বিধায়ক, সাংসদ দুইই বিজেপির, তবু মেটেনি পানীয় জলের সমস্যা
সাংসদ বিজেপির। স্থানীয় বিধায়কও পদ্মশিবিরের। তবুও উত্তর মালদহের হবিবপুর বিধানসভা কেন্দ্রে পানীয় জলের সমস্যা মেটেনি। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে (West Bengal Election 2021) পানীয় জলের অভাবই এবার প্রধান ইস্যু হচ্ছে। এই বিধানসভা কেন্দ্রের দু’টি ব্লকেই পানীয় জলের ব্যাপক সমস্যা রয়েছে। এক সময় সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েই ভোটে লড়ে জিতেছিল বিজেপি (BJP)। কিন্তু ভোট বৈতরণী পার হয়ে গেলেও হবিবপুর এবং বামনগোলা ব্লকের বাসিন্দাদের পানীয় জলের সমস্যা সেই তিমিরেই থেকে গিয়েছে।
বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এবারে প্রার্থীরা ভোট চাইতে এলে পানীয় জলের সমস্যার কথাই তাঁদের কাছে তুলে ধরা হবে। স্বাভাবিক ভাবেই এই ইস্যুটিকে হাতিয়ার করে তৃণমূল কংগ্রেস ও বাম-কংগ্রেস জোট, বাসিন্দাদের মেজাজ জেনে রণকৌশল সাজাচ্ছে। তার পাল্টা জবাব দিতে বিজেপিও প্রস্তুত। বামনগোলা ব্লকের গৌর নন্দনবাটি গ্রামের বাসিন্দা নৃপেন বর্মন বলেন, এলাকায় পানীয় জলের প্রচুর সমস্যা রয়েছে। আমাদের ১ কিলোমিটার হেঁটে গিয়ে খাওয়ার জল আনতে হয়। ভোটের সময় অনেকেই প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেলেও পরে আর আমাদের কথা ভাবে না। হবিবপুরের আদিবাসীপাড়ার বাসিন্দা রামু টুডু বলেন, এবার ভোট চাইতে যেই আসুক তাঁকে সমস্যার কথা জানাব।
এবিষয়ে মালদহ জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের (Trinamool) কো-অর্ডিনেটর হেমন্ত শর্মা বলেন, পানীয় জল থেকে শুরু করে রাস্তা, হবিবপুর বিধানসভায় সেই অর্থে কোনও উন্নয়ন হয়নি। অনেক গ্রামে জলকষ্ট রয়েছে। রাজ্য সরকারের মাধ্যমে যে উন্নয়ন হয়েছে সেটুকুই দেখা যাচ্ছে। বিধানসভা থেকে পঞ্চায়েত সমিতি, একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েত বিজেপির দখলে থাকলেও মানুষের জন্য তারা কিছু করেনি। শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতা দখল করে রেখেছে। এবার ভোটে মানুষ তার জবাব দিতে প্রস্তুত। আমরাও মানুষের সমস্যা নিয়ে এলাকায় যাব। হবিবপুরের বিধায়ক বিজেপির জয়েল মুর্মু বলেন, পানীয় জলের সমস্যা নিয়ে আমরা অনেক দাবি পূরণ করেছি। তবে তৃণমূল ক্ষমতায় আছে বলে অনেক ক্ষেত্রে টাকা বরাদ্দ থেকে টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়ে টালবাহানা হয়। যেকারণে কিছু এলাকায় সমস্যা থাকলেও থাকতে পারে। তবে সার্বিকভাবে জলের সমস্যা আমরা অনেকটা মিটিয়েছি।
হবিবপুর বিধানসভা বর্তমানে বিজেপির দখলে রয়েছে। ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএমের প্রতীকে জয়ী হয়েছিলেন খগেন মুর্মু। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে তিনি সিপিএম ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়ে নির্বাচনে লড়ে সাংসদ হন। এজন্য হবিবপুর বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে জয়ী হন জয়েল মুর্মু। হবিবপুর বিধানসভা কেন্দ্রে হবিবপুর এবং বামনগোলা দু’টি পঞ্চায়েত সমিতিও বিজেপির দখলে রয়েছে। সিংহভাগ গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপি ক্ষমতায় রয়েছে। বিজেপির শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত হবিবপুর বিধানসভায় পানীয় জলের সমস্যা মিটিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অনেকে ভোট বৈতরণী পার করেছে। কিন্তু গ্রামীণ এলাকার সমস্যা আজও মেটেনি। বহু গ্রামের মানুষ ২ কিলোমিটার থেকে দেড় কিলোমিটার দূর থেকে জল বহন করে নিয়ে আসে। কিছু গ্রামে সাব মার্সিবল থাকলেও বিদ্যুতের অভাবে বাসিন্দারা পর্যাপ্ত জল পাচ্ছেন না। পাশাপাশি বহু গ্রামীণ রাস্তা কাঁচা অবস্থায় আছে। কয়েকটি সেতুর দাবি আজও পূরণ হয়নি। ভোটের সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েই দায় সেরেছেন নেতারা। বঞ্চনার শিকার হয়েছেন বাসিন্দারা। তাই একুশের বিধানসভা ভোটে এগুলিই সব চাইতে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। লোকসভা থেকে বিধানসভা পঞ্চায়েত স্তরে বিজেপি ক্ষমতাসীন থাকলেও উন্নয়ন হয়নি বলে অভিযোগ।