রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

জাকিরকে খুন করাই উদ্দেশ্য ছিল, জেরায় কবুল ধৃতদের

February 27, 2021 | 2 min read

বিস্ফোরণ ঘটিয়ে রাজ্যের শ্রমদপ্তরের প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনকে (Jakir Hossain) খুন করাই উদ্দেশ্য ছিল দুষ্কৃতীদের। শুক্রবার বিস্ফোরণকাণ্ডে জড়িত দু’জনকে গ্রেপ্তার করে এমনই তথ্য জানতে পেরেছে সিআইডি। তদন্তকারীরা ধৃতদের ১২ দিনের হেফাজতে পেয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা, ষড়যন্ত্র এবং বিস্ফোরক আইনে মামলা করা হয়েছে। তদন্তকারীরা জানিয়েছে, আবু সামাদ নামে অভিযুক্তকে সূতি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সইদুল ইসলাম নামে আরেক দুষ্কৃতী ঝাড়খণ্ড থেকে গ্রেপ্তার হয়েছে। তাদের দু’জনেরই বাড়ি সূতিতে। সইদুল অবশ্য বেশ কয়েক বছর ধরেই কখনও ঝাড়খণ্ড, আবার কখনও ওড়িশায় গিয়ে থাকত। মাঝেমধ্যে সে সূতিতে আসত। বিস্ফোরণ ঘটানোর পর সে ঝাড়খণ্ডে চলে গিয়েছিল। মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন ধরে তাকে সেই রাজ্য থেকে সিআইডি গ্রেপ্তার করেছে।

গোয়েন্দা সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, বিস্ফোরক তৈরি করেছিল সইদুল। তাকে বিভিন্ন সামগ্রী জোগাড় করে সহযোগিতা করেছিল সামাদ। সইদুল আইইডি তৈরিতে অত্যন্ত দক্ষ। দীর্ঘদিন ধরেই বিস্ফোরক তৈরিতে পটু হওয়ায় এই কাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড বিস্ফোরণের ভার তার উপরই দিয়েছিল। তদন্তকারী অফিসাররা জানতে পেরেছেন, ওই দিন ঘটনাস্থলে ছিল না সইদুল। সে অন্যএকজনকে এই বিস্ফোরক হস্তান্তর করে যায়। অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সে অপারেশন করেছে। মন্ত্রী প্ল্যাটফর্মে ওঠার পর বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। কিন্তু, জাকিরের এক অনুগামী বিস্ফোরণের মুহূর্তে তাকে ঠেলে দেওয়ায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তদন্তকারীরা আরও কয়েকজনের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে। তাঁরা নিশ্চিত,এরকম পরিকল্পনামাফিক বিস্ফোরণ দু’জনের পক্ষে ঘটানো সম্ভব নয়। ধৃত দু’জনকে জেরা করেই মাস্টারমাইন্ডের কাছে পৌঁছতে চাইছে তদন্তকারীরা। বিস্ফোরণের ঘটনায় পাচারকারীদের হাত রয়েছে বলে দু’জনকে প্রাথমিকভাবে জেরা করে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছে। এক পাচারকারীর উপর কয়েকদিন ধরেই নজরদারি শুরু হয়েছে।

প্রসঙ্গত, চলতি মাসের ১৭ তারিখ কলকাতা যাওয়ার জন্য নিমতিতা স্টেশনে ট্রেন ধরতে এসেছিলেন মন্ত্রী জাকির হোসেন। প্ল্যাটফর্মে ওঠার কিছুক্ষণ পরেই ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। তাতে মন্ত্রী সহ ২৩ জন জখম হয়েছিলেন। মন্ত্রীর কলকাতায় এখনও চিকিৎসা চলছে। ওই বিস্ফোরণের পর সিআইডি, এসটিএফ এবং হোমিসাইড শাখা ঘটনার তদন্তে নামে। দুষ্কৃতীদের সন্ধান পেতে বিভিন্ন এলাকায় টাওয়ার ডাম্প করা হয়। পাশাপাশি এলাকার বোমারুদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়েছিল। কারণ, তাঁরা তদন্তে নেমে জানতে পেরেছিলেন, বিস্ফোরকে যে বারুদ ব্যবহার করা হয়েছিল তা স্থানীয় এলাকাতেই পাওয়া যায়। এলাকার দুষ্কৃতীদের জেরা করার সময়ই উঠে আসে সামাদ এবং সইদুলের নাম।
সামাদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাড়ি থেকে ডেকে আনা হয়। প্রথমদিকে সে ঘটনার কথা অস্বীকার করে। কিন্তু, দীর্ঘ জেরায় সে বিস্ফোরণ কাণ্ডে যুক্ত থাকার কথা স্বীকার করে বলে তদন্তকারীদের দাবি। সে গাড়ি চালকের কাজ করে। এছাড়া আম ও লিচু বাগান লিজ নেয়। টাকার লোভেই সে এমন কাজ করেছিল। সইদুল ভিন রাজ্যে রাজমিস্ত্রির কাজ করত। তবে বিভিন্ন ধরনের বোমা তৈরি করে বিক্রি করা ছিল তার অন্যতম পেশা। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, নিমতিতায় বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য তাকে ঝাড়খণ্ড থেকে এই চক্রের মাস্টারমাইন্ড ডেকে এনেছিল। এই কাজের জন্য তাকে মোটা অঙ্কের টাকা দেওয়া হয়েছে। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ধৃতদের জেরা শুরু হয়েছে। তবে তারা বিভিন্নভাবে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। অবশ্য এই দু’জন বিস্ফোরণকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ মেনে নিয়েছে। 

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Jakir Hossain, #Nimtita railway station

আরো দেখুন