সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি নারী
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি কে? এই নিয়ে প্রচুর বিবাদ, বিতর্ক হতে পারে। কেউ বলবেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কেউ হয়তো বলবেন বঙ্গবন্ধুর নাম। বঙ্গভঙ্গের প্রভাবও পড়তে পারে সেই তর্কে। আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে, আসুন দেখে নিই সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি নারীর তালিকা।
বেগম রোকেয়া
বাঙালির আধুনিক যুগের ইতিহাসে যে মহিয়সী নারীর নাম গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয় তিনি বেগম রোকেয়া (Roquia Sakhawat Hussain)। বাঙালি সমাজ যখন ধর্মীয় প্রতিবন্ধকতা আর সামাজিক কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ছিল, সেই সময় বেগম রোকেয়া বাংলার মুসলিম নারী সমাজে শিক্ষার আলো নিয়ে এসেছিলেন। বাঙালি মুসলমান নারী জাগরণের তিনি ছিলেন অন্যতম একজন পথিকৃৎ।
রানী রাসমণি
সিরিয়ালের সৌজন্যে রাণী রাসমণি (Rani Rashmoni) বা রাণীমা এখন ঘরে ঘরে আলোচিত এক নাম। ছিলেন কলকাতার জানবাজারের বাসিন্দা প্রসিদ্ধ মানবদরদি জমিদার। তিনি দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ির প্রতিষ্ঠাত্রী এবং রামকৃষ্ণ পরমহংসের অন্যতমা পৃষ্ঠপোষক। রাণী রাসমণি তার বিবিধ জনহিতৈষী কাজের জন্য খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
মাতঙ্গিনী হাজরা
মাতঙ্গিনী হাজরা (Matangini Hazra) ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী এক মহান বিপ্লবী নেত্রী। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ২৯ সেপ্টেম্বর তদনীন্তন মেদিনীপুর জেলার তমলুক থানার সামনে ব্রিটিশ ভারতীয় পুলিশের গুলিতে তিনি শহিদ হয়েছিলেন। তিনি ‘গান্ধীবুড়ি’ নামে পরিচিত ছিলেন।
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, (Pritilata Waddedar) যার ডাকনাম রাণী, ছদ্মনাম ফুলতারা, ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নারী মুক্তিযোদ্ধা ও প্রথম বিপ্লবী মহিলা শহিদ। মাষ্টারদা সূর্য সেনের অন্যতম সহযোদ্ধা, প্রীতিলতা ছাত্রাবস্থাতেই বিপ্লবী সংগঠনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সূত্রেই জড়িয়ে পড়েন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে।
কল্পনা দত্ত
চট্টগ্রাম বিদ্রোহের অন্যতম মহান সংগ্রামী কল্পনা দত্ত (Kalpana Datta)। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে প্রীতিলতা ওয়াদ্দারের পাশাপাশি তাঁরও ছিলো সক্রিয় অংশগ্রহণ। বৃটিশ যুগের স্বদেশ চেতনায় জীবনকে ঝুঁকি নেওয়া বিপ্লবী অগ্নিকন্যা কল্পনা দত্ত সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসে একটি চিরস্মরণীয় নাম।
বীণা দাস
বীণা দাস (Bina Das) ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র বিপ্লবের নেত্রী ছিলেন এবং ১৯৩২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এর সমাবর্তনে বাংলার ব্রিটিশ গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনের উপর পিস্তল দিয়ে গুলি চালান। এই হত্যা প্রচেষ্টা চালানোর কারণে ৯ বছর কারাবরণ করেন বীণা দাস। ১৯৪১ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ কলকাতার কংগ্রেসের সম্পাদিকা ছিলেন তিনি।
অসীমা চট্টোপাধ্যায়
অসীমা চট্টোপাধ্যায় (Asima Chatterjee) ছিলেন একজন প্রথিতযশা জৈব রসায়নবিদ ও উদ্ভিদ রসায়নবিদ। তিনি ভিঙ্কা অ্যালকালয়েডের (নয়নতারা থেকে প্রাপ্ত উপক্ষার) গবেষণা করেন এবং ম্যালেরিয়া ও মৃগীরোগের ঔষধ প্রস্তুত করেন।
বাসন্তী দেবী
বাসন্তী দেবী (Basanti Devi) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিকন্যা। তিনি ছিলেন ব্রিটিশ কারাগারে কারারুদ্ধ প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামী নারী।
সরলা দেবী চৌধুরানী
সরলা দেবী চৌধুরানী (Sarala Devi Chaudhurani ) (যিনি সরলা ঘোষাল নামেও পরিচিত) ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধ এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের এক বিশিষ্ট বাঙালি বুদ্ধিজীবী। ইনি ১৯১০ সালে এলাহাবাদে ভারতের প্রথম মহিলা সংগঠন ভারত স্ত্রী মহামণ্ডল প্রতিষ্ঠা করেন।
মহাশ্বেতা দেবী
সাম্প্রতিককালের অন্যতম সেরা কথাসাহিত্যিক ও মানবাধিকার আন্দোলনকর্মী মহাশ্বেতা দেবী (Mahasweta Devi)। তিনি পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তীসগঢ় রাজ্যের আদিবাসী উপজাতিগুলির (বিশেষত লোধা ও শবর উপজাতি) অধিকার ও ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করেছিলেন।