কলকাতা বিভাগে ফিরে যান

মমতার পায়ে মারাত্মক চোট, মজ্জায় রক্তক্ষরণ

March 12, 2021 | 2 min read

নন্দীগ্রামের(Nandigram) ঘটনায় বাঁ পায়ের ‘টার্সাল বোন’-এ(Tarsal Bone) মারাত্মক চোট পেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। বুধবার রাতেই তাঁকে পিজি হাসপাতালে আনা হয়েছিল। চটজলদি এক্স-রে করা হয়। সেখানেই এই আঘাত ধরা পড়ে। শুধু তাই নয়, তৃণমূল সুপ্রিমোর বাঁ পায়ের টার্সাল হাড়ের ভিতরের মজ্জাতেও রক্তক্ষরণ হয়েছে। তা বোঝা গিয়েছে বুধবার গভীর রাতে হওয়া এমআরআই রিপোর্টে। এরপরই মমতার বাঁ পায়ে প্লাস্টার করেন চিকিৎসকরা। মুখ্যমন্ত্রীর মেডিক্যাল বোর্ড সূত্রে এই খবর জানা গিয়েছে।


চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গোড়ালি থেকে পায়ের আঙুল শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত ছোট ছোট হাড়গুলিকে বলা হয় ‘টার্সাল বোন’। এইরকম সাতটি ছোট ছোট হাড় বা অস্থিসন্ধি থাকে। আকারে ছোট হলেও পা ও পায়ের পাতা নড়াচড়া করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই অস্থিগুলি। সেখানে প্রচণ্ড জোরে আঘাত লাগার কারণেই উনি ব্যথায় ছটফট করছেন। তাঁকে ১০০০ মিলিগ্রাম ডোজের প্যারাসিটামল দেওয়া সত্ত্বেও যন্ত্রণা কমছে না। বুধবার রাত থেকেই দিতে হচ্ছে ইঞ্জেকশন। বৃহস্পতিবার সামান্য হলেও যন্ত্রণা কমেছে। তবে কোমর, কাঁধে ব্যথা এখনও কিছুটা রয়েছে। এদিনও বেশ খানিকক্ষণ মাথাব্যথার জন্য কষ্ট পান মমতা। 


বৃহস্পতিবার দুপুর ও সন্ধ্যায় দু’দফায় মেডিক্যাল বোর্ড বসে। সন্ধ্যায় তাঁর সিটি স্ক্যান (থোরাক্স) এবং ইউএসজি করা হয়। দু’টি পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে ফের আলোচনায় বসেন বোর্ডের সদস্যরা। এক সদস্য জানিয়েছেন, আজ, শুক্রবার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রীর বাঁ পায়ে নতুন প্লাস্টার লাগানো হবে। কতটা ব্যথা হচ্ছে, তার মূল্যায়নও হবে তখনই। তারপরই আর কতদিন এবং কী কী ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিকিৎসা চলবে সেই সিদ্ধান্ত হতে পারে। কারণ, বাঁ পায়ে যে ধরনের মারাত্মক আঘাত তিনি পেয়েছেন, তাতে কমপক্ষে চার সপ্তাহ বিশ্রাম নেওয়া জরুরি। কিন্তু ভোটের প্রচারের কথা ভেবে কোনওভাবেই ঘরবন্দি থাকতে চাইছেন না মমতা। ইতিমধ্যেই কর্মসূচি নতুন করে সাজাতে শুরু করে দিয়েছেন তিনি। আর সেটাই বেশি দুশ্চিন্তায় ফেলেছে চিকিৎসকদের। তাঁরা জানিয়েছেন, বছরের পর বছর ধরে হাঁটার অভ্যাস, কম ওজন বজায় রেখে চলা, মিতাহারী জীবনযাপন এবং সুগার কম থাকার কারণে মুখ্যমন্ত্রী এখনও পর্যন্ত নিজেকে ‘ফিট’ রাখতে পেরেছেন। অন্য কেউ হলে এত বড় দুর্ঘটনার অভিঘাত সামলে ওঠা কঠিন হতো। তাতে সেরে উঠতে সময় লাগত অনেক বেশি। তবে এই আহত অবস্থাতেও তাঁর কর্মসূচির জন্য প্রস্তুতি পুরোদমে শুরু হয়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিবারই এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় বেশ কয়েক ধরনের হুইল চেয়ার। যেটিতে তিনি সবচেয়ে স্বচ্ছন্দ, সেটিই বাছাই করা হচ্ছে মমতার জন্য। 

শুধু বাংলাই নয়, সারা দেশেই অত্যন্ত জনপ্রিয় তৃণমূলনেত্রীকে যাতে দ্রুত সুস্থ করে তোলা যায়, সেজন্য এদিন সকাল থেকেই সচেষ্ট ছিল ছয় সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড। বোর্ডে রয়েছেন অর্থোপেডিকের প্রধান ডাঃ মুকুল ভট্টাচার্য, হৃদরোগ বিভাগের প্রধান ডাঃ শঙ্কর মণ্ডল, নিউরোসার্জারির প্রধান ডাঃ শুভাশিস ঘোষ, গ্যাস্ট্রোএনটেরোলজির প্রধান ডাঃ গোপালকৃষ্ণ ঢালি, সার্জারির অধ্যাপক ডাঃ দীপ্তেন্দ্রকুমার সরকার এবং নিউরোমেডিসিনের অধ্যাপক ডাঃ বিমানকান্তি রায়। 


এদিন সকাল সাতটাতেই ঘুম থেকে উঠে পড়েন মমতা। তারপর একে একে টিসি, ডিসি, ইএসআর, সুগার, ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন, সোডিয়াম, পটাশিয়াম সহ যাবতীয় রক্তপরীক্ষা হয়। বেলায় রিপোর্ট আসতেই দেখা যায়, মুখ্যমন্ত্রীর রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা কম। দুপুরের মেডিক্যাল বুলেটিনে সংবাদমাধ্যমের সামনে সেই হাইপোন্যাট্রিমিয়ার কথা জানান পিজি’র অধিকর্তা ডাঃ মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়। আর খাওয়া-দাওয়া? খুব সামান্য। শুধুই চা। কারণ, এদিন ছিল শিবরাত্রি। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপবাস।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Mamata Banerjee, #Nandigram, #Leg Injury

আরো দেখুন