আদি ও নব্য বিজেপির মধ্যে কোন্দল চরমে
নব্য বিজেপির(New BJP) দাপটে মহিষাদলে(Mahisadal) কোণঠাসা পুরনো বিজেপি(Old BJP) কর্মীরা সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে ‘আমরা আদি বিজেপি’র ব্যানারে দেওয়াল লিখন শুরু করল। ভোটের মুখে মিটিং মিছিলের আয়োজন থেকে ব্যানার, ফ্লেক্স সাঁটানো, সবকিছুই নব্য বিজেপির নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছে বলে পুরনো কর্মীদের অভিযোগ। তাই বাধ্য হয়ে প্রার্থীর নামের জায়গা ফাঁকা রেখে পুরনো বিজেপি কর্মীরাও দলের প্রতীক পদ্মফুলের ছবি এঁকে দেওয়াল লিখনে নেমেছেন। তবে, নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে এক্ষেত্রে সৌজন্যে ‘আমরা আদি বিজেপি’ বলে লিখে দিচ্ছেন। মহিষাদল বিধানসভার বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় আদি ও নব্য বিজেপি-র মধ্যে সংঘাত তীব্র হচ্ছে। ভোটের মুখে গেরুয়া শিবিরে কার্যত গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি।
রূপনারায়ণ নদের ধারে বেতুকুণ্ডু গ্রাম পঞ্চায়েতের তেঁতুলবেড়িয়া গ্রামে একটি হনুমান মন্দির রয়েছে। এই এলাকার বিভিন্ন জায়গায় বিজেপির সমর্থনে দেওয়াল লিখন হয়েছে। সবক’টি জায়গায় ‘আমরা আদি বিজেপি’ বলে উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে। ২০১৮সালে পঞ্চায়েত ভোটে এই বুথ থেকে জয়ী হন বিজেপির তপনকুমার মণ্ডল। পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েই তিনি প্রার্থী হওয়ায় এলাকায় আদি-নব্যের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। তখন থেকেই আড়াআড়ি বিভাজন শুরু। তারপর দলবদলুদের ভিড় বেড়েছে বিজেপিতে। সাংগঠনিক স্তরে পুরনোদের ছেঁটে ফেলে নব্যদের কাঁধে দায়িত্ব তুলে দেওয়া হচ্ছে। এই সব ঘটনায় হতাশ বিজেপির আদি কর্মীরা।
তেঁতুলবেড়িয়া গ্রামের সুকুমার দাস, বিপ্লব দাস, উদয় দোলই পুরনো বিজেপি কর্মী বলে পরিচিত। কিন্তু, নব্যদের দাপটে তাঁদের সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সুকুমারবাবু পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী হয়েছিলেন। মণ্ডল কমিটির পদে ছিলেন। কিন্তু, নব্যদের দাপাদাপিতে তাঁর মতো পুরনোদের ছেঁটে ফেলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রূপনারায়ণ নদের ধারে নিমতলা মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, আশপাশ দোকানে আদি বিজেপির কর্মীরা দেওয়াল ভরিয়ে দিয়েছেন। নদীবাঁধের ধারে ওই মোড়েই বিজেপির মহিষাদল-৩ মণ্ডল কমিটির সহ সভাপতি মধুসূদন খাঁড়ার বাড়ি। গত পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপির প্রার্থী হিসেবে সুকুমার দাসের সমর্থনে দেওয়াল লিখন এখনও জ্বলজ্বল করছে মধুসূদনবাবুর বাড়ির দেওয়ালে। কিন্তু, সুকুমারবাবুর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কটা আর আগের মতো নেই। মধুসূদনবাবু নব্যদের ভিড়ে মিশে গিয়েছেন। নব্যদের নিয়েই এখন নাচানাচি চলছে। তাতে আদিরা যোগ্য সম্মান পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ।
স্থানীয় বিজেপি কর্মী পেশায় মৎস্যজীবী দীনেশচন্দ্র দলুই বলেন, আমরা এই এলাকার পুরনো দিনের বিজেপি কর্মী হিসেবেই পরিচিত। আমার ভাই উদয় এর আগে পঞ্চায়েতে ভোটে প্রার্থী হয়েছিল। বুথ কমিটির পদেও ছিল। কিন্তু, নব্য বিজেপির দাপটে ভাই কোণঠাসা। শুধু আমার ভাই নয়, অধিকাংশ পুরনো দিনের কর্মী এখন হালে পানি পাচ্ছে না। তাই আদি বিজেপি কর্মী বলে দেওয়াল লিখনে উল্লেখ করা হচ্ছে। নব্যদের হাতে দলকে তুলে দেওয়া হয়েছে।
এলাকার আদি বিজেপি নেতা সুকুমার দাস বলেন, আমরা ভোটের কাজে শামিল হতে চাই। কিন্তু, নব্যরা একতরফা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। তাই আমরা এভাবেই দেওয়াল লিখছি। বিজেপির স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য তপনকুমার মণ্ডল বলেন, এখানে দলের মধ্যে একটা রেষারেষি আছে। একপক্ষ খুবই মারকুটে। পঞ্চায়েত ভোটে আমার প্রার্থী হওয়া নিয়ে তারাই তীব্র আপত্তি তুলেছিল। মণ্ডল কমিটির সহ সভাপতি মধুসূদনবাবু বলেন, কিছু লোক নিজেদের আদি কর্মী পরিচয় দিয়ে দেওয়াল লিখছে। কিন্তু এতে দলে কোনও প্রভাব পড়বে না।