নাগরিকত্ব ইস্যু নিয়ে কর্মীদের সরব হওয়ার বার্তা মহুয়ার
নাগরিকত্ব ইস্যু নিয়ে দলীয় কর্মীদের সরব হওয়ার বার্তা দিলেন জেলা তৃণমূল (Trinamool) সভাপতি তথা কৃষ্ণনগরের সংসদ সদস্য মহুয়া মৈত্র। বুধবার বিকেলে রানাঘাট-২ ব্লকের শ্যামনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্মীদের নিয়ে সভা করেন তিনি। নাসরা এলাকায় একটি বেসরকারি লজে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের বুথ সভাপতি ও বুথকর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেন তিনি। মহুয়া বলেন, এদিনের সভায় উপস্থিত কর্মীদের উদ্দেশে বলেছি, নাগরিকত্ব ইস্যুকে এবার ভোটের তাসের টেক্কা হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। এই কার্ড দিয়েই বিজেপিকে মোকাবিলা করতে হবে। কর্মিসভায় মহুয়া ছাড়াও জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ বর্ণালী দে সহ দলীয় নেতারা ছিলেন। মহুয়া বলেন, বিজেপির হিন্দু-মুসলমান ফাঁদে পা দেবেন না। তৃণমূল কখনোই ধর্মীয় রাজনীতি করে না। আমাদের কাছে সব ধর্মই সমান। পাশাপাশি তিনি দলীয় কর্মীদের বার্তা দিয়ে বলেন, বিগত ১০ বছরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সরকার বহু উন্নয়নমূলক কর্মসূচি নিয়েছে। প্রতিটি এলাকায়, প্রতিটি গ্রামে সেই প্রকল্পের সুবিধা মানুষ পেয়েছেন। সুতরাং সেই উন্নয়নের নিরিখে এবারের নির্বাচন করতে হবে। উল্লেখ্য, শ্যামনগর গ্রাম পঞ্চায়েত রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে।
গত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে এই পঞ্চায়েতে ১৪টি বুথে প্রায় দু’হাজার ভোটে এগিয়ে থাকে পদ্ম শিবির। তারপর দলের জেলা সভাপতির দায়িত্ব পেয়ে গত ৯ডিসেম্বর এই গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রথম বুথ ভিত্তিক কর্মী সম্মেলন করেছিলেন মহুয়া। সেই সময় তিনি বুথ সভাপতিদের ভোটার তালিকা ধরে স্ক্রুটিনি করার কাজ দিয়েছিলেন। এদিন কাগজে-কলমে সেই কাজের হিসেবে তিনি মিলিয়ে নেন। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন মহুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রতিটি বুথের বর্তমান অবস্থা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বুঝে নেন। সেইমতো আগামী দিনে কীভাবে দলীয় কর্মসূচি নিয়ে নির্বাচনের বৈতরণী পার করতে হবে তার প্রশিক্ষণ দেন। এছাড়াও ভোটের আগে দলের নেতারা কীভাবে নির্বাচনী বক্তব্য রাখবেন সেই কৌশলও শেখান জেলা সভাপতি। এদিনের সভায় অংশ নেওয়া কয়েকজন কর্মী বলেন, এর আগে আমরা এভাবে কখনও সাংগঠনিক কাজ করার নির্দেশ পাইনি। এদিন দিদির ক্লাস থেকে আমরা অনেক কিছু শিখেছি। গত লোকসভা ভোটের পিছিয়ে পড়া মার্জিন ছাপিয়ে এই পঞ্চায়েত থেকে লিড দিতে পারব।
উল্লেখ্য, গত লোকসভা নির্বাচনে রানাঘাট কেন্দ্রটি হাতছাড়া হয় তৃণমূলের। ওইসময় বিজেপির জগন্নাথ সরকারের কাছে প্রায় ৪২হাজার ভোটে পরাজিত হন তৃণমূল প্রার্থী রুপালি বিশ্বাস। এরপরই হারের কারণ জানতে তৎপর হয় শাসকদল। পরবর্তীতে জেলার উত্তর ও দক্ষিণ সংগঠনকে পুনরায় জুড়ে দেয় দল। পাশাপাশি দলের জেলা সংগঠনের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় মহুয়ার হাতে। সেইমতো গতবছর ৩ ডিসেম্বর থেকে রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে অধীনে থাকা সাতটি বিধানসভা এলাকার প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্মীদের নিয়ে বুধবার একের পর এক বৈঠক করেন মহুয়া (Mahua Mitra)। দলের একাংশের নেতারা বলেন, মহুয়ার সাংগঠনিক স্ট্র্যাটেজি জেলার দক্ষিণ অংশের কর্মীদের কাছে সম্পূর্ণ নতুন। কারণ এতদিন ব্লক বা গ্রামের নেতাদের দলে প্রাধান্য ছিল। কিন্তু বর্তমান জেলা সভাপতি সেই সকল নেতাদের তুলনায় দলীয় কর্মীদের বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তিনি দলের তৃণমূল স্তরে পৌঁছে সমস্যা বোঝার চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি তাঁর সাংগঠনিক, নির্বাচনী রণকৌশল সবটাই নির্ভরশীল পাটিগণিতের হিসেব-নিকেশে।