অবৈধ কয়লা কারবারি বিজেপি নেতাকে নোটিস সিআইডির
অবৈধ কয়লা পাচার কাণ্ডে সিবিআইয়ের পর এবার সিআইডির নজর প্রভাবশালীদের উপর। শিল্পাঞ্চলে নামজাদা কয়লা কারবারি তথা বিজেপি নেতা জয়দেব খাঁর ফ্ল্যাটে নোটিস সাঁটালেন তদন্তকারী অফিসাররা। ১৫ মার্চের মধ্যে কলকাতার ভবানী ভবনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর আগেও একাধিকবার তাঁর বাড়িতে হানা দিয়েছে সিআইডি। যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়েছে। যদিও একে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন জয়দেব। অন্যদিকে কয়লা পাচারের তদন্তে নেমে শুক্রবারই প্রথম এক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করল সিআইডি (CID)। এই কারবারে যুক্ত থাকার অভিযোগে উত্তরপ্রদেশের বালিয়ার বাসিন্দাকে নব কাজোড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিআইডির দাবি, কয়লা পাচারের জন্য ব্যবহৃত গাড়িগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করত অভিযুক্ত রণধীর সিং। নির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভোটের মুখে কয়লা পাচারকাণ্ডে সিবিআই ও সিআইডি তদন্ত কোন দিকে যায় সেদিকেই নজর রয়েছে শিল্পাঞ্চলবাসীর।
বাংলার নির্বাচনের ক্ষেত্রে কয়লা পাচারকাণ্ডের তদন্ত ক্রমশ প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে। সিবিআই তদন্তে এই ঘটনায় বিনয় মিশ্রের নাম জড়ানোয় এমনকী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী ও শ্যালিকাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছে বিজেপি (BJP)। এবার সিআইডি তদন্তে কয়লা পাচারকাণ্ডে (coal smuggling) নাম জড়াল বিজেপি নেতা জয়দেব খাঁর। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রানিগঞ্জের বক্তারনগর এলাকার বাসিন্দা জয়দেবের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ কয়লা পাচার করার অভিযোগ রয়েছে। প্রথম লালার সঙ্গী হিসেবেই কাজ করতেন। পরে সম্পর্কের অবনতি হয়। বছরখানেক আগে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের হাত ধরে গেরুয়া শিবিরে যোগ দেন। নিজের অনুগামীদের নিয়ে দাপিয়ে দলের কাজ করছেন এই নব্য বিজেপি নেতা। তাঁর পোস্টারও বিভিন্ন সময়ে ভাইরাল হয়েছে। এমনকী রানিগঞ্জের বিজেপির টিকিট প্রত্যাশীদের মধ্যে তাঁর নাম উঠে এসেছে বলে দলীয় সূত্রে খবর। এহেন উঠতি বিজেপি নেতার বাড়িতে কয়লা পাচার কাণ্ডের তদন্ত করতে একাধিকবার হানা দিয়েছে সিআইডি। এবার দুর্গাপুরের বিধাননগরে অভিজাত এলাকায় থাকা তাঁর ফ্ল্যাটে হানা দেয় সিআইডি। শনিবার দুপুরে স্থানীয় পুলিসকে সঙ্গে নিয়ে সিআইডির অ্যান্টি টেররিস্ট স্কোয়াড এখানে হানা দেয়। ফ্ল্যাটে কেউ না থাকায় স্থানীয় নিরাপত্তারক্ষীকে নোটিস দিয়ে তা ফ্ল্যাটে সাঁটিয়ে দিতে বলা হয়। সেখানে রানিগঞ্জের একটি মামলার উল্লেখ করে ১৫মার্চ বেলা ১১টার মধ্যে ভবানী ভবনে হাজির হতে বলা হয়েছে।
জয়দেব বলেন, চিরদিন আমি মানুষের পাশে ছিলাম। এসব যা হচ্ছে, সবই রাজনৈতিক অভিসন্ধি।
কয়লা পাচার কাণ্ডে প্রথম গ্রেপ্তার করল সিআইডি। শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ অণ্ডাল থানার নব কাজোড়া এলাকায় সিআইডির একটি বিশাল টিম হাজির হয়। সেখানেই ইসিএলের একটি কোয়ার্টারকে নিজের ডেরায় পরিণত করেছিল কয়লা কারবারি রণধীর। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, চারদিকে রাস্তা রয়েছে। পালানোর সুবিধা যুক্ত একটি নিরাপদ ফ্ল্যাটেই থাকত সে। চারদিকে সিসি ক্যামেরার নজরদারি ছিল। বিভিন্ন জায়গায় ইনফর্মারও ছিল। সিআইডি চারিদিকে ঘিরে অভিযানে নামে। তদন্তকারীদের চোখে ধুলো দিতে বাইরে থেকে বাড়ি তালাবন্ধ ছিল। সিআইডির টিম প্রাচীর টপকে বাড়িতে ঢুকে দেখে, পিছনের দরজা দিয়ে অভিযুক্ত পালানোর চেষ্টা করছে। তখনই তাকে হাতেনাতে ধরা হয়। সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, অণ্ডাল, কাজোড়া, রানিগঞ্জ সহ বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অবৈধ কয়লা কারবারের ট্রান্সপোর্ট দেখভাল করত সে। এদিন অভিযুক্তকে দুর্গাপুর আদালতে তোলা হলে ১১দিন পুলিসি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।