জনপ্রতি ঋণের বোঝা দ্বিগুণ হয়েছে মোদি জমানায়
প্রতিশ্রুতি ছিল ১৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার। দেশের প্রত্যেকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। সেই খোয়াব দেখিয়েই ড. মনমোহন সিংকে(Dr Manmohan Singh) সরিয়ে কেন্দ্রে তাঁর ক্ষমতায় আসা। আর তারপর বেমালুম উল্টে গেল গোটা স্বপ্নটা। অ্যাকাউন্ট ভরার বদলে প্রত্যেক দেশবাসীর মাথায় এখন প্রায় এক লক্ষ টাকা ঋণের ভার। গত সাত বছরে ধারের বোঝা প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়েছেন নরেন্দ্র মোদি(Narendra Modi)। এমনই তথ্য সামনে এসেছে মোদি সরকারের পেশ করা বাজেট(Budget) নথির ‘ডেট পজিশন অব গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া’ শীর্ষক অংশে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৪-১৫ আর্থিক বর্ষে ভারতবাসীর মাথায় গড় ঋণের( বোঝা ছিল ৪৬ হাজার ৬৯৭ টাকা। তা বিজেপি জমানায় ২০২১ সালে ৮৯ হাজার ১৩২ টাকায় এসে ঠেকেছে। এক বছর পর মার্চ মাসে সেই বোঝা গিয়ে দাঁড়াবে ৯৯ হাজার ৯০৪ টাকায়।
কেন্দ্রের ‘গভর্নমেন্ট ডেট স্ট্যাটাস পেপার ২০১৪’-র তথ্য বলছে, ইউপিএ জমানার শেষে দেশের মোট ঋণ ছিল ৫৮ লক্ষ ৮৩ হাজার ৮৬২ কোটি টাকা। আর গত ফেব্রুয়ারিতে সংসদে পেশ হওয়া বাজেট নথি অনুযায়ী, ২০২১ সালের ৩১ মার্চ ইন্টারনাল ডেট, আদার লায়াবিলিটিজ এবং এক্সটারনাল ডেট মিলিয়ে সেই অঙ্ক গিয়ে দাঁড়াবে ১২১ লক্ষ ২১ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকায়। তার এক বছর পর অর্থাৎ ২০২২ সালের ৩১ মার্চ তা হবে ১৩৫ লক্ষ ৮৬ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা। এই পরিস্থিতিতেই আজ, সোমবার থেকে সংসদে শুরু হচ্ছে বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্ব। যেখানে পাশ হবে বাজেট। আগামী ১ এপ্রিল থেকে তা কার্যকর করবে সরকার। কিন্তু বাজেটের ঘোষণা বাস্তবে রূপায়ণ যে মোটেই সহজ নয়, হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। তাই নতুন হোক বা পুরনো, সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে তিনি মরিয়া।
সেই সঙ্গে একগুচ্ছ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিক্রির সিদ্ধান্ত দ্রুত কার্যকর করার উপর জোর দিচ্ছে মোদি সরকার। যদিও সম্পদ বিক্রির মাধ্যমে ভাঁড়ারে পর্যাপ্ত অর্থ আনা কেন্দ্রের কাছে রীতিমতো একটি চ্যালেঞ্জ। কারণ, ২০২০-২১ আর্থিক বছরে বিলগ্নিকরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ লক্ষ ১০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু আদতে সরকারের ঘরে এসেছে ৪০ হাজার কোটির কাছাকাছি। তাই ২০২১-২২ অর্থবর্ষে লক্ষ্যমাত্রা ১ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানিয়ে দিয়েছেন, সম্পদ বিক্রি এবং বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়িয়েই মেটানো হবে দেশের ঋণের বোঝা।
২০১১ সালের জনগণনাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছিল ‘ন্যাশনাল কমিশন অন পপুলেশন রিপোর্ট’। সেই মোতাবেক ২০১৪ সালে ১২৬ কোটি ছিল দেশের জনসংখ্যা। ২০২১ সালে যা দাঁড়াবে আনুমানিক ১৩৬ কোটিতে। কেন্দ্রের মোট ঋণের পরিমাণকে এই অঙ্ক দিয়ে ভাগ করলেই সামনে আসছে প্রত্যেক ভারতীয়ের মাথাপিছু ধার। অর্থাৎ আজ যে জন্ম নেবে, বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সেই নিষ্পাপ শিশুটির মাথায়ও চাপবে প্রায় ১ লক্ষ টাকার ঋণ। সৌজন্যে মোদি সরকার!