এবার বেসরকারি হাতে কলকাতা মেট্রো? শুরু রাজনৈতিক বিতর্ক
দেশের প্রথম মেট্রো, কলকাতা মেট্রোর ক্ষেত্রেও এবার বিলগ্নীকরণের পথে হাঁটতে চাইছে কেন্দ্র! রেলের হাতে থাকা কলকাতা মেট্রোর (Kolkata Metro) ‘অ্যাসেট মনিটাইজেশন’ সম্পত্তির নগদীকরণের বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে কেন্দ্র সরকারের অন্দরে। সংস্থার সম্পত্তির মূল্য নির্ধারণের কাজ শুরু হওয়ার মুখে। এই বিষয়টিই আগামী দিনে কলকাতা মেট্রোর বিলগ্নিকরণের জল্পনাকে উসকে দিয়েছে। নগদীকরণের ক্ষেত্রে কেন্দ্র সরকার সংস্থার সম্পত্তির অংশ বিক্রিও করে দিতে পারে বা দীর্ঘ সময়ের জন্য তা ‘লিজ’ দিতে পারে।
চলতি মাসেই কেন্দ্রীয় বাজেটে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ (Nirmala Sitharaman) ‘স্ট্র্যাটেজিক ডিসইনভেস্টমেন্ট’ বা কৌশলগত বিলগ্নিকরণের মাধ্যমে ২০২৪ সালের মধ্যে ২ লক্ষ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রার কথা ঘোষণা করেছিলেন। বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও ঘোষণা করেছেন, ১০০টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণ করে ২ লক্ষ কোটি টাকা তোলা হবে। ব্যবসা করা সরকারের কাজ নয় বলেই তিনি জানিয়েছেন। সম্প্রতি এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে সে বিষয়ে একপ্রস্থ আলোচনা হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রকের ৩০টি সংস্থার নামের তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। কলকাতা মেট্রোর নামও সেই তালিকায় রয়েছে বলেই জানা গিয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে দিল্লি মেট্রোর নামও। এই ৩০টি সংস্থার মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে বিশদ তথ্য নীতি আয়োগের কাছে জমা দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্র সরকার যে সব ক্ষেত্রেই বেসরকারীকরণ এবং সম্পদের নগদীকরণের বিষয়টিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে সে বিষয়টি বাজেটেই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন নির্মলা। বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই বিষয় সংক্রান্ত এক বৈঠকে সেই বিষয়টিকেই কার্যত সিলমোহর দিয়েছেন। ‘সরকারের কাজ যে ব্যবসা করা নয়’, মানুষের বিলগ্নীকরণ এবার হবে কলকাতা মেট্রোতেও সমৃদ্ধি এবং উন্নতির সঙ্গে যুক্ত থাকা প্রকল্পগুলির দিকেই নজর রাখা বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। রেল, পরিকাঠামো, অসামরিক বিমান চলাচলের মতো ক্ষেত্রগুলিকে সেই তালিকার সামনের সারিতে রাখা হয়েছে। রেলের ক্ষেত্রে স্টেশন, ফ্রেট করিডর এবং রুট ভিত্তিক ক্ষেত্রে নগদীকরণ এবং বেসরকারীকরণের কথা ভাবা হচ্ছে বলেই সূত্রের খবর।
জানা গিয়েছে, কলকাতা মেট্রোর নাম, সম্পত্তি নগদীকরণের তালিকায় রাখা হলেও বিষয়টি নিয়ে এখনই তাড়াহুড়ো করতে চাইছে না কেন্দ্র। আপাতত মূল্য নির্ধারণ এবং কীভাবে নগদীকরণ করা যায় ,সেই প্রাথমিক রূপরেখা তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। রাজ্যের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনপর্ব পার হওয়ার পরেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে মনে করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, গত বছরের আগস্ট মাসে বিভিন্ন মন্ত্রকের এক সচিব স্তরের বৈঠক হয়েছিল। সেই বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে কলকাতা মেট্রোয় বিলগ্নিকরণের বিষয়ে উল্লেখ ছিল। রেল বহুদিন আগে থেকেই কলকাতা মেট্রোয় বিলগ্নিকরণের বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করলেও নানা জটে তা আটকে গিয়েছে। তবে এবার বহুক্ষেত্রেই বিলগ্নিকরণের বিষয় নিয়ে কেন্দ্র সরকার যেভাবে উদ্যোগী হয়েছে তাতে এ বিষয়েও জট কাটবে বলে রেল কর্তারা আশা করছেন। বর্তমানে অবশ্য সরকারের তরফ থেকে ‘বিলগ্নিকরণ’ শব্দটির পরিবর্তে ‘সম্পত্তির নগদীকরণ’ বলা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলের এক উচ্চপদস্থ কর্তা বলেছেন, “বিলগ্নিকরণ বা বেসরকারিকরণ শব্দটি শ্রুতিমধুর নয় এবং এই দু’টি শব্দ সামনে এলেই অনেক ক্ষেত্র থেকে গেল গেল রব ওঠে। সম্পত্তি নগদীকরণের ক্ষেত্রে সেই সমস্যা নেই। তবে, সম্পত্তি নগদীকরণের মোড়কে বিলগ্নিকরণ বা বেসরকারিকরণের রাস্তা খুলে যাওয়ারই সম্ভাবনা। সম্পত্তির নগদিকরণকে বেসরকারিকরণ বা বিলগ্নিকরণের প্রাথমিক ধাপ বলা চলে।” রেলের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নগদীকরণ, বিলগ্নিকরণের বিষয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে বলে জানালেও কলকাতা মেট্রো নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি সেই রেলকর্তা। উল্লেখ্য, ১৯৮৪ সাল থেকে শুরু হওয়া কলকাতা মেট্রো দেশের প্রথম ও সবচেয়ে পুরনো মেট্রো। সদ্য সোমবারই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নোয়াপাড়া-দক্ষিণেশ্বর মেট্রোর সম্প্রসারিত নতুন লাইনের উদ্বোধনও করেছেন।