১০০ দিনের কাজে আবার লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে গেল বাংলা
মহামারী(Pandemic) পরিস্থিতির মধ্যেও ১০০দিনের প্রকল্পে আবারও উজ্জ্বল পশ্চিমবঙ্গ(West Bengal)। আগামী ৩১মার্চ পর্যন্ত রাজ্যের ২৩টি জেলায় মোট ৩৬কোটি কর্মদিবস তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ছিল। ফেব্রুয়ারি মাসেই সেই টার্গেট ছাপিয়ে গিয়েছে। রাজ্যের ১৮টি জেলাই নিজেদের লক্ষ্যমাত্রা পেরিয়ে গিয়েছে। ১৫ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গোটা রাজ্যে মোট ৩৭কোটি ৭১লক্ষ কর্মদিবস তৈরি হয়েছে। উপকৃত হয়েছে রাজ্যের ৭৭লক্ষ পরিবার। গড় কর্মদিবস ৪৯। কোভিড মহামারীতে টানা চার-পাঁচ মাস একশো দিনের কাজ বন্ধ থাকলেও অর্থবর্ষ শেষের মুখে দ্রুত গতিতে কাজ হয়েছে। বিশেষ করে মুখ্যমন্ত্রী জেলা সফরের কারণে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল অধিকাংশ জেলার কর্তারা।
পূর্ব মেদিনীপুরের(Purba Medinipur) অতিরিক্ত জেলাশাসক(উন্নয়ন) অভীককুমার দাস বলেন, ১০০ দিনের কাজে আমাদের জেলায় মোট ১কোটি ৭০লক্ষ কর্মদিবসের টার্গেট ছিল। ইতিমধ্যেই প্রায় দু’কোটি কর্মদিবস হয়ে গিয়েছে। বেশিরভাগ জেলায় টার্গেট ছাপিয়ে গিয়েছে। ২০২০-’২১ আর্থিক বর্ষে দক্ষিণ ২৪পরগনা জেলাকে সবচেয়ে বেশি, ৪কোটি ৩৩লক্ষ কর্মদিবস সৃষ্টির টার্গেট দেওয়া হয়েছিল। ইতিমধ্যেই ওই জেলায় ৪কোটি ৫৪লক্ষ কর্মদিবস তৈরি হয়েছে। হুগলি জেলার টার্গেট ছিল ৩কোটি ৭০লক্ষ কর্মদিবস। তারা ১৫ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩কোটি ৭৮লক্ষ কর্মদিবস সৃষ্টি করেছে। ৩১মার্চ পর্যন্ত ৩কোটি ৬লক্ষ কর্মদিবসের লক্ষ্যমাত্রা থাকা পশ্চিম মেদিনীপুরে ইতিমধ্যে ৩কোটি ১৫লক্ষ কর্মদিবস তৈরি হয়ে গিয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার টার্গেট ছিল ১কোটি ৭০লক্ষ। তারা ১কোটি ৯৮লক্ষ কর্মদিবস তৈরি করেছে। দেড় কোটি কর্মদিবসের টার্গেট ছিল উত্তর ২৪পরগনার। তারা ইতিমধ্যে ১কোটি ৬৩লক্ষ কর্মদিবস তৈরি করেছে। নদীয়া জেলাকে ৯৯লক্ষ ৮৯হাজার টার্গেট দেওয়া হলেও তারা ১কোটি ১৭লক্ষ কর্মদিবস তৈরি করেছে। কোচবিহার জেলাকে ১কোটি ৭৬লক্ষ কর্মদিবসের টার্গেট দেওয়া হয়েছিল। তাদের কর্মদিবসের সংখ্যা ২কোটি।
লকডাউনের জেরে টানা কয়েক মাস এই প্রকল্পের কাজ বন্ধ ছিল। তার উপর আম্পান সাইক্লোনের জেরে প্রাকৃতিক বিপর্যয়েও ১০০দিনের কাজ বিঘ্নিত হয়েছিল। সেসব প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও রাজ্যে এনআরইজিএ প্রকল্পে গড়ে ৪৯দিন করে কাজ হয়েছে।
লকডাউনে কয়েক লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক ভিনরাজ্য থেকে এরাজ্যে ফিরে আসেন। তাঁদের রোজগারের পথ খোলা রাখতে একগুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়েছিল রাজ্য। পরিযায়ী শ্রমিকদের একটা বড় অংশ রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। তাঁদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আবাস যোজনা প্রকল্পে বাড়ি তৈরির কাজে নিযুক্ত করা হয়। তবে, পরিযায়ী শ্রমিকদের বৃহত্তর অংশকে ১০০দিনের কাজে লাগানো হয়। নন্দীগ্রাম-১ব্লকের কালীচরণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের যাদুবাড়িচক গ্রামের শেখ আসিফ ইকবাল ও আব্দুল গফ্ফর মুম্বইয়ে রংমিস্ত্রির কাজ করতেন। লকডাউনে তাঁরা বাড়ি ফিরে আসার পর ৪০দিন করে নদীবাঁধ মেরামতের কাজে লাগায় ব্লক প্রশাসন। এভাবে হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিককে ১০০দিনের কাজে রোজগারের দিশা দেখায় প্রশাসন।
গত বছর নভেম্বর মাসে উম-পুন সাইক্লোনে প্রচুর ঘরবাড়ি এবং পানবরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্টেট ডিজাস্টার রেসপন্স ফান্ড(এসডিআরএফ) থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। এর বাইরে ১০০দিনের কাজে বাড়িঘর মেরামত এবং পানবরজ মেরামতের জন্য কর্মদিবস বাবদ অর্থ দেওয়া হয়েছে। এভাবেই মহামারীর বছরে দুর্গত এবং কাজ হারানো পরিযায়ী শ্রমিকদের কাজের ব্যবস্থা করে দিয়েছে রাজ্য। এই পরিকল্পনাতেই কর্মদিবসের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।