জাতীয় বাংলা সম্মেলনের মহা সমাবেশে চাঁদের হাট
সামনেই একুশের নির্বাচন। এই নির্বাচনে বাঙালি জাত্যাভিমান অন্যতম ফ্যাক্টর। রাজ্যজুড়ে তৈরি হয়েছে নানা বাংলা জাতীয়তাবাদী সংগঠন। এরকমই একটি সংগঠন হল জাতীয় বাংলা সম্মেলন (Jatiyo Bangla Sommelan)। গতকাল কলকাতার বুকে আয়োজিত হল তাদেরই মহা সম্মেলন। মহাজাতি সদনে সেই উপলক্ষে বসেছিল চাঁদের হাট। অংশগ্রহণ করেন সাহিত্যিক মনোরঞ্জন ব্যাপারি, অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, অধ্যাপক সুগত বসু, নাট্য পরিচালক প্রসন্ন, সঙ্গীত শিল্পী সৌমিত্র রায় এবং সমাজ কর্মী চন্দন গৌড়া-সহ আরও অনেকে।
মনোরঞ্জন ব্যাপারির মত, “বাংলা ভাষার প্রতি হিন্দিভাষীদের রাগ রয়েছে। কারণ তাঁরা মনে করেন বাংলা ভাষা হচ্ছে বাংলাদেশের ভাষা। তাই এই ভাষা-অঞ্চলকে তাঁরা দুর্বল করতে চায়। বাংলায় বাঙালি ক্রমশ সংখ্যালঘু হয়ে পড়ছে। আর অনুপ্রবেশ ঘটছে হিন্দিভাষীদের। অনেকে বলেন, বাংলায় রোজগার নেই তাই বাঙালিদের চলে যেতে হচ্ছে অন্য রাজ্যে। আমি মনে করি এটা সম্পূর্ণ ভুল। বাইরে থেকে এসে কলকাতা দখল করে নিয়েছেন অন্যরা, তাই নিজের মাটিতে কাজ না পেয়ে অন্য কোথাও চলে যেতে হচ্ছে বাঙালিদের। চুপ করে থাকলে চলবে না। প্রতিবাদ করতে হবে। না হলে গো-বলয়ের লোকরা এসে আমদের সরিয়ে দেব।”
নাট্য পরিচালক প্রসন্ন মনে করেন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলা হচ্ছে। জোর করে ভাষাকে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে মানুষের মধ্যে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সকল ধর্ম, সকল জাতি তথা ভাষাকে যে গুরুত্ব দিয়েছিলেন, বর্তমান শাসক তা মানছে না। তারা তামিল, তেলুগু, কন্নড় ও বাংলার মধ্যে হিন্দি ঢুকিয়ে দিতে চাইছে। এর নিজেদের সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখতে গেলে এর প্রতিবাদ হওয়ার প্রয়োজন।
গায়ক সৌমিত্রর কথায়, “বাংলাকে কেউ যদি সত্যিকারের ভালোবাসে তবে সে হল বাংলাদেশ। তাদের গাড়ির নম্বর প্লেট বাংলায় লেখা। এমনকি পাসপোর্টও বাংলায়। আমার ইচ্ছে আমাদের পাসপোর্টও বাংলা করা হোক।” একইসঙ্গে বিজেপি-র উদ্দেশে কটাক্ষ করে সৌমিত্র বলেন, “যাঁরা নিজেদের ছবির নীচে রবীন্দ্রনাথকে রাখেন, তাঁরা বাংলাকে ভালোবাসতে পারেন না। যতই মুখে ‘শ্রীরাম’ বলুন।”
অভিনেতা পরমব্রত বলেন, “বাঙালি হিসেবে আমরা নিজেদের গুটিয়ে রাখছি। বাঙালি ছোট জায়গার মধ্যে সীমিত নয়। মনে রাখতে হবে আমি বাঙালি, তাই আমি আন্তর্জাতিক। আমি আন্তর্জাতিক, তাই আমি বাঙালি। আমি বাঙালি, তাই আমি ভারতীয় এবং বাঙালি। প্রত্যেকটা একে অপরের পরিপূরক। একটা ছেড়ে অন্যটা নয়। হিন্দি ও ইংরেজি ভাষার মানুষদের আমরা দু’টো চোখে দেখি। প্রথম ক্ষেত্রে প্রভুর দৃষ্টিভঙ্গি। দ্বিতীয়ত ক্ষেত্রে, সেই দৃষ্টিভঙ্গি জাত শত্রুর মতো। আদতে কোনওটাই নয়। তাঁরা আমদের সমকক্ষ। এটা বুঝতে হবে।’’