কৃষকদের সরকারি তালিকা থেকে আলু কিনতে হবে হিমঘর মালিকদের
নথি যাচাই করে কৃষকদের তালিকা তৈরি করবে প্রশাসন। ওই তালিকা অনুযায়ী হিমঘরে সরকার নির্ধারিত দামে আলু কেনা হবে। সরকারি উদ্যোগে এবার ৬ টাকা কেজি দরে ১০ লক্ষ টন আলু চাষিদের কাছ থেকে কেনা হবে বলে ইতিমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে। এর সুবিধা যাতে ফড়ে বা ব্যবসায়ীরা না নিতে পারেন, তার জন্য সতকর্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। একজন চাষি সর্বোচ্চ ২৫ কুইন্টাল আলু সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিক্রি করতে পারবেন। নবান্ন থেকে সরকারি উদ্যোগে আলু (Potatoes) কেনার ঘোষণা হওয়ার পর গত ২৫ ফেব্রুয়ারি কৃষি বিপণন দপ্তর এই সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। সরকারি উদ্যোগে আলু কিনে কীভাবে সংরক্ষণ ও বিক্রি করা হবে, তা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে ওই বিজ্ঞপ্তিতে। উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের মোট ১১টি জেলায় পয়লা মার্চ থেকে আলু কেনা শুরু হবে। দক্ষিণবঙ্গে ১৭ মার্চ ও উত্তরবঙ্গে ২৪ মার্চ পর্যন্ত আলু কেনার কথা বলা হয়েছে সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে। তবে প্রয়োজনে এই সময়সীমা আরও কিছুদিন বাড়ানো যেতে পারে।
আবহাওয়া অনুকূল থাকার জন্য এবার রাজ্যে আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। উৎপাদন ১ কোটি ২৫ লক্ষ টন হতে পারে বলে কৃষি বিপণন দপ্তর মনে করছে। গত বছর খারাপ আবহাওয়ার জন্য আলুর উৎপাদন মার খেয়েছিল। অধিক উৎপাদনের জেরে চাষিরা কম দাম পেতে পারেন এই আশঙ্কায় নির্ধারিত মূল্যে সরকারি উদ্যোগে আলু কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে নতুন আলু বেশি পরিমাণে মাঠ থেকে উঠতে শুরু করার পর চাষিরা ৫ টাকা কেজি দরের কমে তা বিক্রি করছিলেন। সরকার আলু কেনার ঘোষণা করার পর তা এখন ৬ টাকার আশপাশে এসেছে। হিমঘরে আলু রাখার প্রক্রিয়া পয়লা মার্চ থেকে শুরু হবে। তার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে।
কৃষি বিপণন দপ্তর যে ব্যবস্থা করেছে, তাতে চাষিদের কৃষকবন্ধু (Krishak Bandhu), কিষান ক্রেডিট কার্ড, জমির মালিকানা প্রভৃতির নথি যাচাই করে বিডিও-রা তালিকা তৈরি করবেন। সেই তালিকা সংশ্লিষ্ট হিমঘরে পাঠিয়ে দেবে প্রশাসন। ওই তালিকা দেখে হিমঘর মালিকরা চাষির কাছ থেকে আলু কিনে নেবেন। হিমঘর মালিকরা সমবায় ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে সরকারি নির্ধারিত দামে আলু কিনবেন। ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে সরকার সাহায্য করবে। সরকারি উদ্যোগে আলু কেনার এই উদ্যোগকে সমর্থন করেছে প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি। তবে সংগঠনের সভাপতি লালু মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, চাষিরা মনে করছেন, সরকার নির্ধারিত দাম ৮ টাকা হলে ভালো হতো। কারণ চাষিদের নিজেদের খরচে আলু হিমঘরে নিয়ে যেতে হবে। বাড়ি বা মাঠ থেকে ৫ টাকা দাম পেলেই অনেকেই সরকারের কাছে বিক্রি করতে উৎসাহী হবেন না।
সরকারি উদ্যোগে যে আলু কিনে সংরক্ষণ করা হবে, তা জুন মাসের ৭ তারিখ থেকে বিক্রি করতে বলা হয়েছে। সরকারি উদ্যোগে সংরক্ষিত আলু প্রতি সপ্তাহে ৫ শতাংশ হারে বের করে অক্টোবর মাসের মধ্যে পুরোপুরি বিক্রি করতে বলা হয়েছে। দেরিতে আলু বিক্রি করতে গিয়ে গতবার সরকারের লোকসান হয়েছে। সরকার উদ্যোগে সংগৃহীত আলুর বিক্রয়মূল্য ঠিক করা হয়েছে। ক্রয়মূল্য, ব্যাঙ্কের ১২ শতাংশ সুদ ও হিমঘর মালিকের ১০ শতাংশ লভ্যাংশ ধরে আলুর বন্ডের দাম ঠিক হবে। বাজার দর কমে কোনও লোকসান হলে তা পুষিয়ে দেবে সরকার।