মাস্টারমশাই বিজেপিতে, ক্ষুব্ধ সিঙ্গুরের কৃষকরা
এই সেদিন সিঙ্গুর(Singur) থেকে সিঙ্ঘুতে কৃষকদের কেন্দ্র-বিরোধী যাত্রার নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছিলেন তিনি। সেই তিনিই প্রায় একমাসের ব্যবধানে কীভাবে ‘কৃষকশত্রু’ হয়ে গেলেন! এই বিস্ময়ের ঘোর কাটছে না সিঙ্গুরের কৃষক মহল্লার। তিনি সিঙ্গুরের প্রবীণ বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য(Rabindranath Bhattacharya)। সদ্য সোমবার বিজেপিতে(BJP) যোগ দিয়েছেন। তারপরেই কৃষক মহল্লার সম্ভ্রমের ‘মাস্টারমশাই’কে নিয়ে উঠছে বিস্তর প্রশ্ন। কৃষক মহল্লার গরিষ্ঠ অংশের মানুষ তাঁর এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করতে পারছেন না। একান্ত আলোচনায় তাঁরা বলছেন, কৃষক-বিরোধী দলে না-যাওয়াই উচিত ছিল প্রবীণ মানুষটির। তাৎপর্যপূর্ণভাবে সিঙ্গুর আন্দোলনের অন্যতম নেতা তথা মাস্টার মশাইয়ের ডানহাত হিসাবে পরিচিত মহাদেব দাসও বিভ্রান্ত। উল্লেখ্য, মহাদেববাবু এখনও বিজেপিতে যাননি।
বরাবরই নিজের ইচ্ছেমতো ফোন ধরতে অভ্যস্ত সিঙ্গুরের বিধায়ক। মঙ্গলবারও সেই কারণে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। একদা তৃণমূলের ব্লক সভাপতির দায়িত্বপ্রাপ্ত বিধায়ক-ঘনিষ্ঠ মহাদেব অবশ্য বলেন, আমি কৃষকের পক্ষে। আমি এখনও চাই আন্দোলনকারী কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে। মাস্টার মশাইকে আমি শ্রদ্ধা করেই তাঁর সঙ্গে ছিলাম। তবে আমার একটি নিজস্ব মতামত ছিল এবং থাকবে। তাঁর দাবি, তিনি নিজের অবস্থান খুব দ্রুত সবাইকে জানিয়ে দেবেন।
বিজেপির প্রাক্তন রাজ্যনেতা স্বপন পাল অবশ্য স্বাভাবিকভাবেই নতুন সদস্যের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেন, মাস্টার মশাই শিক্ষিত মানুষ। তাই ভালোই জানেন কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের বিপক্ষে কিছু করেনি। সাধারণ কৃষকরাও ওই সত্য অনুভব করতে পারছেন।
যদিও সিঙ্গুরের কৃষক মহল্লার বড় অংশের মত, দলের প্রতি অভিমান থাকলে প্রবীণ ওই নেতা রাজনীতি থেকে অবসর নিতে পারতেন। কৃষকদের পক্ষে দাঁড়ানোর ঘোষণা করে কৃষক-বিরোধী বিল আনা কেন্দ্রীয় সরকারি দলে না যাওয়াই ভালো ছিল। এতে তাঁর ভাবমূর্তি নষ্ট হবে বলেও দাবি করছেন একদা তাঁর প্রতি সহানুভূতিশীল কৃষক সমাজের একটা বড় অংশ। কৃষক সমাজের এই অনুভূতিকে হাতিয়ার করতে ইতিমধ্যেই মাঠে নেমেছে তৃণমূল।
সিঙ্গুর কৃষিজমি আন্দোলন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দলকে কৃষকবন্ধু পরিচিতি দিয়েছিল। আর এই পরিচয়ের অন্যতম মুখ ছিলেন সিঙ্গুরের একঝাঁক আন্দোলনকারী মানুষ। সিঙ্গুরের এই কৃষকদরদি মানসিকতার জন্যেই কৃষিবিল নিয়ে দেশজোড়া বিক্ষোভের পর্বে জেলার গেরুয়া নেতারা ওই এলাকায় হালে পানি পাচ্ছিলেন না। এমনকী, সদ্য দলত্যাগী প্রবীণ বিধায়ক সিঙ্গুর থেকে ১০০ কৃষকের দল নিয়ে সিঙ্ঘুতে আন্দোলনে যোগ দেওয়ার তোড়জোড় করছিলেন।
সেই কর্মসূচির অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন মহাদেববাবুরা। কিন্তু তৃণমূলের হয়ে বিধানসভায় লড়ার সুযোগ না পেয়ে অত্যন্ত দ্রুততায় মাস্টার মশাইয়ের বিজেপিতে যোগদান তাঁর কট্টর সমর্থক কৃষক মহলকেই বিপাকে ফেলেছে। পরিস্থিতি বিচার করে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বও লাভ-ক্ষতির হিসাব করছে। সিঙ্গুরের এক বিজেপি নেতা বলেন, একটু বলতে পারি, আপাতত হাতে শুধুই মাস্টার মশাই!