মমতার আন্তরিক ব্যবহারে মুগ্ধ উডবার্ন ব্লক
চিকিৎসকরা চাইছিলেন আরও ৪৮ ঘণ্টা যদি তিনি বিশ্রাম নেন। কিন্তু ভোটের মুখে কোনওভাবেই গৃহবন্দি (এখানে উডবার্ন ওয়ার্ড) থাকতে চাইলেন না তৃণমূল (TMC) সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। নন্দীগ্রামের(Nandigram) ঘটনায় বাঁ পায়ের হাড়ে মারাত্মক চোট পাওয়ার পরও প্রতিমুহূর্তে তাঁর মন পড়েছিল ভোটের ময়দানে। শুক্রবারও ছুটি পাওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করেন চিকিৎসকদের কাছে। অবশেষে মেডিক্যাল বোর্ড হাসপাতাল থেকে ছুটি দিল মুখ্যমন্ত্রীকে। গাড়িতে ওঠার সময় দু’দিকেই খোলা যায় এমন বিশেষ ধরনের হুইল চেয়ার এবং প্লাস্টারের উপর পরার জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত কাস্ট শু পরে এদিন সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ কালীঘাটের বাসভবনের উদ্দেশে রওনা দেন মমতা। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁর বাম পায়ের হেমাটোমা বা ফোলা ভাব কমাতে অ্যান্টিবায়োটিক চলবে। ব্যথা কমাতে নিয়ম করে প্যারাসিটামল খেতে হবে। সাতদিন বাদে ফের প্লাস্টার কেটে পায়ের অবস্থা পরীক্ষা করবে বোর্ড।
এদিন সকাল সাড়ে ১১টায় মমতার বাঁ পায়ের প্লাস্টার কেটে পায়ের আঘাতপ্রাপ্ত জায়গা পরীক্ষা করেন বোর্ডের সদস্যরা। দেখা যায়, ফোলা ভাবটা অনেকটা কমেছে। চিকিৎসকদের মুখ্যমন্ত্রীও জানান, আগের থেকে এদিন তাঁর পায়ের অসহ্য যন্ত্রণা অনেকটাই কম রয়েছে। বিভিন্ন রক্তপরীক্ষার রিপোর্ট আসার পর দেখা যায় অন্যান্য রিপোর্ট তো বটেই, কিছুটা উদ্বেগে রাখা সোডিয়ামের মাত্রাও রয়েছে স্বাভাবিক।
সন্ধ্যায় পিজির অধিকর্তা ডাঃ মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর পায়ের অবস্থার সন্তোষজনক উন্নতি হয়েছে। হেমাটোমা কমেছে। আরও ৪৮ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখতে চেয়েছিলাম আমরা। উনি থাকতে চাইলেন না কিছুতেই। তাই ডিসচার্জ দেওয়া হল।
এদিকে প্রচণ্ড পায়ের ব্যথা নিয়ে এই ৪৮ ঘণ্টার হাসপাতাল বাসের মধ্যেও জনে জনে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের খোঁজখবর নিতে ভোলেননি মমতা। সকলকে মুগ্ধ করেছেন আন্তরিক ব্যবহারে। মুখ্যমন্ত্রীকে সুস্থ করতে চেষ্টার কসুর ছিল না চিকিৎসক-কর্মীদেরও। উডবার্ন ওয়ার্ড মূল হাসপাতাল থেকে বেশ খানিকটা দূরে। তাই যে কোনওরকম মেডিক্যাল ইমার্জেন্সি হলে যাতে চটজলদি মমতার চিকিৎসা করা যায়, সেজন্য উডবার্নেরই তিনতলার একটি কেবিনে রাত বুধবার ও বৃহস্পতিবার ছিলেন একাধিক বিভাগীয় প্রধান ও অধ্যাপক। বুধবার রাতে অর্থোপেডিক ও বৃহস্পতিবার কার্ডিওলজি ও নিউরোলজির সিনিয়র চিকিৎসকরা সেখানে সদাসতর্ক হয়ে কাটিয়েছিলেন। শুক্রবার ছুটির আগে উডবার্নে রোগীদের দেখভালে যুক্ত ২০ জন কর্মীর প্রত্যেকের জন্য কেক আনান মমতা। বলেন, তোমাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।
এদিনও সকালেই ঘুম থেকে উঠে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। চা, খবরের কাগজ ও টিভির পর্দায় চোখ বোলানোর পর নার্সিং কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। উডবার্নে প্রতি শিফটে তাঁর ডিউটিতে ছিলেন দু’জন করে নার্স। শয্যায় শুয়ে শুয়ে রোজ কমবেশি তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন, গল্প করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। দুপুরে খাবার নিয়ে এসেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই খাবার খান। তারপর মেডিক্যাল বোর্ডের চিকিৎসকরা এলে তাঁদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হওয়ার প্রত্যেকের সঙ্গে কথা বলেন। অকুণ্ঠ ধন্যবাদ জানান। বোর্ডের এক সদস্য বলেন, এত অমায়িক ও মাটির মানুষ দেখিনি। ছুটির কিছুক্ষণ আগে তাঁকে দেখতে আসেন বিশিষ্ট ফিজিশিয়ান ডাঃ সুকুমার মুখোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গেও কুশল বিনিময় করেন মমতা।