প্রার্থী পদ নিয়ে বিজেপিতে গোষ্ঠীকোন্দলের আশঙ্কা
বিধানসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনও ঘোষণা হয়নি। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলি ভোটের প্রচার শুরু করে দিয়েছে। পুরুলিয়ার(Purulia) বিভিন্ন বিধানসভায় প্রার্থী হতে বিজেপি (BJP) নেতাদের ইঁদুর দৌঁড় শুরু হয়েছে। জেলা থেকে ব্লক, এমনকী পঞ্চায়েত স্তরের নেতারাও বিধায়ক হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। বিজেপি সূত্রে খবর, রঘুনাথপুর(Raghunathpur) মহকুমার দুই বিধানসভায় প্রার্থী হতে এখনও পর্যন্ত ১২৩টি আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে কাশীপুরে ৭২ জন ও পাড়ায় ৫১ জন কলকাতার রাজ্য অফিসে আবেদন করেছেন। সুশৃঙ্খল দল বলে নিজেদের জাহির করেন বিজেপি নেতারা। সেখানে দুই আসনে এতজনের আবেদন বিপাকে ফেলেছে বিজেপিকে। এতে গোষ্ঠী কোন্দল চরমে ওঠার আশঙ্কা করছেন অনেকেই। যদিও জেলা বিজেপির নেতারা কোন্দলের কথা উড়িয়ে দিয়েছেন।
২০১৬ সালের নির্বাচনে পাড়া ও কাশীপুর বিধানসভায় জয়ী হয় তৃণমূল(TMC)। কিন্তু, মোদি ম্যাজিকে ভর করে গত লোকসভা নির্বাচনে দুই বিধানসভাতেই লিড পায় বিজেপি। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে এখানে জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী বিজেপি। তাই এই দুই আসনে প্রার্থী হওয়ার জন্য দৌড় ঝাঁপ শুরু করেছেন নেতারা।
কাশীপুরে প্রার্থী হতে চেয়ে জেলা বিজেপির তাবড় তাবড় পদাধিকারীরা আবেদন করেছেন। এছাড়াও আইনজীবী, ব্যবসায়ী, ব্লক ও পঞ্চায়েত স্তরের নেতারাও রয়েছেন। একই অবস্থা পাড়া বিধানসভার ক্ষেত্রেও। গতবার এই কেন্দ্র তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত ছিল। তা সত্ত্বেও এই কেন্দ্রে প্রার্থী হতে ৫০ জনেরও বেশি আবেদন জমা দিয়েছেন। পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যরা যেমন আবেদন করেছেন, তেমনই জেলা কমিটির কয়েকজন সদস্য সহ ব্যবসায়ী, শিক্ষকও রয়েছেন।
বর্তমানে প্রার্থী হওয়ার জন্য নেতারা নিজেদের মতো করে ঘুঁটি সাজাতে শুরু করেছেন। দলের শীর্ষ নেতাদের ধরছেন। সমর্থকদের দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়, পোস্টার, ব্যানারে নিজেদের নামে বিভিন্ন রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের তাঁরা প্রচার চালাচ্ছেন। ফলে, একে অন্যকে ছাপিয়ে যাওয়ার লড়াই শুরু হয়েছে। প্রার্থী ঘোষণার পর দলের অন্দরের এই লড়াই বিজেপিকে বিপাকে ফিলবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। টিকিট না পেলে অনেকেই নির্দল হয়ে লড়াইয়ের চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছেন। এতে সিঁদুরে মেঘ দেখছে বিজেপি। ঠিক ভাবে সবাইকে ‘ম্যানেজ’ করতে না পারলে বিপাকে যে পড়তে হবে তা বুঝতে পারছেন জেলা বিজেপির নেতারা। তবে তাঁরা অবশ্য প্রকাশ্যে সেকথা স্বীকার করতে না নারাজ।
জেলা বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, দল সংগঠিত ও বড় হচ্ছে। তাই সবাই এগিয়ে আসছেন। বিধায়ক হওয়ার স্বপ্ন তো থাকতেই পারে। তবে প্রার্থী কে হবেন, সেটা দলই বিবেচনা করবে।
বিজেপির জেলা সম্পাদক রাজেশ চিন্না বলেন, এক সময় পুরুলিয়ার বিধানসভাগুলিতে বিজেপির প্রার্থী খুঁজে পেতে আমাদের হিমশিম খেতে হতো। এখন সেখানে প্রতিটি বিধানসভাতেই বিভিন্ন পেশার মানুষ প্রার্থী হতে চেয়ে আবেদন করছেন। এতেই বোঝা যাচ্ছে বিজেপির শক্তি ঠিক কতটা বেড়েছে। গোষ্ঠীর কোনও ব্যাপার নেই। দল যাঁকে টিকিট দেবে, বাকিরা তাঁকেই মেনে নেবে।
তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ কর্মাধ্যক্ষ সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, এতজনের আবেদন দেখেই বোঝা যাচ্ছে বিজেপি দলে কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। দলে যখন একাধিক গোষ্ঠী থাকে তখনই এমন ছবি দেখা যায়। তবে ওদের নিয়ে তৃণমূল ভাবে না। তৃণমূল লড়াই করে উন্নয়ন নিয়ে। এবার এই দুই আসনে জয়ী হবে তৃণমূলই।