আজ প্রথম দফার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবেন মমতা?
বঙ্গ রাজনীতির ভোটমুখী আবর্তের মধ্যেই আজ, সোমবার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে পারেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে রবিবার সন্ধ্যায় কালীঘাটের বাড়িতে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এবং ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন মমতা। আজ, সোমবার প্রার্থী তালিকা ঘোষণার আগে দলের নির্বাচনী কমিটি কালীঘাটে আর এক প্রস্থ বৈঠকে বসবে। তৃণমূল সূত্রের খবর, আগামী ২৭ মার্চ জঙ্গলমহলের চার জেলা পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং পূর্ব মেদিনীপুরের ৩০টি আসনে ভোট। তারই প্রার্থীর নাম প্রথমে ঘোষিত হবে। তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় বেশ কিছু নতুন মুখের ঠাঁই হচ্ছে বলে ওই সূত্রে জানা গিয়েছে। এরই পাশাপাশি গত নির্বাচনে জোড়াফুলের টিকিট পাওয়া বেশ কয়েকজন প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়তে চলেছেন বলে খবর।
গত লোকসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলের যে সমস্ত অংশে তৃণমূলের রাজনৈতিক ভিত নড়বড়ে হয়েছিল, সোমবার সেই এলাকার বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করতে পারে জোড়াফুল শিবির। লোকসভা নির্বাচনের ২৩ মাস পরে জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষিত অনেকটাই বদলেছে। দলবদলুদের সৌজন্যে পরিবর্তন এসেছে রাজ্য রাজনীতির পরিবেশেও। মূলত আদিবাসী ও মূলবাসী প্রভাবিত দক্ষিণবঙ্গের এই অংশে উন্নয়ন এবং জনস্বার্থবাহী রাজ্য সরকারি পরিষেবাকে হাতিয়ার করেই আসরে অবতীর্ণ হচ্ছে তৃণমূল। তার প্রভাব প্রার্থী তালিকাতেও থাকবে বলে জোড়াফুল শিবির সূত্রে জানা গিয়েছে। এই পর্বে প্রার্থী হিসেবে যেমন চর্চায় রয়েছে জঙ্গলমহলের নেতা ছত্রধর মাহাতর নাম, তেমনই আবার আদিবাসী ও প্রান্তিক মানুষের অনেককেই দেখা যাবে মমতার প্রার্থী তালিকায়। তৃণমূলের ওই সূত্রটি জানিয়েছে, শুধু প্রথম পর্যায়েই নয়, বাকি সাতটি পর্যায়ের প্রার্থী তালিকাতেও থাকবে বিস্তর ‘চমক’। একদা ময়দান কাঁপানো প্রখ্যাত ফুটবলার, ক্রিকেটার, বাংলা চলচ্চিত্র জগতের পরিচিত মুখ, পরিচালক, শিক্ষাবিদ, সাংস্কৃতিক কর্মী এবং প্রাক্তন কয়েকজন আমলাও এবার জোড়াফুল প্রতীকে নির্বাচনে লড়তে চলেছেন বলে জানা যাচ্ছে। কারণ, এবার তৃণমূল সুপ্রিমোর লক্ষ্য একটাই, স্বচ্ছ ভাবমূর্তির লোকজনকে ‘টিকিট’ দেওয়া।
পরিবর্তন নাকি প্রত্যাবর্তন! বঙ্গ মসনদের নির্ণায়ক এই ‘হেভিওয়েট’ নির্বাচনে তৃণমূল (Trinamool) তথা মমতার পাশে দাঁড়াতে চেয়ে সর্বভারতীয় স্তরের বিরোধী শিবির থেকে একের পর এক বার্তা আসছে কালীঘাটে। সেই তালিকায় রয়েছেন এনসিপি প্রধান শারদ পাওয়ার, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। আবার সমর্থন জানিয়েছেন আরজেডি নেতা তথা লালু-পুত্র তেজস্বী যাদবও। কৃষি আইনকে কেন্দ্র করে এখনও উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে দিল্লির সীমানা লাগোয়া রাজ্যগুলি। সেই কৃষি আন্দোলনকে খোলাখুলি সমর্থন জানিয়ে অবস্থানকে স্পষ্ট করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। সূত্রের খবর, কৃষি আন্দোলনের পুরোধাদের কয়েকজন এবারের নির্বাচনে (West Bengal Election 2021) মমতার সমর্থনে বাংলায় প্রচার আসতে আগ্রহী। শুধু জাতীয় স্তরই নয়, এ রাজ্যের বেশ কিছু অরাজনৈতিক প্রভাবশালী সংগঠনও সরাসরি মমতাকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছেন।
তরাই-ডুয়ার্সের অবিসংবাদী আদিবাসী নেতা রাজেশ লাকড়া ওরফে টাইগার এবং বিশিষ্ট সমাজকর্মী সঞ্জয় কুজুরের মতো অনেকে আবার সরাসরি তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। প্রার্থী হিসেবে আলোচিত হচ্ছে এই দু’জনের নামও। ভোটযুদ্ধের এই আবহে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের উপস্থিতিতে চলচ্চিত্র মহলের ডিরেক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া রবিবার বার্ষিক সাধারণ সভায় মমতার সহযোগী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি এদিনই তৃণমূল ভবনে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের (Firhad Hakim) হাত ধরে ডুয়ার্স মিল্লাত-ই-ইসলামিয়া সোসাইটির সভাপতি কাদের আলি ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন যোগ দিয়েছেন জোড়াফুল শিবিরে। ক্যালেন্ডারের পাতার সঙ্গে সঙ্গে উত্তাপ বাড়ছে। অপেক্ষা এখন একটাই, প্রার্থী ঘোষণার।