫২ পয়সা প্রতি লিটার দরে রেশন গ্রাহকদের তা কিনতে হতো। হঠাৎ এমাসে গ্রাহকরা রেশনে কেরোসিন নিতে গিয়ে জানতে পারছেন যে তেল দেওয়া বন্ধ।
জানা গিয়েছে, কেন্দ্র সরকারের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক থেকে একেকবারে প্রতি তিন মাসের জন্য কেরোসিন তেল বরাদ্দ করা হয়ে থাকে। সেই তেল তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ডিপো থেকে সরবরাহ করা হয়। রাজ্যের মধ্যে মৌড়িগ্রাম, হলদিয়া, বজবজ, নিউ জলপাইগুড়ি, রাজবাঁধ, মালদহ ডিপো থেকে ডিষ্ট্রিবিউটররা তেল নিয়ে যান। সেখান থেকে তা ডিলারদের কাছে পাঠানো হয়। সূত্রের খবর, কয়েক দিন আগে ডিপোগুলিতে ট্যাঙ্কারে করে তেল পাঠিয়ে আবার তা ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তেল কবে থেকে আবার দেওয়া হবে, তা নিয়েও স্পষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি বলে অভিযোগ।