ভোটের ডিউটি এড়ালে সাসপেন্ড? কমিশনের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ
শিয়রে বিধানসভা ভোট। আজ, বুধবারই পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনী নির্ঘণ্ট স্থির করতে দিল্লিতে(Delhi) আলোচনায় বসছে নির্বাচন কমিশন (Election Commission Of India)। ভোট ঘোষণা হতে পারে এক-দু’ সপ্তাহের মধ্যে। করোনা(COVID19) সতর্কতার কারণে এবার রাজ্যে ২৩ হাজার বুথ বেড়েছে। ফলে প্রয়োজন বিপুল সংখ্যক ভোটকর্মীর। আর সেটাই এবার মাথাব্যথা বাড়াচ্ছে নির্বাচন কমিশনের। কারণ, করোনাকালে ‘হাইভোল্টেজ’ ভোটের ডিউটিতে অনীহা রয়েছে সরকারি কর্মীদের একটা বড় অংশের। অনেকেই ইতিমধ্যে চিঠি দিয়ে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন। মঙ্গলবার এর পরিপ্রেক্ষিতে কড়া অবস্থান নিল নির্বাচন কমিশন। স্পষ্ট জানানো হয়েছে, সঠিক কোনও কারণ ছাড়া ভোটের ডিউটি (Election Duty) এড়ালে সাসপেন্ড করা হতে পারে সংশ্লিষ্ট ভোটকর্মীকে। পাশাপাশি, করোনা আতঙ্কের জেরে ভোটারদের ক্ষেত্রেও কমিশন সতর্কতা বজায় রাখছে। জানানো হয়েছে, দেহের তাপমাত্রা ১০০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হলেই ভোট দিতে বুথে ঢোকা যাবে না। সংশ্লিষ্ট ভোটারদের একটি টোকেন দেওয়া হবে। বিকেল পাঁচটা থেকে ছ’টা পর্যন্ত তাঁরা ভোট দিতে পারবেন। তবে সেই সময়ও দেহের তাপমাত্রা থাকতে হবে ১০০ ডিগ্রির নীচে। নয়তো বুথে ঢোকা যাবে না।
এবারের নির্বাচনে মোট বুথের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১,০১,৯১৬। প্রতি বুথে পাঁচজন করে কর্মী লাগবে। অর্থাৎ, ৫ লক্ষ ১০ হাজার জন ভোটের দিন ডিউটি করবেন। এর মধ্যে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়তেই পারেন, সে কথা মাথায় রেখে আরও ২০ শতাংশ অতিরিক্ত কর্মী প্রস্তুত রাখা হবে। ফলে মোট ভোটকর্মীর সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ৬ লক্ষ ১২ হাজারে, যা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে কমিশন। রাজ্য-কেন্দ্র মিলিয়ে সব স্তরের কর্মী-অফিসারের নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের কাছে ভোটের কাজের প্রশিক্ষণ নেওয়ার চিঠি পৌঁছে গিয়েছে। তারপরই দেখা গিয়েছে নয়া বিপত্তি।
বেশ কিছু ভোটকর্মী নির্বাচন কমিশনের কাছে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, তারা ভোটের ডিউটি করতে পারবেন না। আর সেই নিয়ে তারা বারবার তদ্বিরও করেছেন কমিশনের দপ্তরে। বিভিন্ন জেলায় ওই আবেদন জমা পড়ার লম্বা লাইনও দেখা গিয়েছে। তবে এদিন নির্বাচন কমিশনের এক কর্তা পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, গণতন্ত্রের সবথেকে বড় উৎসব নির্বাচন। তাকে সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে করাটাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। সেক্ষেত্রে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির সঠিক কারণ দর্শাতে না পারলে সংশ্লিষ্ট ভোটকর্মীকে সাসপেন্ড করা হতে পারে। সংবিধান অনুযায়ী সেই ক্ষমতা কমিশনের আছে। আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, ‘এত কর্মী দরকার… অধিকাংশই যদি ডিউটি এড়িয়ে যায়, ভোট করব কী করে?’
এছাড়াও কমিশন এবার আরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার সময় রিটার্নিং অফিসারের কাছে কোনও প্রার্থী দু’জনের বেশি লোককে নিয়ে যেতে পারবেন না। গাড়িও দু’টির বেশি নিয়ে যাওয়া যাবে না। করোনার কারণে এবার রাজনৈতিক দলের তারকা প্রচারকের সংখ্যাও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগে স্বীকৃত দলের ৪০ জন ‘স্টার ক্যাম্পেনার’ থাকতে পারতেন। সেই সংখ্যা কমিয়ে ৩০ করা হয়েছে।
আগামী বিধানসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে এদিন ভাষা ভবনে মিডিয়া ওয়ার্কশপ করে কমিশন। রাজ্যের প্রত্যেকটি জেলায় প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। ভোটকর্মী থেকে শুরু করে আধিকারিকদের দফায় দফায় বৈঠক এবং প্রশিক্ষণ চলছে। আজ, বুধবার রাতে শহরে আসবেন ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈন। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে বৃহস্পতিবার দিনভর দফায় দফায় বৈঠক করবেন তিনি। যেতে পারেন কলকাতা বা সংলগ্ন এলাকায় বুথের পরিকাঠামো পরিদর্শনেও। তাঁর আসার আগেই রাজ্যে চলে আসবে ১২৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। এর মধ্যে ৬০ কোম্পানি সিআরপিএফ, ২৫ কোম্পানি বিএসএফ, ৩০ কোম্পানি এসএসবি এবং ৫ কোম্পানি করে সিআইএসএফ এবং আইটিবিপি’র।